সূর্যমুখী ফুলে হাসছে হাটহাজারী
ছবি ও লেখা: কমল দাশ
প্রকাশিত: ০৭:৩২ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সোমবার আপডেট: ০৭:৪৩ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সোমবার
সূর্যমুখী ফুল
হাটহাজারী পশ্চিম দেওয়ানপুর এলাকায় আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সড়কের পাশে ১ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। এখানকার সূর্যমুখী ফুলের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে এরপর থেকে সেখানে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। শহর থেকে ২০-২৫ কিলোমিটার দূর থেকেও মানুষ মাইক্রোবাস-কার, মোটরসাইকেলে করে ছুটে আসছে।
স্বামী-সন্তান নিয়ে ছবি তুলতে আসা গৃহবধূ নাদিরা বেগম বললেন, ফেসবুকে ফুলের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে ছবি তুলতে এসেছি।
বন্ধুদের সাথে আসা শ্রাবণী ধর বললেন, মাঠজুড়ে এমন সূর্যমুখী ফুল কখনো দেখিনি। স্মৃতিতে ধরে রাখতে এখানে ছবি তুলতে এসেছি আমরা।
"বীজের জন্য খামারে প্রতি বছরই কমবেশি অল্প পরিসরে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়। এবার ১ একর এর বেশি জমিতে চাষ করা হয়েছে। পুরো মাঠজুড়ে ফুলে ভরে যাওয়াতে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন সব শ্রেণির মানুষ ফটো তোলার জন্য ভিড় করছেন। মানুষের উপস্থিতি ভালো লাগছে, বলছিলেন হাটহাজারী আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বজ্ঞৈানকি কর্মকর্তা ড. খলিলুর রহমান ভূঁইয়া
তিনি আরো বলেন, “এলাকায় ওই চাষ তো সবে শুরু হল। আমরা চাই আরও বেশি করে চাষ হোক তবে চাষীদের ব্যাপক চাহিদা মেটানো যাবে।শুধু হাটহাজারী নয় আগামী বছর পুরো চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেওয়া হবে। চাষিরা বাইরে থেকে বহু ক্রেতাও পেয়ে যাবেন।
গবেষণা কেন্দ্রের সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় ক্ষেতে সূর্যমুখীর বীজ বপন করা হয়েছিল। ফসল ঘরে তোলা যাবে এপ্রিলের শেষ বা মে মাসের প্রথম দিকে। চাষীদের চাষ করতে বিশেষ সমস্যা বা তেমন খরচ নেই। একজন চাষি বিঘা প্রতি চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ করে তৈলবীজ পেতে পারেন।
বিশেষ করে এই তেল ক্ষতিকর কোলেস্টেরলমুক্ত। তাই দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বারি-৩ জাতের নতুন সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে ব্যাপক আবাদের মাধ্যমে একদিন দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাবে ।
বলেন, এবার দ্বিতীয়বারের মতো বারি-৩ জাতের আবাদ হচ্ছে। এই জাতে প্রতি একর আবাদে ৫ কেজি বীজ লাগে। সারা দেশে ফরিদপুর, মেহেরপুর ও পাবনায় ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদন কেন্দ্রের তিনটি খামারেই এখন এই বারি-৩ জাতের বীজের চাষ করা হয়েছে। এবার আমাদের এখানে বীজ পাওয়ার পর তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
হাটহাজারী আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা ড. তোফাজ্জল হোসেন রনি বলেন, এর আগে বারি-২ জাতের সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছিল। কিন্তু বারি-২ জাতের সমস্যা হলো, গাছটা বেশি বড় এবং কান্ডগুলো নরম হয়। যার কারণে সামান্য ঝড়-বৃষ্টি ও সামলাতে পারে না গাছগুলো সহজে ভেঙে পড়ে।
এই জাতের আবাদে কৃষকের ক্ষতি বাড়ে। তাই নতুন জাতটা আনা হয়েছে। এই জাতের গাছ শক্তপোক্ত হয় এবং ঝড়- বাতসে নুয়ে পড়ে না। প্রতি শতকে ৪০ কেজির বেশি সূর্যমুখী বীজ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়া, পানি ও মাটি বারি-৩ সূর্যমুখী চাষের জন্য উপযোগী।
রোববার বিকেলে গিয়ে দেখা গেল, জমি জুড়ে ফুটে আছে সূর্যমুখী ফুল। শত শত মানুষ ভিড় জমিয়েছেন দেখতে। ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত সবাই। সূর্যমুখী শুধু দেখতে অপরূপ নয়, গুণেও অনন্য। সূর্যমুখী বীজের তেল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান থাকে, সূর্যমুখীর তেলে তেমন নেই। সূর্যমুখী তেলে আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ওমেগা ৬, আছে। সূর্যমুখীর তেল শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাটযুক্ত। এর তেলে আছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও পানি। হৃদরোগী, ডায়াবেটিসের রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ।