অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন, সুস্থ থাকুন

ডা. মো. আহাদ হোসেন

প্রকাশিত: ০৭:০৭ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২১ রোববার   আপডেট: ০৬:৩৬ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার

কার্বোহাইড্রেট বাদ দিন, ওজন কমান

কার্বোহাইড্রেট বাদ দিন, ওজন কমান

শরীরটাকে সুস্থ, সুন্দর ও রোগমুক্ত রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। অতিরিক্ত ওজনে শরীরের যেমন বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে তেমনি স্বাভাবিক চলাফেরা ও জীবনযাপন পদ্ধতি করতে পারে ব্যহত। উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলো মূলত ওজন নিয়ন্ত্রণ না করার ফলেই হয়। যারা উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস অথবা থাইরয়েডের সমস্যায় আক্রান্ত তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে প্রথম যেই পরামর্শটি শোনেন তা হচ্ছে- ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন। 

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ওজন কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো? এই প্রশ্নটির উত্তর যেমন এক কথায় দেয়া সম্ভব নয়, তেমনি প্রেস্ক্রিপশন আকারেও এর সমাধান দেওয়া কঠিন।
 
আজকে আমি ওজন নিয়ন্ত্রণ এর জন্য খুবই সংক্ষিপ্ত কিছু নির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করবো। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান কিন্তু কিভাবে শুরু করবেন সেটার কোনো দিক-নির্দেশনা খুঁজছিলেন তাদের জন্য এই নির্দেশনা কাজে লাগতে পারে। 

শুরুতেই ওজন বাড়ার মূল উপাদানগুলো জেনে নিন

কার্বোহাইড্রেট

ওজন বাড়ার মূল উপাদান হচ্ছে এই কার্বোহাইড্রেট। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা শুধু ওজনই বাড়ায় না, শরীরে অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে ১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট প্রায় ৩ গ্রাম পানি ধরে রাখতে পারে। যে কারণে আমরা যদি বেশি বেশি কার্বোহাইড্রেট খাই তাতে শরীর ফুলে যায় এবং ওজন বাড়তে থাকে। এইজন্য বলা যায় আমাদের শরীরের ওজন বাড়ার জন্য মূল ভূমিকা এই কার্বোহাইড্রেটের।

কার্বোহাইড্রেট এর প্রয়োজনীয়তা 

কার্বোহাইড্রেট যেমন শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয় একই সাথে পরিমিত কার্বোহাইড্রেট শরীরের জন্য দরকারিও। শরীরের সকল ধরনের বায়োকেমিক্যাল রিঅ্যাকশন সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পরিমিত কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন। শরীরে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ যদি শূন্য করে দেয়া দেয়া হয় তাহলে শরীর একটি স্ট্রেসফুল কন্ডিশনে চলে যায়। আর স্ট্রেসফুল কন্ডিশনে স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন বেশি নিঃসৃত হয় যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। তাই পরিমিত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন আছে।

কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ কিভাবে কমিয়ে আনা যায়?

আমাদের দেশে সাধারণত সবাই কার্বোহাইড্রেট বা ভাতের উপর নির্ভরশীল। বেশিরভাগ মানুষই তিন বেলা খেয়ে অভ্যস্ত। তাই হঠাৎ করে যদি কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ শূন্য করে দেয়া হয় তাহলে এটা অনেকের জন্যই কষ্টকর হতে পারে। তবে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনলে এটা শরীরের জন্য সহনীয় হয় এবং ধীরে ধীরে একটা পর্যায়ে এসে উপনীত হতে পারে।

কিছু পরামর্শ
প্রথম সপ্তাহের জন্য আমরা দিনে তিন বেলায় যা খাই তা ৫০ ভাগে নামিয়ে আনতে পারি। তার মানে হচ্ছে আমি যদি ভাত কিংবা রুটি খাই তাহলে আগে যতটুকু খেতাম তার অর্ধেকে নামিয়ে আনব। 
দ্বিতীয় সপ্তাহে আমরা খাবারের বেলা কমিয়ে আনতে পারি। সেটা এরকম হতে পারে যে দ্বিতীয় সপ্তাহে তিন বেলার জায়গায় দুইবেলা খেলাম। 

তৃতীয় সপ্তাহে খাবার এক বেলা খাব। 
এভাবে তৃতীয় সপ্তাহে আমরা খাবারের পরিমান অর্ধেক হয়ে গেল এবং এক বেলার জন্য। এই এক বেলা সাধারণত আমরা সকালেই খাই। সকালে আমি যে পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট বা ভাত বা রুটি খাব সেটি আমার সারাদিনের জন্য কার্বোহাইড্রেট এর ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম হবে।

মোদ্যা কথা প্রতিদিন একবেলা কার্বোহাইড্রেট খাবো এবং কেবলই সকাল বেলা।

দুপুর ও রাতে কি খাব?

দুপুরবেলা আমরা আর কোন কার্বোহাইড্রেট বা ভাত বা রুটি রুটি খাব না এটি অবশ্যই মানতে হবে। 

দুপুরে সবজি, সালাদ, মাছ অথবা মাংস অথবা ডিম পরিমিত পরিমানে খেয়ে নেবো। ক্ষুধা নিবারন করার জন্য এই খাবারগুলো যথেষ্ট। এই খাবারগুলোর মাধ্যমে পেট ভরার যে বিষয়টি থাকে সেটি হয়ে যাবে। এতে ক্ষুধামুক্ত থাকা সম্ভব হবে। 

রাতের বেলা সবজি অথবা সালাদ খাওয়া যেতে পারে। সেই সাথে সকল মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং চা বা অন্যান্য খাবারের সাথে চিনি পরিহার করতে হবে।

রাত এবং দুপুরের মাঝামাঝি একটি সময় বা বিকালবেলা অনেকেই নাস্তার অভ্যাস থাকে। এই সময় চিনি ছাড়া চা বা দেশি ফল যেটা খুব বেশি মিষ্টি নয় সেটা খাওয়া যেতে পারে। তবে না খেতে পারলেই ভালো। 
খাবার এই অভ্যাসগুলো যদি নিয়মিতভাবে করা যায় তাহলে আশা করা যায় শরীরে কার্বোহাইড্রেট বা ভাত বা চিনিজাতীয় খাবারের চাহিদা কমে যাবে। যার ফলে শুধুমাত্র দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শর্করা খাবারটুকু খাওয়া হবে।

এই পদ্ধতি তিন মাস চালিয়ে যেতে পারলে শরীর এই খাদ্যাভ্যাসের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং ওজন কমতে থাকবে।

আপনার শরীরের এই খাদ্যাভ্যাস পরবর্তীতে ধরে রাখতে হবে এবং নিয়মিতভাবে এই খাদ্যাভ্যাস টি পালন করতে হবে। 

সাথে কিছু হালকা এক্সারসাইজ বা হাঁটার অভ্যাস আমরা করতে পারি। হাঁটার ক্ষেত্রে আমরা যদি দৈনিক ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করি তাহলে আমাদের দেহের খাদ্যগুলো হজম প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হবে যথাযথভাবে এবং আমাদের ক্ষুধা লাগবে। সেই সাথে নতুন খাদ্যাভ্যাস আমাদের শরীরের সাথে ভারসাম্য রক্ষা করবে।

পরিশেষে বলতে চাই অতিরিক্ত ওজনের কারণে আমাদের শরীরের ভেতরে এবং বাইরে বেশকিছু সমস্যা হয়। তাই সুস্থ থাকার জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু শুরু করা হচ্ছে না। তাই সিদ্ধান্ত নিন আজ এখনই এই মুহূর্তে। 

সবাই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।

ডা. মো. আহাদ হোসেন
কনসালটেন্ট ও পেইন ফিজিশিয়ান
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল