বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, সব পর্যায়ের শিক্ষকরা টিকা নিচ্ছেন, ফিরতে চান শিক্ষার্থীদের মাঝে
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৮:০১ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার আপডেট: ০৮:০৭ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার
দেশজুড়ে শিক্ষকরা টিকা নিচ্ছেন
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়েছে বছর ঘুরতে চললো। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মূখরিত থাকা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেনো ছবি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোন প্রাণচাঞ্চল্য। করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এখনো বন্ধ রয়েছে। তবে করোনার টিকা দেশে আসার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। নতুন দিনের আশায় করোনা নির্মূল করতে মানুষ স্বঃতস্ফূর্ত ভাবে টিকা নিচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিত ভাল হলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হবে। প্রাথমিক থেকে সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষকদের মধ্যে সে ডাকে সাড়া মিলেছে। রাজধানী, জেলা শহর এমনকি উপজেলা পর্যায়েও শিক্ষকদের অনেকেই নিয়ে নিয়েছেন তাদের টিকা। অপরাজেয় বাংলার কথা হয় এমন কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে। তারা জানালেন, যে যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে নিজেদের প্রস্তুত করে রাখার লক্ষ্যেই টিকা নিচ্ছেন তারা।
ক্লাসরুমে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ফিরে যাবার জন্য তারা অপেক্ষা করছেন। আর ক্লাসে ফিরে নিজেকেসহ আশে পাশের সবাইকে নিরাপদে রাখার জন্য তারা টিকা নিয়েছেন, নিচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্ট্যাডিজের সহকারী অধ্যাপক তামান্না হক সিগমা জানালেন তিনি ও তার স্বামী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে করোনার টিকা নিয়েছেন। তামান্না হক বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। তবে সময়ের প্রয়োজনে, নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে অনলাইনে ক্লাস হয়েছে, পরীক্ষাও নেয়া হয়েছে, জানান তিনি।
টিকা নিয়ে ভালো লাগছে জানিয়ে এই ঢাবি শিক্ষক বলেন, টিকা নিয়ে আগের চেয়ে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী লাগছে। কোন শারীরিক সমস্যা হয়নি। নিজেরসহ অন্যদের নিরাপদে রাখতে সবার টিকা নেয়া দরকার।
টিকা নেয়ার পর মানসিক উৎফুল্লতা কাজ করছে এমনটাই জানালেন, টাঙ্গাইলের সফিপুর আবাসিক মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. বাবুল আক্তার। অপরাজেয় বাংলাকে তিনি বলেন, করোনা নির্মূল একা একা করা যাবেনা। সবাই এগিয়ে আসলে একে নির্মূল করা সম্ভব।
টিকা নিলে আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়, এমন মন্তব্য করে এই কলেজ শিক্ষক বলেন, টিকা নেয়ার পর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। এখন অপেক্ষা করছেন কবে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে যেতে পারবেন।
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক জাকিয়া সুলতানা মনে করেন, ছাত্র-ছাত্রীদের কথা মনে করে শিক্ষকদের টিকা নেয়া উচিৎ। ক্লাসে ফিরে গেলে শিক্ষার্থীদের মাঝে থাকতে হবে। একজন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপদে রাখে। তিনি জানান, ৯ ফেব্রুয়ারি চরভদ্রাসন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনি টিকা নিয়েছেন। টিকা নেবার পর ভাল লাগছে। কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। নিজেকে নিরাপদ মনে হচ্ছে।
একই উপজেলার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক সোহানা শারমীন গত ১১ ফেব্রুয়ারি টিকা নিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে টিকা নেওয়ার পর দুই দিন কেটে গেছে এই প্রাথমিক শিক্ষকের। তিনি জানালেন, টিকা নেয়ার দিন সামান্য জ্বর আর হাত ব্যাথা হয়েছিল। তবে পরেরদিনই তা ঠিক হয়ে যায়। সবাইকে টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে শোহানা শারমিন বলেন, এতে করে নিজেকে যেমন নিরাপদে রাখা যাবে, পাশাপশি স্কুলের কোমলমতি শিশুরাও সুরক্ষিত থাকবে ।
স্কুল খুলে গেলে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের মাঝে তাকে যেতে হবে। সে চিন্তাই তার এই টিকা নেওয়ার পিছনে বেশি কাজ করেছে। সুস্থতার কথা চিন্তা করে সকলের টিকা নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন শোহানা শারমিন।