অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

টিভি শো: ডিজিটাল অর্থসেবায় নগদ’র উদ্ভাবনী উদ্যোগের প্রশংসায় জিপি সিইও

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৬:০১ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার   আপডেট: ০৬:২২ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার

ইয়াসির আজমান ও তানভীর এ মিশুক

ইয়াসির আজমান ও তানভীর এ মিশুক

ডাকবিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে ‘নগদ’ চমৎকার সব উদ্ভাবনী আইডিয়া নিয়ে কাজ করছে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে খুব সহজেই আর্থিক অন্তর্ভূক্তির আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান।

কথাগুলো তিনি বলছিলেন একটি বেসরকারি টেলিভিশন শোতে অংশ নিয়ে। যাতে যৌথভাবে অংশ নেন ‘নগদ’- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক।
 
গত মঙ্গলবার (৩ ফেব্রুয়ারি) প্রচারিত ‘প্রযুক্তি বনাম আর্থিক অন্তর্ভূক্তি’  শিরোনামে ওই অনুষ্ঠানে গ্রামীণ ফোনের সিইও ‘নগদ’-এর অ্যাকাউন্ট খোলার সহজ কার্যকর প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেন। 
 
নগদ’র পক্ষ থেকে এ সম্পর্কিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি ‘নগদ’ দেশের প্রধান মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণ ফোনের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করে।  যার মাধ্যমে গ্রামীণ ফোনের গ্রাহকরা *১৬৭# ডায়াল করলেই ‘নগদ’ এর অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন। 

এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিদিন গ্রামীণ ফোনের প্রায় ৭০ হাজার গ্রাহক ‘নগদ’ এর অ্যাকাউন্ট খুলছেন।

বিষয়টি উল্লেখ করে টেলিভিশন শোতে ইয়াসির আজমান বলেন, গ্রাহকদের আস্থাও বিশ্বাস নষ্ট না করে তাদের সম্মতি নিয়েই যেন ‘নগদ’-এর অ্যাকাউন্ট খোলা যায়, সেই ব্যবস্থা করেছে গ্রামীণফোন।
 
“মানুষের জন্য যদি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস খোলা সহজ করে দেওয়া যায়, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক এগিয়ে যাবে,” বলেন তিনি।

 ‘নগদ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, বাজারে আসার আগে কাজ করতে গিয়ে তারা দেখেছেন, ব্যাংকের দশ পাতার ও এমএফএস-এর দুই পাতার কেওয়াইসি করতে মানুষ ঘাবড়ে যেত, কাজটিও মানুষের জন্য অনেক ঝামেলার ছিল। হাতে ফর্ম পূরণের পর ভেরিফাই করে অ্যাকাউন্ট খুলতে সাতদিন সময় লেগে যেত।  যে কারণে মানুষের আগ্রহটাও কমে যেত। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কাজটি সহজ করে দিয়েছে।

২০১৮ সালের তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, সে বছর মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে প্রতিদিন এক থেকে দুই হাজার নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হতো। আর ২০১৯ সালে ‘নগদ’ যখন ডিজিটাল কেওয়াইসি চালু করল তখন প্রতিদিন ১০ হাজার নতুন অ্যাকউন্ট খোলা শুরু হয়। এখন গ্রামীণফোনের সঙ্গে *১৬৭# চালু হওয়ার পর এখন কেবল ‘নগদ’ প্ল্যাটফর্মেই এখন দিনে ১ লাখ মানুষ নতুন করে অ্যাকাউন্ট খুলছে। যার ৭০ শতাংশ আসছে গ্রামীণ ফোনের মাধ্যমে। 

“দেশের ৫২ শতাংশ মানুষ নিজেদের টাকা নিজেদের বালিশের নীচে রাখে। আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন করে সকলকে আর্থিক অন্তর্ভূক্তির মধ্যে আনতে চাই,” বলেন তানভীর এ মিশুক।

গ্রামীণ ফোনের আগে রবি ও এয়ারটেল এবং তারও আগে টেলিটকের গ্রাহকের জন্য *১৬৭# ডায়াল করে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া চালু করে ‘নগদ’। ফলে দেশের প্রায় ১৪ কোটি ফোন থেকে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অ্যাকাউন্ট খোলা এখন মুহুর্তের ব্যপার।

প্রযুক্তির এই উদ্ভাবনের কারণেই বাণিজ্যিক সেবা শুরু করার মাত্র দুই বছরের ও কম সময়ে ‘নগদ’ এর গ্রাহক সংখ্যা তিন কোটি পেরিয়েছে এবং তারা দ্বিতীয় গ্রাহক সেরা এমএফএস অপারেটরও হয়েছে, জানায় নগদ।

‘নগদ’-এর সঙ্গে সমঝোতা করার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইয়াসির আজমান বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর সেবাদানকারীরা যদি একজন আরেকজনের সাথে সহেযোগিতা করে, তাহলে তা গ্রাহকদের কাছে খুব সহজে পৌঁছানো সম্ভব হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা দুটি পক্ষ উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি তৈরি করতে পেরেছি বলেই একসাথে আসতে পেরেছি। দিন শেষে গ্রাহক যেন উপকৃত হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’

‘অংশীদারিত্বটা সেখানেই। গ্রামীণফোনের গ্রাহকরা জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে যে মোবাইল কানেক্টিভিটি নিয়েছে, তাদের প্রাইভেসি বজায় রেখে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী খুব সহজে তারা যেন ‘নগদ’- এর অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে, এই উদ্যোগটা সে কারণেই,’ বলেন ইয়াসির আজমান।

তিনি বলেন, ‘গ্রাহকের কোনো তথ্য গ্রাহকের ইচ্ছার বাইরে আমরা কাউকে দিয়ে দিচ্ছিনা। যখন গ্রাহক নিজে চাইবেন যে, তিনি ‘নগদ’-এর অ্যাকাউন্ট খুলবেন গ্রামীণ ফোনের মাধ্যমে, তখন তিনি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। আমরা গ্রাহকের সম্মতি ছাড়া কারও সাথে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করছিনা।’

মোবাইল অপারটর ও ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস একসাথে আসা বিষয়ে গ্রামীণফোন সিইও বলেন, মানুষ যদি ফরমাল চ্যানেলে তাদের অর্থনৈতিক লেনদেন করতে পারে, তাহলে লেনদেনের স্বচ্ছতা অনেক সহজ হয়ে যায়।

নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে ইয়াসির আজমান বলেন, ‘দেশে মোবাইল পেনিট্রেশন ৬৫ শতাংশের বেশি হয়নি। আর এই ৬৫ শতাংশের ৫০ শতাংশ হচ্ছে স্মার্টফোন। আমরা সবার কাছে মোবাইল কানেক্টিভিটি এবং এমএফএস সেবা পৌঁছে দিতে চাই। এই কাজটি আমরা অনেকদূর এগিয়েছি, এ বিষয়ে যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবুও এই বিষয়ে অনেক কিছু করা বাকি আছে।’
 
*১৬৭# ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রযুক্তি চালু করার বিষয়ে তানভীর এ মিশুক বলেন, “আমরাই প্রথম দেশে ডিজিটাল কেওয়াইসি আনি। যেখানে কেবল একটি সেলফি এবং এনআইডি-এর কপি দিলেই অ্যাকাউন্ট খুলে যায়। এই প্রযুক্তির ফলে আমরা অনেক পুরস্কার পেয়েছি। এই প্রযুক্তি দেশের বাইরেও বিক্রি করেছি আমরা। দেশের অনেক ব্যাংক ও এমএফএসএই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। দুইটি দেশ আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে। কিন্তু আমরা দেখলাম প্রান্তিক মানুষকেও তবুও সেবার আওতায় আনতে পারছিনা। তখন আমাদের মাথায় মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টি আসে।”

‘নগদ’-এর বিভিন্ন অর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি ফিনটেক ফিফটি ফিফটিতে ‘নগদ’কে বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল এমএফএস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। 

“একটি মানুষের জীবনে যতো আর্থিক যেসব সেবা আছে, সবগুলোকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করছে ‘নগদ’। সেকারণেই ক্যাশ আউটচার্জ হাজারে ২০ টাকা থেকে অর্ধেকে নামিয়ে আনা, পাশাপাশি বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল প্রদান একেবারেই ফ্রি করা হয়েছে। আর এসবই হচ্ছে ‘নগদ’-এর ইনোভেশন।”

তানভীর জানান, কভিডের শুরুর দিকে কাজ হারানো দরিদ্র মানুষদের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ থেকে শুরু করে আরো অনেকগুলো ভাতা বিতরণের কাজে ‘নগদ’ নেতৃত্ব দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল ব্যাংক হচ্ছে ‘নগদ’ এর পরবর্তী পদক্ষেপ। কারণ সারাবিশ্ব এখন ডিজিটাল ব্যাংকের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে নির্দেশনা পেলে সেবা চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।