২০৬ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে নজিরবিহীন হামলা
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৪৪ এএম, ৭ জানুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার আপডেট: ০৩:৪৬ পিএম, ৭ জানুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি দিতে বুধবার (৬ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের আইন সভার ভবন বা পার্লামেন্ট ‘ক্যাপিটল’ভবনে চলছিল কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন। বলাই বাহুল্য ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সভাপতিত্বে সেটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধিবেশন। হঠাৎ করেই এসময় হামলাকারীরা ভবনের জানালা ভাঙচুর করা শুরু করে গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত ভবনটিতে। গুরুগম্ভীর পরিবেশ রূপ নেয় সহিংস পরিস্থিতিতে। জানা যায়, ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকরা কিছুতেই ট্রাম্পের জায়গায় জো বাইডেনকে মেনে নিতে পারছেন না। ভোটের ফল পাল্টে দিতে তাদের এ ধরনের মরিয়া চেষ্টা।
চুপচাপ বসে থাকেনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। উগ্র জনতাকে হটাতে পুরো ভবন অবরুদ্ধ করে ফেলে পুলিশ। এ সময় গুলিতে নিহত হন এক নারী। নারীর পরিচয় সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তেমন কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া নিহত আরও তিনজনের মৃত্যু হয় মেডিকেল এমার্জেন্সিতে।
আরও পড়ুন**পার্লামেন্টে হামলার ঘটনায় নিহত ৪, আটক ৫২
ইউএস ক্যাপিটল হিস্ট্রি সোসাইটি হামলার পর এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইউএস ক্যাপিটল শুধু একটি ভবন নয়, এটি মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতিমূর্তি। এখানে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর আমাদের সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্রের মৌলিক স্মারক।’
ইউএস ক্যাপিটল হিস্ট্রি সোসাইটির বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ‘ক্যাপিটল’ভবনে এই হামলা নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন। ২০৬ বছর পর দেশটিতে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। এর আগে ১৮১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে যুদ্ধের সময় হামলা হয়েছিল পার্লামেন্টে। যে যুদ্ধ ‘ওয়ার অব ১৮১২’ নামে পরিচিতি। যা চলেছিল ১৮১৫ সাল পর্যন্ত।
আরও পড়ুন**যুক্তরাষ্ট্র পার্লামেন্টে হামলায় বিশ্বনেতাদের নিন্দা
**ক্যাপিটল ভবনে হামলা: ট্রাম্পকে ক্ষমা চাইতে বললেন বাইডেন
তবে পার্থক্য হলো ১৮১৪ সালের হামলা ঘটনাটি ঘটেছিল দুইটি দেশের যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে। সে সময় যুক্তরাজ্যের উপনিবেশের অধীন ছিল কানাডা। আর আপার কানাডার রাজধানী ইয়র্কে মার্কিন হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রতিশোধ নিতেই ওয়াশিংটনে ব্রিটিশ বাহিনী এ হামলা চালিয়েছিল। আর এবারের ঘটনাটি খোদ মার্কিনিদের হাতে।
হামলার ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় অধিবেশন। সে সময় হলওয়েগুলো দিয়ে ট্রাম্প সমর্থকদের ছোটাছুটি ও বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে খোঁজাখুঁজি ও তাণ্ডবে হাঙ্গামা ও বিশৃঙ্খলায় এক নজিরবিহীন দৃশ্যের অবতারণা হয়। হামলার ঘটনার পর পুলিশ ক্যাপিটল ভবন থেকে কড়া নিরাপত্তায় আইনপ্রণেতাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়। ট্রাম্প-সমর্থকদের হটিয়ে দিতে ঘন্টা তিনেক ধরে চলে অভিযান।
আরও পড়ুন**শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পদত্যাগের পথে
এ সময় ট্রাম্প-সমর্থকেরা পুলিশের উপরও হামলা করে। হামলাকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।
স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ক্যাপিটল ভবনকে নিরাপদ ঘোষণা করে পুলিশ। পরে আইনপ্রণেতারা ফিরে আসলে আবার শুরু হয় অধিবেশন।
একে ট্রাম্পের মাস্তানি উল্লেখ করে দেরি না করে প্রকাশ্যে তাকে ক্ষমা চাইতে বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ট্রাম্প গণতন্ত্রকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন উল্লেখ করে তার নিন্দা-সমালোচনায় সরব হয়েছে বিশ্বনেতারা। সেইসাথে একে একে শীর্ষ কর্মাকর্তাদের পাশ থেকে হারাতে বসেছেন ট্রাম্প।