অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

আম্পানে সাতক্ষীরা

অর্জিত হয়নি পাটচাষের লক্ষ্যমাত্রা, দাম ও পাটখড়িতে খুশি কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৫৭ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ শুক্রবার   আপডেট: ০৯:৪০ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ বুধবার

অধিক তাপমাত্রা আর সময়মতো প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেতে পাটের চারা গজাতে পারেনি। ফলে সাতক্ষীরায় চলতি মৌসুমে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। জেলার কৃষি অফিস কর্মকর্তা ও কৃষকরা এ কথা জানাচ্ছেন।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে এই জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১১,৫০০ হেক্টর কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে জেলায় পাটের আবাদ হয়েছে ১১,২৯০ হেক্টর জমিতে।

চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে জেলার সাতটির মধ্যে ছয়টি উপজেলায় পাট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার বেল। এর মধ্যে:
- সাতক্ষীরা সদরে ৫৭ হাজার বেল,
- কলারোয়ায় ৪২ হাজার বেল,
- তালায় ৩৫ হাজার ৪শ বেল,
- দেবহাটায় ১০২০ বেল,
- কালিগঞ্জে ১৬২০ বেল
- আশাশুনিতে ৯০০ বেল এবং
- শ্যামনগরে ৬০ বেল।

এর আগে ২০১৯-২০ মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় এক লাখ ৩৭ হাজার ৬২৪ বেল পাট উৎপাদিত হয়। ওই মৌসুমে জেলায় পাটের আবাদ হয় ১১ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ৪ হাজার ৭৫০হেক্টর, কলরোয়ায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর, তালায় ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর, দেবহাটায় ৮৫ হেক্টর, কালিগঞ্জে ১৩৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ৭৫ হেক্টর ও শ্যামনগরে ৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়।

গত বছরের তুলনায় ৭৩০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ কমলেও ৩৭৬ বেল পাট উৎপাদন বাড়বে বলে ধারণা ছিল কৃষি দফতরের। কৃষি বিভাগের দাবি, বিগত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে পাট উৎপাদন ও বীজের মান ভাল ছিল।

এ মৌসুমে হেক্টর প্রতি ১২ বেল পাট উৎপাদন হবে এমনটাই ধারণা করছিলেন জেলা কৃষি বিভাগ কর্মকর্তারা।

সাতক্ষীরা সদরের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের পাটচাষি আবু বকর সিদ্দীক বলেন, এই এলাকার অনেক কৃষক পাট চাষ করেছিলেন। কিন্তু আম্পান ঝড়, অতি বর্ষণ এবং শিলা বৃষ্টির কারণে পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উঁচু এলাকায় কিছু পাট হয়েছে।

তবে পাটখড়ি এবং পাটের দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাট চাষিরা। পাটখড়ি আঁটি প্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং প্রতি মণ পাট ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত ধরে বিক্রি হচ্ছে। ভালো দামের কারণে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বালিয়াডাঙ্গার পাটচাষি আবু বকর।

এই গ্রামের অপর পাটচাষি শাহজাহান আলী জানান, আগে অগ্রিম টাকা নিয়ে পাট চাষ করে উৎপাদিত পাট শর্ত অনুযায়ী অগ্রিম দাতাকে দিয়ে দিতে হয়েছে। তবে পাটখড়ি তার নিজের রয়েছে। যা বিঘা প্রতি জমিতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এই জেলায় পানের বরজ, ঘেরে সবজি চাষ ও জ্বালানি হিসেবে পাটখড়ির চাহিদা বরাবরই রয়েছে জানিয়ে এই চাষী বলেন, পাটের চেয়ে পাটখড়ির চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় আমার পুষিয়ে গেছে।

সাতক্ষীরা জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, আম্পানে পাটের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে সঠিক সময়ে কৃষকদের কাছে বীজ পৌছে দিতে পারিনি, ফলে চাষ কিছুটা ব্যহত হয়।

এছাড়া উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এবং কিছু এলাকায় লবণাক্ততার কারণে পাট চাষ কিছুটা কম হয়েছে।

তবে এ সময় কৃষকদের করণীয় সম্পর্কে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নরুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে পাট লাগানের সময় ঘূর্ণিঝড় আম্পান এবং পরবর্তীতে অতিবৃষ্টির কারণে পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম হয়েছে। তবে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় চাষীরা খুশি আছেন।

তিনি আরও বলেন, পাটখড়ির কথা বিবেচনা করে জেলায় চারকোল স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হবে। যাতে চাষীদের মাঝে পাট চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। অ্যাকটিভেটেড চারকোল বা পাটকাঠি থেকে কয়লা উৎপাদনে বড় ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।