অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

রঙিন মাছে রঙিন হলো সাইফুলের জীবন

এসএম শহীদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ০৪:১৭ পিএম, ৮ জানুয়ারি ২০২১ শুক্রবার   আপডেট: ০৫:৪৬ পিএম, ৮ জানুয়ারি ২০২১ শুক্রবার

চাকরির জন্য যে সাইফুল দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন কিন্তু কেউ চাকরি দেয়নি, টাকার জন্য যে সাইফুল হাত পেতেছেন পরিবারের কাছে কিন্তু অভাবের কারণে পরিবার তাকে টাকা দিতে পারেনি, সেই সাইফুল এখন বেকার যুবকদের চাকরি দেয়। রঙিন মাছে স্বপ্ন রাঙিয়ে পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করেছেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ব্রজবক্স গ্রামের সাইফুল ইসলাম। রঙিন মাছের চাষ পাল্টে দিয়েছে সাইফুল ইসলামের জীবন। অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি তাকে পরিচিতিও এনে দিয়েছে। এখন তাকে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সবাই চেনেন ‘রঙিন মাছের কারিগর’ হিসেবে। মাত্র ৬২০ টাকা পুঁজি নিয়ে রঙিন মাছ চাষ করে সাইফুল এখন ২০ লাখ টাকার মালিক। পুকুরে রঙিন মাছ চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।

কলারোয়া উপজেলার ব্রজবক্স গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৭ সালে চাকরির জন্য ভারতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে টেক্সটাইল মিলে হেলপার হিসেবে ২ বছর ৭ মাস কাজ করেন। সেখানে কাজের ফাঁকে অ্যাকুরিয়ামে রঙিন মাছের চাষ দেখে রাঙিয়ে নিতেন নিজের স্বপ্নকে। ভাবতে থাকেন দেশে ফিরে তিনিও রঙিন মাছের চাষ করবেন।

১৯৯৯ সালে দেশে ফিরে আসেন সাইফুল। পরিবারের কাছে রঙিন মাছের চাষ করার কথা বললে অভাবের কারণে তারা টাকা তো উল্টো মাথা খারাপ হয়ে গেছে, পাগল ইত্যাদি বলে তাকে নিরুৎসাহিত করেন তারা। এরপর বেকার জীবনের ধকল সামলাতে ২০০০ সালে কাজ নেন রাজধানী ঢাকার মিরপুরের এক গার্মেন্টসে। সেখানে কাজ করতে করতে পরিচয় হয় লিংকন নামের এক রঙিন মাছ বিক্রেতার সাথে। তার মাধ্যমে পরিচয় হয় তামিম নামের আরও একজন রঙিন মাছ ব্যবসায়ীর সাথে।

এরপর মাত্র ৬২০ টাকা দিয়ে ৬ জোড়া মাছ কিনে স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেন সাইফুল। কিন্তু প্রথমেই সাফল্য আসেনি। এরপর আবার চেষ্টা করি। এবার সাফল্য এসে ধরা দেয় আমার হাতে, জানালেন সাইফুল। ডিম ফুটে রঙিন মাছের পোনা দেখে সেদিন যে আনন্দ পেয়েছিলাম তা কোনদিন ভুলতে পারবো না। তিনি আরও বলেন, একটি কাজের জন্য এক সময় কত মানুষের কাছে ফোন করেছি। এখন প্রতিদিন প্রায় আড়াই শত ফোন কল আসে। চাকরির আশায় না থেকে শিক্ষিত যুবকরা যদি তাদের ইচ্ছা শক্তি নিয়ে কাজ শুরু করে তাহলে তারা মানব সম্পদে পরিণত হবে। শুধু দরকার উদ্যোগ আর ইচ্ছাশক্তি। সূর্য কখন উঠলো আর কখন অস্ত গেল সেদিকে তাকিয়ে না থেকে ভাগ্যাকাশে শুকতারা দেখতে চাইলে পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই।

সাইফুল ইসলাম জানান, এক সময় শখের বসে রঙিন মাছে চাষ করলেও পরে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পুকুর লিজ নেন। সেই পুকুর থেকে রঙিন মাছ চাষের পরিধি বাড়ান। ৬২০ টাকার মূলধন আজ প্রায় ২০ লাখ টাকা। এক সময় বাবা-মা মিলে সবাই কুঁড়ে ঘরে থাকতেন, এখন দোতলা বাড়িতে সুখে আছেন।

সাইফুল ইসলাম জানান, ২০১৪ সালে পুকুর লিজ নিয়ে বড় আকারে রঙিন মাছ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে ১৬টি পুকুর লিজ নিয়ে রঙিন মাছ চাষ করছেন। বড় ছেলের নামে ‘রেজা অ্যাকুরিয়াম ফিস’ নামের একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান শুরু করেছেন। তিনি এক সময় অন্যের শ্রমিক ছিলেন। এখন তার অধীনে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ মৎস্য বিভাগ ও সিটি ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছেন পুরস্কার ও সম্মাননা।

বিশেষ পদ্ধতিতে উৎপাদন করা মিল্কি কই কার্প, কিচিং গোরামি, কই কার্প, কমিটিসহ ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির রঙিন মাছ উৎপাদন হচ্ছে তার হ্যাচারিতে। এই মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। রঙিন মাছের জন্য দেশের সবচেয়ে বড় বাজার রাজধানীর কাঁটাবনের ব্যবসায়ীদের অনেকেই তার কাছ থেকে রঙিন মাছ নিয়ে যান।

সাফুল ইসলাম আরও বলেন, উৎপাদন বাড়িয়ে দেশে রঙিন মাছের চাহিদা মেটানো সম্ভব। সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে এ ব্যবসা আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। তিনি ব্যবসা বাড়াতে আহছানিয়া মিশন থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পেলে ব্যাপকভাবে রঙিন মাছ চাষ করে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে।