ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ১৯
খ ম হারূন
প্রকাশিত: ০৪:০৬ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার আপডেট: ০৪:৪৪ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার
শঙ্কিত পদযাত্রা
ধারাবাহিক আত্মকথা
। খ ম হারূন ।
খ্যাতিমান টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব খ ম হারূন। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্পৃক্ত রয়েছেন দেশের টেলিভিশন এবং মঞ্চের সাথে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বর্ণময় সময়ে যে কয়েকজন নির্মাতা-প্রযোজকের নাম ছোট পর্দার কল্যাণে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে খ ম হারূন তাদের একজন। দীর্ঘ বর্ণিল ক্যারিয়ারে অসংখ্য উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন তিনি। এখনো রয়েছেন সমান সক্রিয়। দেশের গণমাধ্যম জগতের বরেণ্য এই ব্যক্তিত্বের আত্মকথা ‘শংকিত পদযাত্রা’ ধারাবাহিকভাবে
প্রকাশিত হচ্ছে অপরাজেয় বাংলা’য়।
[পর্ব-১৯]
সবিনয়ে জানতে চাই। বলছি বাংলাদেশ টেলিভিশনের উল্লেখযোগ্য একটি রাজনৈতিক বিতর্ক বা প্রাক্-নির্বাচনী অনুষ্ঠানের কথা। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে প্রচারিত হয় ‘সবিনয়ে জানতে চাই’ এর চারটি পর্ব। এই অনুষ্ঠানটি শুধু আমার একটি শ্রেষ্ঠ প্রযোজনাই নয়, ‘সবিনয়ে জানতে চাই’ এর মাধ্যমে আনিসুল হক একজন অত্যন্ত সফল এবং বাংলাদেশের টিভি ইতিহাসে সবথেকে জনপ্রিয় উপস্থাপক হিসেবে বেঁচে আছেন।
৩০ মার্চ ১৯৯৬, বিচারপতি হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তার কেবিনেট গঠন করেন। সে সময় তথ্য মন্ত্রণালয়সহ আরো বেশ কটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এপ্রিল মাসে মিরপুরে গ্রামীন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যমের কয়েকজন ব্যাক্তির সাথে একটি মতবিনিময় অনুষ্ঠানে কথা বলেন। সাংবাদিক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আমাকে সেখানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানান। ড. ইউনূস কিভাবে শতভাগ নিরপেক্ষতার সাথে একটি সাধারন নির্বাচন করা যায় সে বিষয়ে তাঁর মতামত তুলে ধরেন। তিনি একটি টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন, যেটা দেখে দর্শকেরা সকল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা নিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তিনি আরো জানান, প্রধান উপদেষ্টাও এরকম একটি অনুষ্ঠানের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের একটি অনুষ্ঠান তৈরি করা নিয়ে আমি সে সময়ের বিটিভি ঢাকা কেন্দ্রের জিএম মুস্তাফিজুর রহমানের সাথে কথা বলি। তিনি আমাকে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেন।
আমার বাসা তখন ধানমন্ডি ৭ নাম্বারে। সরকারি বাসা, নাম ‘কোনার্ক’। ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ছিলো বিটিভিতে। সে অনুষ্ঠানের গ্রন্থনা করেছিলেন মনজুর ভাই। বৈশাখের অনুষ্ঠানটি প্রচারের পর দিনই বিকেলে মনজুর ভাই আমার বাসায় আসেন। তাঁকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিকল্পনার কথা বলি। তিনি বলেন অনুষ্ঠানটি যেহেতু খুব জটিল, তাই অনুষ্ঠান তৈরির আগে একটি নীতিমালা বা রূপরেখা তৈরি করতে হবে তারপর তা তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে, যাতে পরবর্তি সময়ে আর কোনো জটিলতা তৈরি না হয়। অতএব, আমরা নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করার প্রস্তুতি নিতে থাকি।
এরমধ্যে আনিসুল হক নিজেই একদিন আমাকে ফোন করেন। তিনিও একটি প্রাক্-নির্বাচনী অনুষ্ঠান তৈরির কথা ভাবছিলেন। এরপর আমি, আনিসুল হক এবং মনজুর ভাই আমার কোনার্কের বাসায় বসে অনুষ্ঠানটির রূপরেখা এবং তার ভিত্তিতে একটি পরিকল্পনা দাঁড় করিয়ে ফেলি। কাজের গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য আমার বাসা এবং মনজুর ভাইয়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবনের দোতলায় তাঁর অফিস কক্ষ ব্যবহার করি। এরমাঝে কয়েকদিন আনিসুল হকের ধানমন্ডির বাসাতেও আমরা কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছি। তারপর দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে একটি প্রাক্-নির্বাচনী বিশেষ অনুষ্ঠানের রূপরেখা দাঁড় করাই।
অনুষ্ঠানের নাম: সবিনয়ে জানতে চাই।
ব্যপ্তিকাল: ৬০ থেকে ৭০ মিনিট।
রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণের যোগ্যতা: যেসব রাজনৈতিক দল ৫ম জাতীয় সংসদে কমপক্ষে ১০টি আসন পেয়েছে।
অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা: একটি রাজনৈতিক দল থেকে সর্বমোট ৩ জন প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে পারবেন, যাঁদের সবাইকে ৫ম জাতীয় সংসদের সদস্য হতে হবে।
সিদ্ধান্ত হয় অনুষ্ঠানটি দর্শক উপস্থিতিতে ধারণ করা হবে বিটিভির ৩ নম্বর স্টুডিওতে। সেখানে দর্শকরা লিখিত আকারে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে উপস্থাপকের মাধ্যমে প্রশ্ন করতে পারবেন, যা সমন্বয় করার জন্য একজন উপস্থাপনা সহকারী থাকবেন। আর থাকবে প্রশ্নকারীদের একটি প্যানেল, প্রতি অনুষ্ঠানে তিনজন প্রশ্নকারী থাকবেন।
এরপর আমরা আলোচনা করে পাঁচজনের একটি প্রশ্নকারীদের প্যানেল দাড় করাই। এই পাঁচজনের নামই আমরা রাজনৈতিক দলগুলির কাছে পাঠাবো, আলোচনার ভিত্তিতে ওই পাঁচজনের মধ্য থেকে তিনজন রেকর্ডিং এর সময় প্যানেলে উপস্থিত থাকবেন। প্রশ্নকারীদের প্যানেলে ছিলেন সাংবাদিক মাহফুজ আনাম, সাংবাদিক মতিউর রহমান, সাংবাদিক আবেদ খান, অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান এবং অর্থনীতিবিদ ড. হোসাইন জিল্লুর রহমান।
অনুষ্ঠানটির গবেষক হিসেবে থাকবেন: ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং সমন্বয়কারী: আবদুন নূর তুষার। উপস্থাপনা: আনিসুল হক এবং প্রযোজনা: খ ম হারূন। এইভাবে একটা রূপরেখা তৈরি করে আমি ‘সবিনয়ে জানতে চাই’ অনুষ্ঠানের প্রস্তাব তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়ে কাজে নেমে পরি।
প্রশ্নকারী প্যানেলের পাঁচজন সহ অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা টিমে তখন আমরা নয়জন সংযুক্ত হই। প্রশ্নকারী প্যানেল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির জন্য ৫০টি করে প্রশ্ন তৈরি করবেন। প্রতিটি দলের নির্ধারিত প্রশ্নগুলো আমরা প্রিন্ট করে দলগুলির কাছে পাঠিয়ে দেবো। আর দলগুলো তাদের দল পরিচিতি আমাদের কাছে পাঠাবেন। রেকর্ডিং এর সময় প্রথমে দল পরিচিতি পাঠ করবেন আবদুন নূর তুষার, তারপর উপস্থাপক আনিসুল হক অনুষ্ঠান শুরু করবেন পরিচয় পর্বের মধ্য দিয়ে। এরপর প্রশ্ন উত্তর।
সরকার যে এই অনুষ্ঠানে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না তা প্রথমেই নিশ্চিত করা হয়। আমি নিজেই সব রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ শুরু করি। এখানে বলে রাখি অনুষ্ঠানের নীতিমালা অনুসারে মোট চারটি দল এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। আরো কিছু দল অংশগ্রহণের আগ্রহ দেখালে আমরা তাদের কাছে অনুষ্ঠানের নীতিমালা তুলে ধরি। যে চারটি দলের কাছে ‘সবিনয়ে জানতে চাই’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণপত্র পাঠাই সে দলগুলো হলো- জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
সবগুলো দলই আমন্ত্রণে সারা দেয়। আমাদের সাথে যোগাযোগের জন্য প্রত্যেক দলেরই এক বা একাধিক সদস্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। জামায়াতে ইসলামী থেকে অধ্যাপক শরীফ হোসাইন, জাতীয় পার্টি থেকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বিএনপি থেকে নজরুল ইসলাম খান এবং আওয়ামী লীগ থেকে শাহ এএমএস কিবরিয়া এবং ড. বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। তাঁদের সাথে যোগাযোগ রেখে প্রস্তুতি নিতে থাকি।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকারে থেকে যে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে তা অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো মেনে না নেবার ফলে বিএনপির সাথে অন্যান্য দলগুলোর একটা দূরত্ব তৈরি হয়। প্রচণ্ড আন্দোলনের মুখে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাশ করে এবং প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ ১৯৯৬ তারিখে পদত্যাগ করেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বিচারপতি হাবিবুর রহমান শপথগ্রহণ করেন।
নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে ‘সবিনয়ে জানতে চাই’ এর প্রশ্নকারী প্যানেলের তৈরি প্রশ্নগুলো প্রত্যেক দলের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। জামায়েতের কাছে অনেক স্পর্শকাতর প্রশ্ন ছিলো। একাত্তরে তাদের বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিক, গণহত্যা, নারী নির্যাতন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সমর্থন ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পায়। কোনো প্রশ্ন নিয়ে তারা কোনো আপত্তি করেনি তবে তাদের একটি অনুরোধ ছিলো, অধ্যাপক গোলাম আযম অনুষ্ঠানে তাদের দলের নেতৃত্ব দেবেন। আমরা সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করি নীতিমালার ভিত্তিতে, যেহেতু তিনি ৫ম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন না। এ বিষয়ে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথেও যোগাযোগ করেন, কিন্তু সরকার জানিয়ে দেন বিষয়টি তাদের হাতে নেই। অতএব তারা আর এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেননি। নির্ধারিত সময়ে জামায়াত তাদের দল পরিচিতি এবং অংশগ্রহণকারী নেতাদের নাম পাঠান। রেকর্ডিং এ অংশগ্রহণ করেন- সেক্রেটারি জেনারেল মতিউর রহমান নিজামী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আবদুস সোবহান এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শেখ আনসার আলী।
জাতীয় পার্টি ও তাদের প্রশ্ন নিয়ে কোনো আপত্তি করেনি। তবে তাদের দাবী কারাবন্দি পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। আমরা জানাই এটা আমাদের হাতে নেই। অতএব তারা সরকারের কাছে আবেদন জানায়। রেকর্ডিং এর আগের দিন পর্যন্ত তারা আশাবাদী ছিলো এরশাদের মুক্তির ব্যপারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এরশাদ মুক্তি পান না। অতএব জাতীয় পার্টি থেকে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন - ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মওদুদ আহমেদ এবং মহাসচিব আনোয়ার হোসেন মন্জু।
বিএনপি’র নজরুল ইসলাম খান তার দলের সাথে আলোচনা করে প্রথম দিকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ দেখান না। আমরা বার বার কথা বলতে থাকি। বিএনপিকে রাজি করাতে আমাকে প্রধান উপদেষ্টা পর্যন্ত কথা বলতে হয়। সম্ভবত তিনি এবং ড. ইউনূস কথা বলেন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে। পরে তারা রাজি হন। রেকর্ডিং এর জন্য নির্ধারিত তারিখে সন্ধ্যা থেকে আমরা স্টুডিওতে অপেক্ষা করতে থাকি। সাধারণত রাত নয়টার মধ্যে রেকর্ডিং শুরু হয়ে রাত ১১ টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। প্রশ্নকারী প্যানেলসহ উপস্থিত দর্শকেরা সবাই উপস্থিত হয়েছেন। দর্শকদের মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। নিরাপত্তারও কোনো ক্রটি ছিলো না। রাত বারোটা পর্যন্ত বিএনপি নেতাদের কোনো খবর নেই। আশাহত হইনা। দরকার হলে সারারাত জেগে থাকবো। আমরা সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখতে থাকি। অবশেষে তারা আসলেন রাত দেড়টায় বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেন- জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়া এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।
এবার আসি আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে। একদিন সকালে অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নগুলি নিয়ে আমি কিবরিয়া সাহেবের ধানমন্ডির বাসায় যাই। আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের মধ্যে তখন প্রাক্তন সচিব আসাফউদ্দৌলা এবং এইচ টি ইমাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমি নিজের পরিচয় দিয়ে এসএএমএস কিবরিয়া’র কাছে অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নের সেট হস্তান্তর করি। তিনি আমাকে সোফায় বসতে দিয়ে ভিতরে যান তার কমিটির অন্যান্যদের সাথে কথা বলার জন্য। কিছুক্ষন পর ফিরে এসে তিনি তার ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। আমরা নাকি আওয়ামী লীগকে ডুবানোর জন্য এইসব প্রশ্ন রেখেছি। আসাফউদ্দৌলা সাহেবও একই মত পোষন করেন। তবে এইচ টি ইমাম কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।
কিবরিয়া সাহেব তখন যথেষ্ট উচ্চস্বরে আমাকে জানান আওয়ামী লীগ এই ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না, যেখানে রক্ষীবাহিনী নিয়ে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ নিয়ে প্রশ্ন রাখা হয়েছে। আসলেই তখন এই দুটি বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যথেষ্ট অপপ্রচার চালানো হতো। আমি যতই বলি এই অনুষ্ঠানে এই প্রশ্ন দুটির মাধ্যমে ঐসব অপপ্রচার দূর করা সম্ভব হবে, তিনি ততোই আমার উপর ক্ষেপে যান। এই উত্তেজনাকর মূহুর্তে দেখি বাসার দোতলা থেকে নেমে আসছেন তারানা হালিম। সে নেমেই তার খালুকে বোঝানোর চেষ্টা করে। আমার সাথে বিটিভিতে অনেক কাজে যুক্ত ছিলো তারানা, সে আমার সম্পর্কে জানে খুব ভালোভাবেই। কিবরিয়া সাহেবকে সে শান্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়না। আমি তাঁর বাসা থেকে বেড়িয়ে আসি। মনে হয় আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে সরে যাচ্ছে।
এতো বিশাল পরিকল্পনা। আওয়ামী লীগ যদি সত্যিই অংশগ্রহণ না করে তাহলে তো এই অনুষ্ঠান সফলতা পাবেনা। তারানা হালিম আমাকে কিবরিয়া সাহেবের বাসার গেট পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। আমি সরাসরি ‘কোনার্ক-২’ এ আমার বাসায় চলে আসি। তখনো বাংলাদেশ মোবাইল ফোনের যুগে প্রবেশ করেনি। বাসায় এসেই প্রথমে ড. বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর স্যারকে ফোন দেই। ইতিমধ্যে তিনি এই ঘটনা সম্পর্কে শুনেছেন। বললেন, আপনি প্রশ্নগুলির আরেক সেট আমাকে দিন, আমি লোক পাঠিয়ে দিচ্ছি। কিছুক্ষনের মধ্যে তাঁর একজন ছাত্র এসে আমার কাছ হতে আওয়ামী লীগের জন্য তৈরি করা প্রশ্নের সেট নিয়ে যায়। এরপর আমি আনিসুল হককে পুরো ঘটনা জানাই। তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। বলেন, আজ বিকেলে আমার বাসায় চলে আসেন আমি টিমের অন্যদেরকেও আসতে বলছি।
সবিনয়ে জানতে চাই - এর পরবর্তি অংশ আগামী পর্বে।
[চলবে...]
আগের পর্ব পড়ুন
ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ১৮
ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ১৭
ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ১৬
ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ১৫
ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ১৪
ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ১৩