ধারাবাহিক উপন্যাস
বলতে এলাম ভালোবাসি : পলাশ মাহবুব : পর্ব-৫
পলাশ মাহবুব
প্রকাশিত: ০৪:৪০ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২১ শনিবার আপডেট: ০৫:১৯ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২১ শনিবার
বলতে এলাম ভালোবাসি
ধারাবাহিক উপন্যাস
পলাশ মাহবুব
পর্ব-৪
৮.
কোনো চিঠি রাত্রি বাসা পর্যন্ত নিয়ে আসে না। কলেজে পাওয়া চিঠি কলেজেই ছিঁড়ে ফেলে। কিন্তু একচল্লিশ নম্বর চিঠিটার বেলায় ব্যতিক্রম ঘটেছে। চিঠিটা সে বাসায় নিয়ে আসে।
তৃপ্তি যদিও চিঠিটা তার জামান ভাইকে দেয়ার জন্য নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু সে দেয়নি। সেটা যে শুধু ঝামেলা এড়ানোর জন্য বিষয়টা তা না। সমস্যা আরও একটা আছে। নিদ্রাকুসুম স্যার। এই চিঠির মধ্যে নিদ্রাকুসুম মানে আতিকুল হক স্যারের কথা আছে। চিঠির মধ্যে স্যারের সাথে রাত্রির প্রেমের ইংগিত করা হয়েছে। একই সাথে সে ধরণের কিছু হলে তা প্রতিহতের হুমকিও আছে।
চিঠিটা এখন পর্যন্ত দুজন পড়েছে।
রাত্রি আর তৃপ্তি। তৃপ্তি তার স্কুল লাইফের বন্ধু। তৃপ্তিকে শতভাগ বিশ্বাস করে সে। তারপরও সে চিঠিটা তাকে দেয়নি। কারণ চিঠিটা যদি তৃপ্তি তার জামান ভাইকে দেয় তাহলে র্যাব তো আর আতিক স্যারের বিষয়টি গোপন রাখবে না। তারা সব বিষয় খতিয়ে দেখবে। তখন অবধারিতভাবে আতিক স্যারের বিষয়টা প্রকাশ্যে চলে আসবে। পুরো কলেজে জানাজানি হবে।
উফফ। চিঠিতে আতিক স্যার আসলো কিভাবে! রাত্রি হিসেব মেলাতে পারে না। নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে ব্যাগ থেকে চিঠিটা আবার বের করে সে। পড়া চিঠি কয়েকবার করে পড়ে।
চিঠিটা কি তাদের ক্লাসের কেউ তাকে লিখেছে! আতিক স্যারের কথা তো অন্য কারও জানার কথা না।
চিঠি যে লিখেছে সে আতিক স্যারের সাথে তার বিশেষ সম্পর্কের কথা বলেছে। খোলাখুলি বলেনি। বলার মধ্যে একটা প্যাঁচ আছে।
‘একটা কথা বলে রাখি এই কলেজের কারও সাথে তুমি প্রেম করতে পারবে না। এমনকি ওই নিদ্রাকুসুমের সাথেও না।’
এরমধ্যে নিদ্রাকুসুম স্যার কোত্থেকে আসলো রাত্রি বুঝতে পারে না। তার সাথে স্যারের প্রেম হতে যাবে কি কারণে!
নিজেকে হেল্পলেস মনে হয় রাত্রির। এমন চিন্তাতো কখনো তার মাথাতেও আসেনি। আর স্যারের মাথায় আসার তো প্রশ্নই ওঠে না। স্যারতো মেয়েদের মুখের দিকেই ঠিকভাবে তাকাতে পারেন না। তার চোখ থাকে পায়ের দিকে। এমন একজন লোককে জাড়িয়ে মানুষ প্রেমের গল্প ফাঁদে কিভাবে! সবকিছুর তো একটা নূন্যতম ভিত্তি থাকা উচিত। যত্তসব আজগুবি।
তাছাড়া আতিক স্যারের সাথে উল্লেখ করার মতো কোনও সম্পর্ক তার নেই। ক্লাসে খুব বেশি কথা হয় তাও না। লেকচার বুঝে নেয়ার জন্য মাঝে-মধ্যে তার কাছে যায় এই যা। এর বাইরে অন্যকোনো বিষয় নিয়ে কখনো কথা হয়নি। স্যারের সাথে কোথাও দাঁড়িয়ে এক কাপ চাও খায়নি আলাদাভাবে।
তবে একদিন কলেজের মধ্যদিয়ে দুজন একসাথে হেঁটে গিয়েছিল। সেদিন স্যারের কাছে গিয়েছিল একটা রেফারেন্স বইয়ের খোঁজ জানতে। স্যারের বোধ হয় একটু তাড়া ছিল। তিনি বেড়িয়ে যাচ্ছিলেন। হাঁটতে হাঁটতে তাই কথা বলতে হলো।
স্যার যাচ্ছিলেন একটা সেমিনারে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সম্পর্কের ওপর। বললেন খুব বড় মানের সেমিনার। অনেক কিছু জানা যাবে।
রাত্রির কি মনে হলো। সে ফস করে স্যারকে বলল, স্যার আমিও যেতে চাই।
স্যার একটু ইতস্তত করেছিলেন। কিন্তু না করেননি।
এক রিকশায় করে তারা সেমিনারে গিয়েছিলো। এটুকুই। এখন এটাকে যদি প্রেম হওয়ার সম্ভাবনা ধরা হয় তাহলে তো জনে জনে প্রেম করতে হবে। ছেলেগুলোর মাথায় কিছু নেই। যা মনে আসে তাই লিখে ফেলে। নিজের ক্ষমতা জাহির করার জন্য একটা নিরিহ মানুষকে নিয়ে টানাটানি। স্যারের কানে যদি কথাটা যায় তাহলে কি ভাববে! সহজ সরল ভালো মানুষটা অযথা একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়বে।
ভেবে রাত্রির নিজেরই লজ্জা লাগে।
তবে একটা বিষয় অবশ্য ঠিক। আতিক স্যার ক্লাশের যে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে পছন্দ করেন রাত্রি তাদের একজন।
তা স্যার তাকে পছন্দ করতেই পারেন।
কারণ রাত্রি পড়াশুনায় ভালো। আতিক স্যার যে বিষয়টা পড়ান সেই ‘রাজনীতি ও সংঘর্ষ’ নিয়ে তার আগ্রহ আছে। তাছাড়া ক্লাসের অন্যরা যখন স্যারকে নিয়ে মজা করে তখন তাতে সে অংশগ্রহণ করে না। প্রথম দিকে হালকা-পাতলা করত। একটা পর্যায়ে সে আবিষ্কার করে স্যারকে নিয়ে দুষ্টামি-ফাজলামি তার ভালো লাগে না। বেশি বেশি মনে হয়।
এ ধরণের সময়ে সে মুখে হাত দিয়ে চুপচাপ থাকে। নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে চায় না। মাঝে মাঝে অবশ্য বিরক্তির বিষয়টি সে চেপে রাখতে পারে না। তখন মুখ ফসকে বলে ফেলে।
আজব। একটা ভালো মানুষকে নিয়ে এসব করার কি দরকার।
তৃপ্তিসহ দু-একজন কাছের বান্ধবিকে বিষয়টি সে শেয়ারও করে।
অনেক তো হয়েছে। আতিক স্যারকে নিয়ে আর কত? ভালো মানুষির কি তাহলে কোনও দাম নেই! আতিক স্যার মেয়েদের মতো চুলে নিদ্রাকুসুম তেল দেন বলে তার নাম নিদ্রাকুসুম হয়ে গেলো। আর আফরোজা ম্যাডাম যে ছেলেদের মতো ফতুয়া পড়ে কলেজে আসে তার তো কোনও নাম নেই। সহজ-সরল ভালো মানুষ পেয়েছো তো তাই স্যারকে নিয়ে যা খুশি বলছো।
সবাই আসলে শক্তের ভক্ত। কই, কায়সার স্যারকে নিয়েও তো কেউ কিছু বলে না। সেও তো পান খেয়ে ঠোঁট টুকুটুকে লাল করে ক্লাসে আসে। ক্লাসে বসে খিলাল দিয়ে দাতের ফাঁকে আটকা পড়া পানের খুচরা অংশ পরিষ্কার করে। তার তো কোনও নাম শুনলাম না আজ পর্যন্ত! থাকবে কিভাবে? কায়সার স্যার তো কথার আগে গালি দিয়ে শুরু করে। মাইরের ভয় আছে না।
রাত্রির প্রতিক্রিয়ায় ফল হয়েছিলো উল্টো।
ক্লাশে ছড়িয়ে পড়ে ‘রাত্রিতে নিদ্রাকুসুম’। কুসুম কুসুম প্রেম।
দু-একজন টিপ্পনি কেটে বলে, এই তোরা স্যারকে আর ‘টোন’ করিস না। আমাদের রাত্রি কিন্তু তাহলে ভীষণ মাইন্ড করবে।
সেই গল্প অবশ্য বেশি দূর আগাতে দেয়নি রাত্রি। একটা পর্যায়ে সে বোঝাতে সক্ষম হয় যে বিষয়টা আসলে সেরকম কিছু না। তাছাড়া পছন্দ আর প্রেমের মধ্যে নিশ্চয়ই ফারাক আছে।
‘রাত্রিতে নিদ্রাকুসুম’ গল্পের সেখানেই ইতি হয়েছিল।
নতুন করে আবার এই গল্প আসলো কেন! তাও একটা উড়ো চিঠির মাধ্যমে।
যারা রাত্রিকে এত এত চিঠি লিখলো, এসএমএস করলো তাদের কারো সাথে প্রেমের গুজব হলো না। আর যে মানুষটা কখনো ভালোভাবে মুখের দিকেই তাকায়নি। তার সাথে প্রেমের গুজব।
মেজাজ খারাপের মধ্যেও তার হাসি চলে আসে।
রাত্রি একবার ভাবে চিঠির ফোন নাম্বারে ফোন করবে। পরক্ষনে নিজেকে সামলায়। ফোন দেয়াটা ঠিক হবে না। একবার ফোন দিলে সেই ছেলের সাহস বেড়ে যাবে। তখন আরও নানান কান্ড করবে।
তবে কি কলেজের কেউ কেউ এখনো মনে করে রাত্রির সাথে আতিক স্যারের সম্পর্ক আছে। কিংবা সম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ভেতরে ভেতরে কি তাহলে এই গল্প চালু আছে! নাকি নিছক অনুমান থেকে কথাটা লিখেছে।
রাত্রি কিছু চিন্তা করতে পারে না।
সে চিঠিটা হাতে নিয়ে ছিঁড়তে চায়। কিন্তু ছেঁড়ে না। ভাঁজ করে ডায়েরির মধ্যে রেখে দেয়।
রাত্রির মাথাটা ধরে আসে। মেজাজটাও বিগড়ে আছে। কাপড় না বদলে সে বিছানায় শুয়ে পড়ে। এখন চুপচাপ কিছুক্ষন শুয়ে না থাকলে সারাদিনেও মাথা ধরাটা যাবে না।
মায়ের ডাকাডাকিতে সেটা হলো না।
দরজা খুলতেই মা বললো, কিরে কলেজ থেকে এসেই দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লি যে। কি হয়েছে, শরীর খারাপ? দেখি তো . . .
রাত্রির কপালে হাত রাখে মা।
না, জ্বর তো নাই। মুখটা এত শুকনা শুকনা লাগছে কেন? কলেজে কোনও সমস্যা হয়েছে?
রাত্রি কোনও উত্তর দেয় না। সে নিজের সাথে হিসেব করে।
মাকে কি ঘটনাটা বলা ঠিক হবে? বললে যদি মাও বাবার মতো টেনশনে পড়ে যায়। তাহলে তো তার আর কলেজে যাওয়া হবে। না, থাক। এখনই কিছু বলার দরকার নেই।
মায়ের দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসি দেয় রাত্রি।
কিছু হয়নি মা। টানা ক্লাস ছিলো তো তাই মাথাটা একটু ধরেছে। বাইরে প্রচন্ড রোদ। একটু রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। তুমি চিন্তা করো না।
সে না হয় বুঝলাম। তাহলে ভাত খেয়ে ঘুমা। না খেয়ে ঘুমালে তো মাথা আরও বেশি ধরবে।
কিছু হবে না। তুমি যাও।
রাত্রির মা দরজার সামেন দাঁড়িয়ে থাকেন।
আহা, মা যাওনা ।
মায়ের যাওয়ার অপেক্ষা না করে বিছানায় ধপাস শুয়ে পড়ে রাত্রি।
৯.
এভাবে আর কতদিন বোনের বাসায় থাকবা দাদা। এবার নিজের বাসার কথা ভাবো।
সকালবেলা নাস্তার টেবিলে বসে কথাটা বলে আইরিন। আইরিন আতিকুল হকের ছোট বোন। আতিকুল হকরা তিন ভাইবোন। দুই ভাই এক বোন।
সবার বড় ভাই রাজশাহীতেই থাকেন।
মাঝে আতিক।
বোন সবার ছোট।
আতিক আর আইরিন পিঠাপিঠি হলেও দুজনের মাঝে বয়সের ফারাক পাঁচ বছরের। তাই আতিকের সাথে আইরিনের বয়সজনিত কিছুটা দূরত্ব আছে। তবে সেটা বড় ধরণের না। নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে তারা দুজন ফ্রি।
ছোট বোনের মুখে হঠাৎ এই কথা শুনে খানিক ধাক্কা খায় আতিক। তবে কি ছোটবোনের বাসায় সে উটকো ঝামেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পড়ছে। নাকি ছোটবোনের স্বামী তার এই থাকাটা পছন্দ করছে না। নিজে মুখ ফুটে বলতে পারছে না বলে আইরিনকে দিয়ে বলাচ্ছে।
বোনের কথা শুনে তার যতটা না মন খারাপ হয় তার চেয়ে বেশি লজ্জা লাগে। আসলে ভুলটা তারই। এতদিন ধরে ছোটবোনের বাসায় থাকাটা উচিত হয়নি। বোন হয়তো কিছু মনে করবে না। কিন্তু তার স্বামীর তো বিষয়টা ভালো নাও লাগতে পারে।
সে অবশ্য মাঝে একবার আলাদা বাসায় ওঠার চেষ্টা করেছিল। কলেজের কাছাকাছি একটা ভালো থাকার জায়গাও পেয়েছিল। কলেজের আরেকজন শিক্ষক একটা বাসা ভাড়া নিয়ে আতিকুল হককে থাকার অফার করেছিল। বেশ বড় বাসা। পুরোটা তার দরকার নেই। তাই আতিককে বলেছেন তিনি। আতিকেরও বাসাটা পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু বোনের পীড়াপীড়ির কারনে তখন সেটা সম্ভব হয়নি।
আমরা থাকতে তুমি আলাদা বাসায় থাকবে কেন দাদা! এটা কেমন কথা। একা থাকলে কি খাবে না খাবে তার কোনও ঠিক-ঠিকানা থাকবে না। বাসা যদি বদলাতে চাও একেবারে ভাবিকে এনে বদলাবে তার আগে না।
এখন তবে এ কথা বলছে কেনো আইরিন! বেশ অপমানবোধ হয় তার।
দাদা, শোনো। তুমি আবার বিষয়টা অন্যভাবে নিও না। তুমি আমাদের বাসায় যতদিন খুশি ততদিন থাকতে পারো। কোনও সমস্যা নেই। আমরা তাতে বরং খুশিই হবো। কিন্তু তোমার তো একটা সংসার দরকার। এভাবে কতদিন আর একা একা থাকবে। মা প্রতিদিন ফোন করে আমার সাথে কান্নাকাটি করে। তোমাকে বললে নাকি তুমি কথার কোনও উত্তর দাও না। তাই মা তার কষ্টের কথা আমাকে বলে। তার একটাই কথা। তুমি বিয়ে করবে কবে। বলে, আতিকুলরে জিগা তার কি পছন্দের কেউ আছে নাকি? থাকলে ভালো। আর না থাকলে আমরা মাইয়া দেখি। দিন তো কম হইলো না। আর আমাগো দিনও তো ফুরাইয়া আইলো। পোলার বউয়ের মুখ দেখুম না।
আতিকুল হক মন খারাপ করে নাস্তা না খেয়ে শুধু পানি মুখে দিয়েছিল। বোনের মুখে বিয়ের কথা শুনে সে অপ্রস্তুত বিষম খায়।
আম্মার কি কথা বলার মতো আর কোনও বিষয় নাই!
যত বিষয় থাকুক না কেন, ছেলের বিয়ের বয়স হলে তারা চিন্তা তো করবেই। তা তোমার পছন্দের কেউ থাকলে বলো। মাকে জানাই সে খবর।
ছোট বোন আইরিনের কথা শুনে আতিক তার দিকে এমনভাবে তাকাল যার অর্থ পরিষ্কার।
আমার আবার কে থাকবে!
আচ্ছা, তোমার যদি সেই রকমের কেউ না থাকে তাহলে আমরা তো আছি। দেখা-সাক্ষাত শুরু করি। মা-বাবা কিন্তু তোমারে বিয়া করানোর জন্য উতলা হয়ে উঠছে।
সে হবে ক্ষন। এতো ব্যস্ত হওয়ার কি আছে। তুই মাকে তাল দেস। আমি বুঝতে পারছি।
টেবিল থেকে উঠে ব্যাগটা নিয়ে বাসা থেকে বের হয় আতিকুল হক।
আরে আরে নাস্তা না খাইয়া কই যাও।
আজকে খুব সকালে একটা এক্সট্রা ক্লাশ নিতে হবে। ক্লাসে যখন পড়াই তখন ছাত্র-ছাত্রীদের মন থাকে অন্যদিকে। পরে আসে এক্সট্রা ক্লাসের আবদার নিয়া। কি আর করা!
বোনকে একটা বুঝ দিয়ে বের হয়ে যায় সে।
বেশিক্ষন থাকা মানে এখন আইরিনের নানান প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। তার বিশেষ কেউ আছে কিনা। না থাকলে কাউকে ভালো লাগে কিনা। ভালো লাগলে সেই মেয়েটি কে? কি করে? কবে থেকে পরিচয়? তার সাথে সে কথা বলবে কিনা এ রকম প্রশ্নের আর শেষ থাকবে না।
আইরিনের এক্সট্রা প্রশ্নের হাত থেকে বাঁচতে তাই এক্সট্রা ক্লাসের গল্প সাজায় আতিক। তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা কলেজে চলে আসে।
আজকে আর সে বাসের জন্য অপেক্ষা করে না। একটা সিএনজি ধরে। ফলে একটু আগেই এসে পড়ে কলেজে।
আগে আসার দুটি কারণ। বোনের কথা এড়াতে আগে ভাগে বের হওয়া আর যানজটহীন রাস্তা।
তার বাসা থেকে কলেজে আসার রাস্তাটার চরিত্র বোঝা যায় না। যেদিন ফাঁকা থাকে সেদিন একেবারে অসম্ভব ফাঁকা। বাতাসের বাঁধা ছাড়া রাস্তায় আর কোনও বাঁধা থাকে না। আর যেদিন জ্যাম লাগে সেদিন চারপাশ থেকে লাগে। কোনও ঘুর রাস্তা ধরেও পাড় পাওয়ার উপায় থাকে না।
সকাল সকাল ক্যাম্পাস বেশ ফাঁকা ফাঁকা। কলেজ এখনো জমেনি। ডেস্কে ব্যাগটা রেখে ক্যান্টিনে যায় আতিকুল।
নাস্তা করা দরকার। পেটে ক্ষুধা আছে। কিন্তু মুখে রুচি পায় না। বয়কে ডেকে শুধু চায়ের অর্ডার দেয় আতিকুল হক।
তার চা খাওয়ার অভ্যাস নেই। বিশেষ উপলক্ষে একটু-আধটু চা খায়। আজ খাবে।
চা বিশেষ পদের হয়নি। তবে খেতে খারাপ লাগছে না। অনেকদিন বিরতির পর ভাত খেলে ডাল ভাতও যেমন অমৃত লাগে। অনেক দিন পরে চা খাওয়ার অনুভূতিও সে রকম। পদের না হলেও খাওয়া যায়।
চা খেতে খেতে ছোট বোন আইরিনের প্রশ্নটা মনে পড়ে।
তার কি বিশেষ কেউ আছে?
ভালো লাগার মতো কেউ। ভালোবাসার মতো?
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে আতিকুল হক।
ছিল।
তারও ভালোবাসার একজন ছিল। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত একটা মেয়েকে ভালো লাগতো।
চলবে...
আরও পড়ুন
বলতে এলাম ভালোবাসি : পলাশ মাহবুব : পর্ব-৪
বলতে এলাম ভালোবাসি : পলাশ মাহবুব : পর্ব-৩