কৈশোর মানব জীবনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, সঠিক নির্দেশনা জরুরি
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: কাইসার রহমানী
প্রকাশিত: ০১:২৪ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০২১ শুক্রবার আপডেট: ০৯:২৯ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০২১ শুক্রবার
‘মানুষের জীবনে কৈশোর বৈশিষ্ট্য এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এই বৈশিষ্ট্যের কিছু ঝুঁকি রয়ছে। আমাদেরই দায়িত্ব শিশু কিশোরদের মানসিকতাকে সঠিক ও সুন্দরভাবে বিকশিত করার। বিকশিত করার জায়গাও আমাদের তৈরি করে দিতে হবে। সেটা সম্ভব হলেই কিশোর বয়সীরা অপরাধ প্রবনতা থেকে দূরে থেকে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে।’
কথাগুলো বলছিলেন ডা. মেখলা সরকার। মনস্তত্ববিদ ও মনস্তত্ববিদ্যার শিক্ষক। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগি অধ্যাপক। দেশে কিশোর অপরাধ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে অপরাজেয় বাংলা তার মুখোমুখি হয়েছিলো কিছু প্রশ্ন নিয়ে।
অপরাজেয় বাংলা: শিশু-কিশোরদের মানসিকতায় অপরাধ প্রবণতা বিষয়টা কি নতুন আমাদের জন্য?
ডা. মেখলা সরকার : গত ১০ অথবা ১৫ বছরে শিশু-কিশোরদের অপরাধের বিভিন্ন ঘটনা আমাদের সামনে আসছে। জাতীয় পর্যায়ে সংবাদমাধ্যমে স্থান পাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমেও আমরা দেখছি। কিন্তু কিশোরমনে অপরাধ প্রবণতার ব্যাপারটা নতুন নয়। অতীতেও ছিল। শিশু-কিশোরদের মনে অপরাধ মানসিকতা আগেও ছিলো এখনো আছে। তবে এখন ধরনটা পাল্টেছে, আর আগের চেয়ে এখন কিছুটা বেড়েছে শিশু-কিশোরদের মনে অপরাধ প্রবণতা।
অপরাজেয় বাংলা: এটা বর্তমানে বাড়লো কেন ?
ডা. মেখলা সরকার: আগে অনেক শিশু সংগঠন ছিল, খেলার জায়গা ছিল, শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ হতো এসবে। অনেক রকম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতো শিশু কিশোররা। এখন এসব কমে গেছে। খেলার মাঠের পরিবর্তে ভার্চুয়ালে খেলছে শিশু-কিশোররা। ভার্চুয়াল গেমে বাচ্চারা তেমন কিছু শেখেনা। এতে করে কূপমন্ডুকতা তৈরি হচ্ছে তাদের মনে। স্বার্থ কেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে শিশু কিশোর। একধরণের ফ্যান্টাসির মধ্যে থাকছে তারা, যার সঙ্গে বাস্তব জীবনের কোন মিল নেই।
অপরাজেয় বাংলা: শিশু-কিশোরদের মনে অপরাধ প্রবণতা তৈরি হয় কেন?
ডা. মেখলা সরকার: বয়সের ধর্মের কারণে নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে শিশু-কিশোররা। এই বয়সে শরীরে এমন এক শারীরিক শক্তি কাজ করে যা প্রকাশ করতে উন্মুখ থাকে তারা। এ বয়সে তারা নিজেদের পরিচিত করতে চায়। হিরোইজম কাজ করে। সবার দৃষ্টি, মনযোগ কাড়তে চায় তারা। এই বয়সে সঠিক বেঠিক ধারণাটা পরিপক্ক ভাবে থাকেনা। তাই যুক্তির চেয়ে আবগের বিষয়টা বেশি প্রাধান্য পায়। যেটাতে মজা পাবে তারা সেটাই করবে। আরেকজনের ক্ষতি হচ্ছে কি না তা বিবেচনা করার সময় এ বয়সের মধ্যে অতটা থাকেনা।এসব কারণেই অপরাধের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। অনেকসময় বাচ্চারা কাউকে তোয়াক্কা করতে চায়না, নিজের মধ্যে একটা স্বাধীনচেতা মনোভাব থাকে। নিজের ইচ্ছামতো পোশাক পরতে চায়। বন্ধু নির্বাচন করতে চায়।
অপরাজেয় বাংলা: তাদের অপরাধ মানসিকতা থেকে কিভাবে সরিয়ে আনা যায়?
ডা. মেখলা সরকার: শিশু- কিশোররা বুঝতে পারেনা কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ। খোলামেলা কথা বলে ভাল আর মন্দের পার্থক্য বুঝাতে হবে তাদের। সন্তানের ১৮ বছর পর্যন্ত যা কিছু হবে, অভিভাবকের সুপারভিশনে থাকতে হবে। সন্তান কি করছে, কার সঙ্গে মেলা-মেশা করছে, বাইরে কি করছে ইত্যাদি ইত্যাদি জানতে হবে।
অপরাজেয় বাংলা: নজরদারিটাই কি যথেষ্ট?
ডা. মেখলা সরকার: না। অভিভাবকদের শিশু-কিশোরের মনকে বুঝতে হবে। প্রত্যেক বাবা মাকেই তার সন্তানের সাথে রেসপেক্টফুল আচরণ করতে হবে। কারণ এসময় সন্তানরা চায়, অন্যরা তাকে সম্মান করুক, তার মতামত শুনুক, তাকে গ্রহণ করুক।
"ভুলে গেলে চলবেনা, মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বয়সের অনেক ছেলে মেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিশোর বৈশিষ্ট্য অনন্য বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এই বৈশিষ্ট্যের কিছু ঝুঁকি আছে। আমাদেরই দায়িত্ব শিশু কিশোরদের মানসিকতাকে সঠিক ও সুন্দরভাবে বিকশিত করার। বিকশিত করার জায়গাও আমাদের তৈরি করে দিতে হবে।"
অপরাজেয় বাংলা : সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের মতো ঘটনাতেও অপ্রাপ্ত বয়স্করা জড়িত থাকার কথা এসেছে। এমনটা কেন হচ্ছে ?
ডা. মেখলা সরকার : আগেও এমন হতো। তবে তা প্রকাশ হতো কম। একজন কিশোরের যখন যৌন চাহিদা তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে এই বয়সে প্রপার গাইড লাইন দিতে হবে। কথা বলতে হবে। কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ তাদের বুঝাতে হবে। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলেননা, তাই সমস্যাগুলো দিনে দিনে বাড়ছে।
অপরাজেয় বাংলা : আপনাকে ধন্যবাদ।
ডা. মেখলা সরকার : অপরাজেয় বাংলাকে ধন্যবাদ।