আজ আমাদের ঈদের দিন
দেশে করোনা ভ্যাকসিন নেয়া প্রথম দম্পতি ডা. মোস্তফা-ডা. ফাতেমা
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০২:৫৫ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার আপডেট: ০৩:২৭ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার
ঈদের দিনের মতই আনন্দ অনুভব করছি আমরা। দেশে করোনার প্রথম থেকেই আমরা ফ্রন্টলাইনে কাজ করেছি। ভ্যাকসিন নিয়ে যখন অনেকেই সংশয়ে তখন চিকিৎসক হিসেবে দৃষ্টান্ত তৈরির তাড়না অনুভব করেছি। তাই প্রথম দিনেই ভ্যাকসিন নিয়েছি। আমরা ভালো আছি। সবাই বিজ্ঞানের উপর ভরসা রাখুন, ভ্যাকসিন নিন।
প্রথম দম্পতি হিসেবে ভ্যাকসিন নেয়ার পর অপরাজেয় বাংলার সাথে আলাপকাালে এভাবেই নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান (কার্ডিওলজি বিভাগ) ও ডা. কানিজ ফাতেমা (সহযোগী অধ্যাপক, স্ত্রীরোগ এবং প্রসূতী বিদ্যা বিভাগ)। দু’জনই কর্মরত আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে ভ্যাকসিন নিয়েছেন এই দম্পতি। পর্যবেক্ষণে থাকার পর অপরাজেয় বাংলাকে উচ্ছসিত কণ্ঠে ডা. এস এম মোস্তফা জামান, যখন চারদিকে ভ্যাকসিন নিয়ে গুজব, অপপ্রচার শুরু হয় তখন আমি স্টেটাস দিয়েছিলাম প্রথম দিনেই আমরা টিকা নিতে চাই। অনেক চিকিৎসকও দোদুল্যমান ছিল, অপেক্ষা করছেন কয়েকদিন পরে নেয়ার।
যাই হোক আমরা মানসিকভাবে শক্তিশালী ছিলাম। চিন্তা ছিল সবার আগে ভ্যাকসিন নিব। ২৬ তারিখ রেজিস্ট্রেশন করে রেখেছিলাম। আজকে সকাল সকাল ভ্যাকসিন নিয়েছি। আর এখন অনুভূতি অনেকটা ঈদের দিনের মতো। কারণ চিকিৎসক হিসেবে যদি আমরা সবার আগে না নেই তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভয় কাজ করবে।
করোনা শুরুর পর থেকেই আমার ভ্যাকেসিনের জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু আসার পর দেখা গেলা মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বলছে, এই ভারতীয় ভ্যাকসিন কাজ করবেনা। আজ সকালেই আমার বিভাগের এক কর্মচারী বলছে ভ্যাকসিন দিলে লিঙ্গ পরিবর্তন হয়ে যায়।
এমন অপপ্রচার দূর করে মানুষকে উৎসাহ দিতেই আমরা ভ্যাকসিন নিয়েছি। মানুষের মধ্যে ভয় থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। আমর মা আমাকে বারবার ফোন দিচ্ছেন। খোঁজ খবর নিচ্ছেন। জানতে চাইছেন আমি ভালো আছি কিনা। কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা।
সবাইকে বলতে চাই, বিজ্ঞারে উপর ভরসা রাখুন। আমাদের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। ভালো আছি দু’জনই। সবাই কোন সংশয় না রেখেই ভ্যাকসিন নিন।
এই চিকিৎসকের সাথে আলাপকালেই পাশ থেকে শুনা যাচ্ছিল তার স্ত্রী ডা. কানিজ ফাতেমার কণ্ঠ। কার সাথে যেন উচ্ছাসিত হয়ে জানাচ্ছেন ভ্যাকসিন নেয়ার অনুভূতি। ডা. এস এম মোস্তফা জামানের কাছে অনুরোধ করতেই সানন্দে নিজের মোবাইল বাড়িয়ে দেন তার স্ত্রী’র কাছে।
এসময় ডা. কানিজ ফাতেমা বলেন, আজ আমাদের কাছে ভীষণ আনন্দের দিন। আমাদের মতো দেশে এত দ্রুত ভ্যাকসিন আসবে তা অপ্রত্যাশিত ছিল। আমাদের সবাইকে বিজ্ঞানসম্মত চিন্তা করা উচিত।
ভ্যাকসিন নিতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। করোনার প্রথম থেকেই চিকিৎসকরা এগিয়ে এসেছে। দেশের ভ্যাকসিন কার্যক্রম সফল করতেও আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আমরা ভ্যাকসিন নেয়ার বিষয়ে শুরু থেকেই ইতিবাচক ছিলাম। চিন্ত ছিল, ভ্যাকসিন আসলে শুরুতেই নিব।
ভ্যাকসিন নিয়ে কেউ ভয় পাবেন না, কোন অপপ্রচারে কান দিবেন না। মহামারি মোকাবেলায় সুযোগ আসলেই ভ্যাকসিন নিন। এ আকুতি রেখেই নিজেদের কথা শেষ করেন চিকিৎসক দম্পতি।