অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশি আম রফতানির শুভ সূচনা, দূতাবাসের অবদান

প্রকাশিত: ০৫:৫৪ এএম, ১৮ জুলাই ২০২০ শনিবার  

বাংলাদেশের আম আজ শোভা পাচ্ছে সুইজারল্যান্ডের বাজারে। যে আমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের সেই বিখ্যাত কবিতার লাইন ‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ’, যে মধুর অনুভূতি সৃষ্টি করত শৈশবে বাংলার প্রতিটি শিশুর মনে, সেই মধুর স্মৃতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের অন্তরে গেঁথে রয়েছে এখনও। যা অনুধাবন করা যায় আজ দেশের আম হাতে পেয়ে তাদের অভিব্যক্তিতে। দীর্ঘ ২০ বছর যাবত সুইজারল্যান্ডে বসবাসকারী একজন প্রবাসী জেনেভাস্থ একটি দোকানে ‘Bangladeshi Mangoes’লেখা মোড়ক দেখে অত্যন্ত আনন্দ চিত্তে তা কিনে নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বললেন ‘যে আমের স্বাদ প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম এ দেশে এসে, বাংলাদেশ মিশন তার স্বাদ নেয়ার সুযোগ করে দেয়ায় আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ’। কিন্তু বিষয়টি তেমন সহজ ছিল না। জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ীমিশন প্রচেষ্টাটি শুরু করে প্রায় বছরখানেক আগে। নিবিড় পর্যালোচনা করা হয় সুইস্ বাজারে বিদ্যমান কৃষিজ পণ্য তথা ফলমূল আমদানির গতিপ্রকৃতি এবং করা হয় সার্বিক বাজার বিশ্লেষণ। দেখা যায় এ দেশের মানুষ যে ফলমূল ও সবজি খায় তার প্রায় অর্ধেকের মত পণ্যই আমদানিকৃত। বিশেষতঃ বিগত বছরগুলোতে আমের চাহিদা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। তবে অধিকাংশই সাধারণত আমদানি করা হয় দক্ষিণ আমেরিকান দেশসমূহ থেকে। বাংলাদেশের আম রফতানির বিষয়টি মাথায় রেখে সুইসবাজারে খুচরা বিনণনকারীদের কাছে পণ্য সরবারহ করে এবং বাংলাদেশ থেকে আমসহ অন্যান্য ফলমূল ও সবজি আমদানি করতে আগ্রহী এমন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাংলাদেশের আগ্রহী রফতানিকারকদের যোগাযোগ স্থাপনে মিশন সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। একইসাথে, সুইস বাজার ব্যবস্থা সংক্রান্ত তথ্য, কৃষিপণ্য তথা আম আমদানিতে আমদানিকারকদের জন্য পালনীয় বিধিবিধান, পণ্যের গুণাগুন, প্যাকেজিং, লেবেলিং ইত্যাদি তথ্য আগ্রহী রফতানিকারকদের সরবরাহ করার পাশাপাশি বাংলাদেশ দূতাবাস অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে থাকে। প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন পরিবারের এ দেশটিতে প্রত্যেকে তাদের আয়ের গড়ে প্রায় শতকরা ১০.৫ ভাগ ব্যয় করে খাবার ও পানীয় বাবদ।এবং সুইস্ সরকারকে এজন্য প্রতি বছর গড়ে ১.৭ বিলিয়ন সুইস্ ফ্রাঙ্ক ব্যয় করতে হয় ফলমূল ও সবজি আমদানিতে।বিপনন ব্যবস্থায় পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশের মত সুইস্ বাজারেও বৃহৎ চেইন শপে’র আধিপত্ত রয়েছে।তবে এদেশের ব্যবসায়ীদের প্রায় শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং ছোট ছোট খুচরা বিপণি বিতানের প্রতি রয়েছে অভিবাসীদের বিশেষ আকর্ষণ। সাধারণত মুক্তবাজার অর্থনীতির বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় সুইজারল্যান্ডের মত উন্নত দেশে ব্যবসায়িক গোপনীয়তার জন্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষত তাদের কর্ণধারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ দুরূহ হলেও প্রাথমিকভাবে দু’জন সুইস্ আমদানিকারকের সঙ্গে মিশন সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়।উভয়ের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করে বাংলাদেশি আমের গুণাগুণ ও সুইস বাজারে তার সম্ভাব্য চাহিদা সংক্রান্ত যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। এদের মধ্যে একজন আমদানিকারক আগ্রহ দেখিয়ে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়তে রাজি হন। সে অনুযায়ী দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আগ্র্রহী ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা নেয় দূতাবাস। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে সুইস্ আগ্রহী আমদানিকারকের কাছে তা সরবরাহ করে । কিন্তু তখন বাংলাদেশের আমের মৌসুম ততদিনে শেষ হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি পরের বছরের জন্য মিশনের অগ্রাধিকারমূলক কর্মতালিকাভূক্ত করা হয়। এ বছর আমের মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই ইউরোপসহ বিশ্বব্যাপী শুরু হয় অতিমারি কোভিড-১৯। বিপর্যস্ত হয় স্বাভাবিক চলাচল ও পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত তার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের পণ্য রফতানিতেও । সেই ক্রান্তিকালেও বাংলাদেশের আমসহ ও অন্যান্য পণ্য রফতানি বেগবান করতে মিশন সক্রিয় থাকে। আগের বছরের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আমের মৌসুম শুরুর বিষয়টি জানিয়ে ফের যোগাযোগ করে সুইস আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটির সাথে। দূতাবাসের আহবানে সাড়া দিয়ে তারা তাদের পছন্দানুযায়ী বাংলাদেশি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ শুরু করে। পুরো প্রক্রিয়ায় উভয় পক্ষের প্রতিটি পদক্ষেপে মিশন সযত্নে সার্বিক সহযোগিতা দেয়। অবশেষে, সকল প্রক্রিয়া শেষে গত ১৪ জুলাই ২০২০ তারিখে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে পৌছে বাংলাদেশের আম ‘আম্রপালি’। বিশ্বের প্রায় সকল দেশের কূটনীতিকদের মিলনস্থান জেনেভায় ’আম্রপালি’ এখন কূটনীতিকপাড়াসহ অনেক সুইসবাসীকে পৌছে দিচ্ছে বাংলাদেশের আমের শুভেচ্ছা বার্তা । আম রফতানির এই সার্বিক প্রক্রিয়ায় নিবিড় দিকনির্দেশনা দেন জেনেভাস্থ বাংলাদেশ মিশনের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান। এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন ‘কোভিড-১৯ এর ক্রান্তিকালে সুইজারল্যান্ডের মত বাজারে বাংলাদেশের আম আমদানির এই শুভ সূচনা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। গতানুগতিক পণ্যের বাইরে বাংলাদেশের রফতানি পণ্য তালিকায় ‘আম্রপালি’ শুধু এক বৈচিত্রের সূচনা নয়, এটি বাংলাদেশি উৎপাদনকারীদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতায়ও অবদান রাখবে’। তিনি পণ্য মান ও গুণাগুণ বজায় রেখে স্থাপিত ব্যবসায়িক সম্পর্কটি পারস্পারিক আস্থা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে ধরে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আহবান জানান।