টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন
যারা নিলেন করোনার প্রথম ভ্যাকসিন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৫:০২ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২১ বুধবার আপডেট: ০৫:২৮ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২১ বুধবার
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়ার মধ্য দিয়ে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ে পা রাখলো বাংলাদেশ। এখানে নার্স, চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, পুলিশ ও সেনাসদস্যসহ মোট পাঁচজনকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। টিকা নেওয়া সবাইকে অভিনন্দন জানান সরকার প্রধান। মহামারিতে মৃত্যু, শোক আর সঙ্কটের একটি বছর পেরিয়ে এসে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়েই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে সরকার আশা করছে।
এর আগে ভ্যাকসিনেশন বা টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যুক্ত হন সরকার প্রধান।
**সবকিছুই পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
করোনা সংক্রমণ শনাক্তের ৩২৭ দিন পর, নতুন বছরের মাত্র ২৭তম দিনেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন মহাযজ্ঞ শুরু করতে সক্ষম হলো বাংলাদেশ। এই কর্মসূচি শুরুর মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। একই সঙ্গে টিকার মাধ্যমে করোনা মহামারি মোকাবিলার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ।
প্রথমে ভ্যাকসিন নিয়েছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নার্স সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা। আর ভ্যাকসিন নেওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আহমেদ লুৎফর মোবেন।
তৃতীয় টিকা নেন স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. নাসিমা সুলতানা। চতুর্থজন হলেন পুলিশ সদস্য দিদারুল ইসলাম এবং পঞ্চমজন হলেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ।
সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা
মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আহমেদ লুৎফর মোবেন
স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. নাসিমা সুলতানা
পুলিশ সদস্য দিদারুল ইসলাম
বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, টিকা নেওয়া এই পাঁচজন হাসপাতালে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণেই থাকবেন। এই হাসপাতালে মোট ২৫ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিকদের মধ্যে থেকে তাদের বাছাই করা হয়েছে।
এরপর বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) ঢাকার পাঁচটি হাসপাতাল-ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে, সে প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সেরে ফেলা হয়েছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ৬৪ জেলায় ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান শুরু হবে।
করোনার টিকা নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিবন্ধন করতে হবে ‘সুরক্ষা’ নামক ওয়েব পোর্টালে (www.surokkha.gov.bd)। অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যাপল প্লে স্টোর থেকে সুরক্ষা মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করেও করা যাবে নিবন্ধন।
দেশের মানুষকে টিকা পেতে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাঁরাও টিকাদানকেন্দ্রে যোগাযোগ করে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৬ মাসের মধ্যে মোট তিন কোটি ডোজ টিকার সরবরাহ পাওয়া যাবে। এর বাইরে প্রয়োজন অনুযায়ী আরো টিকা কেনার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ভ্যাকসিন সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িতদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
সেরামের কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের পাশাপাশি বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের আওতায় বিশ্বের ৯২টি দেশের মত বাংলাদেশও মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ টিকা পাবে। তাতে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসতে পারে।
বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মা ও সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী সরকার তিন কোটি টিকা কিনছে সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে। বেক্সিমকো এই টিকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। গত সোমবার এই টিকার প্রথম চালান দেশে আসে। প্রথম চালানে এসেছে ৫০ লাখ টিকা। এভাবে আরও পাঁচটি চালান আসার কথা। তার আগে গত বৃহস্পতিবার ভারতের উপহার হিসেবে দেশে ২০ লাখ টিকা আসে।