প্রায় তিন দশকের বিতর্কের অবসান হবে কি?
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের রায় আজ
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০২ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ বুধবার আপডেট: ০১:৪১ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ বুধবার
ভারতের উত্তর প্রদেশের বাবরি মসজিদ ধ্বংসের রায় ঘোষণা হবে আজ। প্রবীন বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলিমনোহর জোশী, উমা ভারতী, কল্যাণ সিংয়ের মতো নেতারা মসজিদ ভাঙার ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও উস্কানিতে সম্পৃক্ত ছিলেন কী না, বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সেই রায় শোনাতে চলেছে লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত।
দিনটি ছিল ২৮ বছর আগে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর হিন্দু করসেবকরা অযোধ্যার ৫০০ বছরের পুরনো মসজিদটি ভেঙে গুড়িয়ে দেন।
আাদলতের নির্দেশনা ছিল রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্তদের কোর্টরুমে হাজির থাকতে হবে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর ক্রান্তিকালে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে ৯২ বছর বয়সী আডবাণী এবং ৮৬ বছর বয়সী যোশী সশরীরে আদালতে উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই পেয়েছেন। এদিকে উমা ভারতী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছেন। আর কল্যাণ সিং করোনাকে প্রায় জয় করার পথে রয়েছেন, তাই আদালতে আসেননি তিনিও।
মামলার মোট ৪৯ জন অভিযুক্তের মধ্যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অশোক সিঙ্ঘল, শিবসেনার বাল ঠাকরে, অযোধ্যার পরমহংস রামচন্দ্র দাসের মতো ১৭ জন ইতিমধ্যে প্রয়াত। বাকি ৩২ জনের মধ্যে ১৮ জন আদালতে হাজির আছেন। আজ রায় ঘোষণার পরই অবসর নেবেন বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদব।
ঘটনাক্রম:
ষোড়শ শতকে মোগল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাঁকি ওই মসজিদ তৈরি করেন। যেখানে মসজিদের অবস্থান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস সেখানেই ভগবান রামচন্দ্র জন্মেছিলেন। তার জন্মস্থানের মন্দির ভেঙে তৈরি করা হয়েছিল বাবরি মসজিদ।
আশির দশকের শেষে রাম জন্মভূমি উদ্ধার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন লালকৃষ্ণ আদভানি। সেই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে মসজিদ ধ্বংসের মধ্য দিয়ে।
সেই থেকে দুটি মামলা সমান্তরালভাবে চলছিল। একটি মসজিদ ধ্বংসের ফৌজদারি মামলা, অন্যটি জমির মালিকানা সংক্রান্ত। জমি মালিকানার সেই মামলার রায় সুপ্রিম কোর্ট আগেই দিয়েছেন।
মসজিদ ধ্বংসের এই ঘটনা ঘটেছিল বিজেপি নেতা আডবানীর ধারাবাহিক রথযাত্রা আয়োজনে। এক পর্যায়ে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের হাতে এই ঘটনা রূপ নেয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। তাতে ওই সময়ে দেশটিতে প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হন।
মসজিদ ধ্বংসের সময় আডবানী, যোশী ও ভারতী নিকটবর্তী একটি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তদন্তকারী সংস্থাগুলো বলেছে, তারা তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে উপস্থিত লোকজনকে প্ররোচিত করেছিলেন।
২০১০ এ এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দেন যে স্থানটির নিয়ন্ত্রণ ভাগাভাগি করে দেওয়া উচিত। কোর্টের রায় অনুযায়ী, এক-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ মুসলমানদের, এক-তৃতীয়াংশ হিন্দুদের এবং বাকি অংশ নির্মোহী আখারা গোষ্ঠীর কাছে দেওয়া উচিত।
যেই অংশটি বিতর্কের কেন্দ্র অর্থাৎ যেখানে মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল, তার নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয় হিন্দুদের কাছে। একজন মুসলমান আইনজীবী বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
২০১০ সালের রায়ের বিরুদ্ধে হিন্দু ও মুসলিম দুই পক্ষই আপিল করায় হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায় বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ আদালত ২ বছরের মধ্যে ফৌজদারি মামলার নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতকে।
আর ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সে জায়গাটিতে মন্দির তৈরির পক্ষেই চূড়ান্ত রায় দেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। গত নভেম্বরে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক আদেশে মসজিদের ওই জায়গায় একটি মন্দির নির্মাণ করার অনুমতি দিয়েছে।
ইতিমধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাম মন্দির নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন।