দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম হিসেবে
এনওয়াইপিডির লে. কমান্ডার হচ্ছেন বাংলাদেশি আমেরিকান শামসুল হক
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২৮ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২১ শুক্রবার আপডেট: ০১:২৯ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২১ শুক্রবার
শামসুল হক, এনওয়াইপিডি
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ- এনওয়াইপিডি'র গোয়েন্দা স্কোয়াডে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন বাংলাদেশি আমেরিকনান শামসুল হক। দক্ষিণ এশিয়া থেকে যাওয়া আমেরিকানদের মধ্যে তিনিই এনওয়াইপিডির এতটা উপরের পদে দায়িত্ব পেতে চলেছেন। এক পদোন্নতি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আগামীকাল ২৯ জানুয়ারি (শুক্রবার) এই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত শামসুল হককে। নিউইয়র্কের কুইন্সে এনওয়াইপিডি'র পুলিশ একাডেমিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট হক ২০০৪ সালে এনওয়াইপিডিতে যোগ দেন। তখন গুটি কয় বাংলাদেশি আমেরিকানই ছিলেন যারা যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ বিভাগে কর্মকর্তার পদ পেয়েছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আপার ইস্ট
অংশে দায়িত্ব পালন করার পর শামসুল হককে সার্জেন্ট পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় ২০১০ সালে। এ সময় তিনি দক্ষিণ ব্রঙ্কসের একটি প্রিসিঙ্কটের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে লেফটেন্যান্ট পদ পান তিনি। সে বছরই তিনি এনওয়াইপিডির ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স ফোর্স ইনভেস্টিগেশন গ্রুপে যোগ দেন। তখন থেকেই এ বিভাগে কর্মরত রয়েছেন শামসুল হক।
এবার তিনি পাচ্ছেন গোয়েন্দা স্কোয়াডের লেফটেন্যান্ট কমান্ডারের পদ। যা কোনো দক্ষিণ এশীয় আমেরিকানের জন্য প্রথম।
"হতে পারি আমিই প্রথম জন। তবে আমি আশা করি যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ বিভাগে কর্মরত আরও অনেক বাংলাদেশি আমেরিকান রয়েছেন তারা এ দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আরও আরও উঁচু পদে আসীন হবেন,"
- লেফটেন্যান্ট শামসুল হক, এনওয়াইপিডি।
মাধ্যমিকে পড়ার সময় ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পারি জমান শামসুল হক। প্রথম দিকে নানা ধরনের অড-জব তাকে করতে হয়। বাস বয়, দোকান কর্মচারী কিংবা ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন তিনি। এসব কাজে কোনো ভবিষ্যত দেখতে না পেয়ে জীবন পাল্টে দেওয়ার প্রত্যয়ে তিনি ফের লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯৯৭ সালে মাধ্যমিক সমমানের একটি ডিপ্লোমা অর্জন করেন। এবং বারুক কলেজে ভর্তি হন। সেখানকার পাঠ শেষ করে লাগর্ডিয়া কলেজ থেকে এএএস সম্পন্ন করেন। এবং পরে বারুক কলেজ থেকে বিবিএ করেন।
এই বারুক কলেজে পাঠের সময় ইউনিভার্সিটি ছাত্র সংসদ এবং কিউনি ট্রাস্টির সভাপতি নির্বাচিত হন শামসুল হক। সে সময় ৩ লাখ কিউনি শিক্ষার্থীর পক্ষে তাদের টিউশন ফি বাড়ার প্রতিবাদ করে ব্যাপক সুনাম কুড়ান তিনি। এরপর উচ্চতর শিক্ষার লক্ষে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি লোক প্রশাসনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০১ সালে নিউইয়র্কে জঘন্যতম টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনাকে শামসুল হক মানবতার বিরুদ্ধে হামলা বলে মনে করেন। তিনি বলেন, আমি একজন গর্বিত মুসলিম ও বাংলাদেশি আমেরিকান। বিশ্ব ১০০ কোটিরও বেশি শান্তিপ্রিয় মুসলমান রয়েছে। গুটিকয় সন্ত্রাসী যারা নিজেকে মুসলমান দাবি করে, তারা কোনোভাবেই মুসলামানদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনা। যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের বিষয়ে মনোভাব পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন শামসুল হক। আর সে কারণেই তিনি নিউইয়র্ক পুলিশে যোগ দেন।
তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে আরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশির যোগ দেওয়া উচিত। সে কারণেই তিনি নিজে ডেকে ডেকে অনেক বাংলাদেশি আমেরিকানকে এনওয়াইপিডি-তে যোগ দিতে বলেন। তাদের অনেককে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন- এনওয়াইপিডি-বাপা। সেই সংগঠনেরও প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এই সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশি আমেরিকানদের এনওয়াইপিডিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে এনওয়াইপিডিতে ৪০০ পুলিশ কর্মকর্তা, গোয়েন্দা ও সার্জেন্ট রয়েছেন, তিন জন লেফটেন্যান্ট পদে রয়েছে, তিন জন ক্যাপ্টেনের পদ পেয়েছেন। এছাড়া ১০০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি আমেরিকান এনওয়াইপিডির নিয়োগে ট্রাফিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।
শামসুল হকের এই নতুন পদোন্নতির খবরে বাপা'র বর্তমান সভাপতি ক্যাপ্টেন কামরান চৌধুরী বলেন, কঠোর পরিশ্রম ও আত্মনিয়োজন যে ফল এনে দেয় এ তারই এক অনন্য উদাহরণ।
পরিবারে শামসুল হক একাই নন, তার ভাই বদরুল হকও এনওয়াইপিডি'র সন্ত্রাস বিরোধী টাস্ক ফোর্সের একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশে সিলেটের গোলাপগঞ্জের ছোট্ট গ্রাম বাঘার ছেলে এই লেফটেন্যান্ট শামসুল হক। তার বাবা আবদুল মুসাব্বির ও মা নুরুন নেসা (উভয়ই মৃত)। ভাইদের মধ্যে দুই জন আবদুল হক ও নজরুল হক দেশে হাইস্কুল শিক্ষক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্ত্রী রুবিনা হক, দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন শামসুল হক। এছাড়া তার সকল ভাইবোনও এখন নিউ ইয়র্কে বসবাসরত।