চল্লিশোর্ধ্বরা টিকা নিচ্ছেন, কেন্দ্রে কেন্দ্রে উচ্ছ্বাসের পরিবেশ
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৮:২৭ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ বুধবার আপডেট: ০১:০০ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার
করোনা ভাইরাস নিয়ে শংকা আর হাহাকারের মুখাবয়বগুলোতে এখন স্বস্তি, স্বাচ্ছন্দ্য আর খুশির প্রতিচ্ছবি। জীবন বাঁচাতে মাসের পর মাস যারা ঘরে বন্দি থেকে দুঃসহ সময় কাটিয়েছেন, কিংবা অনেক আতঙ্ক নিয়েেই বাধ্য হয়েছিলেন কাজে যেতে সেই মানুষগুলোই এখন বুকভরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে মহামারী করোনা ভাইরাসকে নির্মূল করার লড়াইয়ে আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে দেশে তথা বিশ্বে এখন সবচেয়ে আলোচনার বিষয় কোভিড-১৯ এর টিকা। আগ্রহের বিষয়ও হয়ে উঠেছে এই টিকা। প্রতিদিনই বাড়ছে টিকা নেওয়া মানুষের সংখ্যা। সকল শঙ্কা কাটিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে খুব সহজেই এখন টিকা নিচ্ছেন অনেক মানুষ।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দেশজুড়ে দেখা গেছে চলিশোর্ধ্ব মধ্যবয়সীদের টিকা নেওয়ার প্রবনতা। চল্লিশের কোটার মানুষদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য সুযোগ দেয়া হয় তার দুই দিন আগে। ব্যাপকহারে রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর আগে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের, সরকারের মন্ত্রীদের, বিশিষ্ট শিক্ষক, সাংবাদিকদের টিকা নিতে দেখা যায়। তবে টিকা নেওয়ার উচ্ছ্বাস- উদ্দীপনা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে এখন। সামাজিক মাধ্যমের ক্যানভাস ভরে উঠছে টিকা নেওয়া উচ্ছ্বসিত ব্যক্তিদের ছবিতে।
তাতে ছিলেন সাংবাদিক, ব্যাংকার, পুলিশ, উন্নয়নকর্মী তথা সরকারি ও বেসরকারি চাকুরিজীবিরা। সামাজিক মাধ্যমেই টিকা নেয়ার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করছেন অনেকে। সকলের প্রতিক্রিয়াতেই একটা সাধারণ বিষয় উঠে আসছে, টিকা নিয়ে ভাল লাগছে। হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রগুলোর পরিবেশও খুব চমৎকার। ডাক্তার ও নার্সরা অনেক আন্তরিক।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় করোনার গণভ্যকসিন দেয়ার কর্মসূচি। টিকা দেয়ার চতুর্থ দিনে অপরাজেয় বাংলার সঙ্গে কথা হয় বিভিন্ন এই যুবশ্রেণির মধ্যবয়সীদের সঙ্গে। এছাড়াও চল্লিশের কোটায় না পড়লেও সম্মুখ সারির কর্মী হিসেবে প্রতিদিনই টিকা নিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
ব্যাংক কর্মকর্তা মোসাদ্দেক মো. ইউসুফ তার মাসহ পরিবারের দুইজন সদস্যকে নিয়ে টিকা নিয়েছেন শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিউটে। ফেসবুকে তার ছবিও পোস্ট করেছেন। পরে অপরাজেয় বাংলাকে মোসাদ্দেক ইউসুফ জানান, টিকা নেয়ার পর তিনি অফিস করেছেন। কোনরকম সমস্যা হচ্ছেনা তার। বাসায় যারা টিকা নিয়েছেন তারাও সুস্থ আছেন।
তিনি বলেন, “মায়ের প্রেশার ছিল। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মাও টিকা নিয়েছেন। তার কোন সমস্যা হয়নি”। ভয়-ভীতি, গুজব উপেক্ষা করে সবার টিকা নেয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন নীপু টিকা নিয়েছেন একদিন আগেই মঙ্গলবার ( ৯ ফেব্রুয়ারি)।চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে টিকা নেন তিনি। অপরাজেয় বাংলাকে জানালেন, তিনি যে হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন তার পরিবেশ খুব গোছানো ছিল। আর অনলাইনে নিববন্ধনসহ যেসব প্রক্রিয়ায় টিকা দেয়া হচ্ছে , এই ব্যবস্থাটি খুবই সুন্দর ও সহজ বলে উল্লেখ করেন এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। টিকা নেবার পর হালকা জ্বর এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, টিকা নেয়ার পর হালকা জ্বর হতেই পারে, তবে এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ মতিঝিল অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার আতিকুল ইসলাম জানালেন, ৮ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) তিনি টিকা নিয়েছেন রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতাল থেকে। ১০ ফেব্রুয়ারি টিকা নিয়েছেন তার ষাটোর্দ্ধ বাবা-মা । টিকা নেয়ার পর তার নিজেরসহ বাবা-মার কোন সমস্যা হয়নি।
একজন ফ্রন্টলাইনার হবার জন্য বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি টিকা নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন এজন্য তিনি গর্বিত, বলেন আতিকুল ইসলাম। সবার উচিৎ হেলাফেলা না করে , টিকা নেয়া, বলেন তিনি।
ব্যবসায়ী কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ টিকা পেতে হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ এতো সহজে আর সুন্দর করে জনসাধারণকে টিকা দিচ্ছে, এই কর্মসূচি প্রশংসার দাবিদার। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টিকা নিয়েছেন। কাজী মোয়াজ্জেম বলেন, “আমি যেখানে টিকা নিয়েছি সেখানকার পরিবেশ খুব ভাল ছিল। ডাক্তার –নার্স থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট যারা ছিলেন তারাও খুব আন্তরিক ছিলেন।
কোন গুজবে কান দিয়ে সবার টিকা নেয়া উচিৎ, বলেন এই ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা।
মুফতি এনায়েতুল্লাহ একজন ইসলামি চিন্তক এবং লেখক। তিনি বার্তা২৪.কম এ ইসলাম পাতার সম্পাদক। ১০ ফেব্রুয়ারি তার টিকা নিয়েছেন রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল থেকে। মুফতি এনায়েতুল্লাহ জানালেন, নিবন্ধনের পর এসএমএস পেতে দেরি হচ্ছিলো এক পর্যায়ে অপেক্ষা না করে নিবন্ধনের কাগজ নিয়ে হাসপাতালে যান এবং টিকা নেন। টিকার সার্বিক পরিবেশ ভাল লেগেছে বলে জানান তিনি।
সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক লামিয়া ইয়াসমিন টিকা নিতে পেরে বেশ উৎফুল্ল। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টিকা নিয়েছেন। বললেন, একটা উৎসব যেমন হয়, টিকাদান কর্মসূচিকে তার তেমন মনে হয়েছে। মানুষ হাসিমুখে টিকা নিতে আসছেন। টিকা দেয়ার পরিবেশ তার খুব ভাল লেগেছে। টিকা নেয়ার পর কোন সমস্যা হয়নি বলেও জানান লামিয়া ইয়াসমিন।
উন্নয়ন কর্মী ও সম্মুখ সারির যোদ্ধা শরিফুল হাসান বলেন, টিকা দেয়ার পরিবেশগুলো অনেক গোছানো। এটার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি। শরিফুল হাসান বলেন, যতদিন যাচ্ছে মানুষ বেশি টিকা নিতে আগ্রহী হচ্ছে। সবার দ্রুত নিবন্ধন করে টিকা নেয়া উচিত, বলেন তিনি।
বেসরকারি টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক আহাম্মেদ সারোয়ার বলেন, টিকাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মানুষ খুব স্বাচ্ছন্দের সঙ্গে টিকা নিচ্ছে। তিনি নিজেও টিকা নিয়েছেন। কোন সমস্যা হচ্ছেনা তার। বরং টিকা নিতে পেরে ভাল লাগছে। বলেন, তিনি যেখানে টিকা নিয়েছেন তার পরিবেশ খুব সুন্দর আর সবার ব্যবহারও অনেক আন্তরিক ছিল।