ভ্যাকসিনের ঘটনাপ্রবাহ
দেশে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন প্রয়োগে চূড়ান্ত অনুমোদন ওষুধ প্রশাসনের
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০১:৩৭ এএম, ৮ জানুয়ারি ২০২১ শুক্রবার আপডেট: ০২:০৫ এএম, ৮ জানুয়ারি ২০২১ শুক্রবার
ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন 'কোভিশিল্ড'দেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এ অনুমোদনের ফলে বেক্সিমেকো ফার্মাসিউটিক্যালস ভ্যাকসিনটি আমদানি করে দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করতে পারবে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বিভিন্ন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) দেশে কোভিশিল্ডের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন ভ্যাকসিন আসলে সেটি ব্যবহার করা যাবে। এর আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ১৪ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি ভ্যাকসিনটি জরুরি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে।
এর আগে ৪ জানুয়ারি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার করোনা ভ্যাকসিনের আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের জন্য ওষুধ প্রশাসন এ সংক্রান্ত একটি অনাপত্তিপত্র দেয় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডকে। বেক্সিমকোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এর পরদিন করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগে ১৩৭ পৃষ্ঠার নীতিমালা চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
ভ্যাকসিনের ঘটনাপ্রবাহ
৪ জুন ২০২০: সরকারিভাবে বাংলাদেশের কোভিড-১৯ টিকা কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ শুরু হয় এ দিনে। সেদিন লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক টিকা সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে যুক্ত হন এবং কোভিড-১৯ টিকা বিতরণে সমতার ব্যাপারে জোর দেন।
৫ নভেম্বর ২০২০: ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) ও বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে সরকার।
চুক্তিতে বলা হয়,অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন অনুমোদন দেওয়ার এক মাসের মধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউট ৫০ লাখ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে বেক্সিমকোর মাধ্যমে। এরপর প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ভ্যাকসিন দেবে। এভাবে মোট তিন কোটি ভ্যাকসিন কেনা হবে সেরাম থেকে।
২১ ডিসেম্বর ২০২০: মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়ম আগামী মে থেকে জুন মাসের মধ্যে দেশে সাড়ে চার কোটি মানুষের জন্য করোনার ভ্যাকসিন আসবে। জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির প্রথমে ভ্যাকসিনের প্রথম চালান এসে পৌঁছুবে। প্রথম চালানের তিন কোটি ভ্যাকসিন দেয়া হবে দেড় কোটি মানুষকে। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
**দেশে সাড়ে ৪ কোটি মানুষের ভ্যাকসিন মিলবে মে-জুনের মধ্যে
১ জানুয়ারি ২০২১: অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনা ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’ ব্যবহারের সুপারিশ করে ভারতের বিশেষজ্ঞ কমিটি।
২ জানুয়ারি ২০২১: ‘কোভিশিল্ড’ পরীক্ষামূলক কয়েকজন সেচ্ছাসেবকের উপর প্রয়োগ করা হয়। ভ্যাকসিন দেয়ার পর ৪০ মিনিট তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। কোথাও কোন সমস্যা দেখা দেয়নি।
২ জানুয়রি ২০২১: বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, জানুয়ারিতেই বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছে। ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হবে। দেশের প্রায় ৬ কোটি মানুষের জন্য ভ্যাকসিনের অর্ডার নিশ্চিত করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে আরও অর্ডার দেওয়া হবে। ভ্যাকসিন সর্বোচ্চ ৫ ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ৪২৫ টাকায় পাওয়া যাবে।
**চলতি মাসেই আসছে ভ্যাকসিন, প্রতি ডোজ ৪২৫ টাকা
৩ জানুয়ারি ২০২১: অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনা ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’ জরুরি ব্যবহারে অনুমোদন দেয় ভারতের ওষুধ প্রশাসন (ডিসিজিআই)।
**অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের জরুরি অনুমোদন দিলো ভারত
৩ জানুয়ারি ২০২১: ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার ভ্যাকসিন কেনার জন্য ৫০ লাখ ভ্যাকসিনের দাম বাবদ ৬০০ কোটি টাকা ব্যাংকে সেরাম ইন্সটিটিউটের অ্যাকাউন্টে জমা করার প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার সরকার।
**৫০ লাখ ভ্যাকসিন কিনতে আজ ৬০০ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ
৪ জানুয়ারি ২০২১: সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদার পুনাওয়ালা জানান, ভারতের ওষুধ প্রশাসন (ডিসিজিআই) ভ্যাকসিনটি জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি দিলেও শর্ত দিয়েছে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তারপর রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করবে। ফলে এই মুহুর্তে সেরাম ইনস্টিটিউট ভ্যাকসিন শুধু ভারত সরকারকে দেবে,তাদের পক্ষে দেশের বাইরে রপ্তানিতে যাওয়া সম্ভব নয়। তৈরি হয় বাংলাদেশের ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা।
**ভ্যাকসিন রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা, অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশ
৪ জানুয়ারি ২০২১: সচিবালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ভ্যাকসিন রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় কোনো সমস্যা হবে না। সময় মতোই চুক্তি অনুযায়ী ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। এছাড়া চীনা ও রাশিয়ার ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা চলছে। এই দুই দেশ ট্রায়াল শেষ করলে তারপর বাংলাদেশ এগুবে।
**ভ্যাকসিনে ভারতীয় নিষেধাজ্ঞায় সমস্যা হবে না, বাংলাদেশ আশাবাদী
৪ জানুয়ারি ২০২১: ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাস্বামী ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আশ্বাস দেন।
৪ জানুয়ারি ২০২১: সাংবাদিকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান,ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, দুই দেশের শীর্ষ পর্যায় থেকে সম্পাদিত চুক্তির বাইরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশে যথাসময়ে ভ্যাকসিন আসবে। কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবেনা।
**ভ্যাকসিন নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই, বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
৪ জানুয়ারি ২০২১: বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপনের সংবাদ সম্মেলন। তিনি জানান,বেক্সিমকো ভ্যাকসিন নিয়ে চিন্তিত নয়। কারণ ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে পরিষ্কার বলা আছে,বাংলাদেশ অনুমোদেন দেওয়ার এক মাসের মধ্যে সেরামকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। আরও বলেন, এটা জি টু জি নয়,বাণিজ্যিক চুক্তি।
৪ জানুয়ারি ২০২১: অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য ওষুধ প্রশাসন এ সংক্রান্ত একটি অনাপত্তিপত্র দেয় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডকে। বেক্সিমকোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই অনুমোদন আসে।
**ভ্যাকসিনের আমদানি ও ব্যবহারের অনুমোদন দিলো ওষুধ প্রশাসন
৫ জানুয়ারি ২০২১: করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগে ১৩৭ পৃষ্ঠার নীতিমালা চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ দিন স্বাস্থ্য অধিদফতর নীতিমালা চূড়ান্ত করার খবর জানায়।
**করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগে নীতিমালা চূড়ান্ত করলো অধিদপ্তর
৫ জানুয়ারি ২০২১: সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী আদর পূনাওয়ালা টুইটে জানান,ভারত থেকে সব দেশেই করোনা ভ্যাকসিন রপ্তানির অনুমোদন আছে। এখানে কোনো বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
**ভারত থেকে ভ্যাকসিন রপ্তানিতে বাধা নেই: জানালেন সেরামের সিইও
৫ জানুয়ারি ২০২১: ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় জানায়, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার করোনার ভ্যাকসিন রপ্তানিতে, ভারত সরকার কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। সেরামের প্রধান নির্বাহীর বক্তব্যটি ছিল ব্যক্তিগত, সরকারের নয়।
**ভ্যাকসিন রপ্তানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা নেই
৫ জানুয়ারি ২০২১: ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা জানান,বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে জিটুজি ব্যবস্থাপনায় করোনার টিকা পাবে।
৫ জানুয়ারি ২০২১: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে সাক্ষাতকারে জানান, টিকাদান কর্মসূচি শুরুর সপ্তাহদুয়েকের মধ্যে ভ্যাকসিন রপ্তানি শুরু করবে ভারত। প্রতিবেশী দেশগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি তাদের সরকার দিয়ে আসছিল,সেটি এখনও অটুট রয়েছে।
**কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভ্যাকসিন রপ্তানি শুরু করবে ভারত
৫ জানুয়ারি ২০২১: করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ক্রয়,সংরক্ষণ এবং বিতরণ প্রকল্পের জন্য মোট ৬ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
প্রকল্পটি জুনে প্রথম অনুমোদনের সময় ব্যয় ছিল ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫২ লাখ কোটি টাকা। মঙ্গলবারের বৈঠকে ভ্যাকসিন আমদানির জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধন করা হলো। অর্থাৎ অনুমোদন পেল মোট ৬ হাজার ৬৮৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
**করোনার বিরুদ্ধে লড়াই ও ভ্যাকসিনের জন্য ৬৭৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ একনেকে
৭ জানুয়ারি ২০২১: ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রমকুমার দোরাইস্বামী জানান, ভারতের সরকার যাদের ভ্যাকসিন দিতে অঙ্গীকার করেছে তারা সবাই পাবে।
**ভারত যাদের ভ্যাকসিন দিতে চেয়েছে তারা সবাই পাবে
৭ জানুয়ারি ২০২১ : জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে সরকার দ্রুত ভ্যাকসিন নিয়ে আসার সব ধরনের চেষ্টা করছে। ভ্যাকসিন আসার পর পরই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য-সহ সম্মুখসারির যোদ্ধাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
**সরকার খুব দ্রুত ভ্যাকসিন নিয়ে আসার চেষ্টা করছে
৭ জানুয়ারি ২০২১: সর্বশেষ ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন 'কোভিশিল্ড'দেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এ অনুমোদনের ফলে বেক্সিমকো কোভিশিল্ড' আমদানি করে দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করতে পারবে।