ভ্যাকসিন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ গুরুত্ব
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই ও ভ্যাকসিনের জন্য ৬৭৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ একনেকে
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৪:৪৮ পিএম, ৫ জানুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার আপডেট: ০৬:৪৪ পিএম, ৫ জানুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ক্রয়, সংরক্ষণ এবং বিতরণ প্রকল্পের জন্য মোট ৬ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত এই প্রকল্প অনুমোদনের ফলে করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহ এবং দেশব্যাপী তা প্রয়োগের পথে আর্থিক বাধা দূর হলো।
প্রকল্পটি জুনে প্রথম অনুমোদনের সময় ব্যয় ছিল ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫২ লাখ কোটি টাকা। মঙ্গলবারের বৈঠকে ভ্যাকসিন আমদানির জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধন করা হলো। অর্থাৎ অনুমোদন পেল মোট ৬ হাজার ৬৮৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ঋণ দিচ্ছে ৬ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। বাকি ১৭২ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
'কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস'
প্রথম অনুমোদন: ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫২ লাখ
নতুন বরাদ্দ: ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি
মোট অনুমোদন : ৬ হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৯ লাখ
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান: ১৭২ কোটি টাকা
বিশ্বব্যাংক ও এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক এআইআইবি ঋণ দিচ্ছে: ৬ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একনেকের নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রী যুক্ত হন।
সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেছেন, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৩ হাজার ৩০ কোটি টাকা খরচ হবে ভ্যাকসিন কিনতে, বাকি অর্থ পর্যায়ক্রমে 'কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস' (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় খরচ হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, গত জুনে প্রকল্পটি যখন প্রথম অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তখন ভ্যাকসিন আমদানির বিষয়টি ছিল না। এই প্রকল্পে নতুন করে ভ্যাকসিন আমদানির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ভ্যাকসিনকে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। অর্থের যোগান হয়েছে। ভ্যাকসিন সংরক্ষণ সুব্যবস্থাও আছে। বন্টনের বিষয়ের সরকার সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে।
অনুমোদিত প্রকল্পে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের আওতায় ৪৩টি জেলা সদর হাসপাতালে ২০ শয্যাবিশিষ্ট আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করা হবে। ১০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ শয্যাবিশিষ্ট ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) স্থাপন করা হবে। ২৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর মেশিন বসানো হবে।
কারা পাবেন-
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভ্যাকসিন পাওয়ার অগ্রাধিকারে আছেন সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মী, বন্দরের কর্মী, ব্যাংকের কর্মী এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মী।
এই তালিকায় আরও রয়েছেন প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য, শ্রমঘন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক, শ্রমঘন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক, এতিমখানা, পরিবহনশ্রমিক বিদেশগামী ও বিদেশফেরত সব ব্যক্তি।
ভ্যাকসিন বৃত্তান্ত-
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ সংগ্রহের জন্য গত ৫ নভেম্বর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) ও বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে সরকার।
এদিকে সোমবার (৪ জানুয়ারি) সেরামের ভ্যাকসিন আমদানি ও ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে সরকারের ওষধ প্রশাসন। মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভ্যাকসিন দেওয়ার একটি খসড়া নীতিমালা তারা চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এটি অনুমোদন দিলেই কাজ শুরু করা যাবে।
চুক্তি অনুযায়ী অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার এক মাসের মধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউট ৫০ লাখ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে বেক্সিমকোর মাধ্যমে। এরপর প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ভ্যাকসিন দেবে। এভাবে মোট তিন কোটি ভ্যাকসিন কেনা হবে সেরাম থেকে।
সেরামের ভ্যাকসিন রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের নিষেধাজ্ঞার খবরের মধ্যেই সোমবার বাংলাদেশ সরকার ও বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চুক্তির অনুযায়ী বাংলাদেশ সময়মতোই ভ্যাকসিন পাবে। মঙ্গলবার সেরামের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, তাদের তৈরি ভ্যাকসিন রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত সরকারের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
এদিকে, 'কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস' প্রকল্পসহ মঙ্গলবারের সভায় মোট ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৫৬৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
প্রকল্পগুলোর নাম-
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘COVID-19 Emergency Response and Pandemic Preparedness (প্রথম সংশোধিত)।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের ‘জেলা পর্যায়ে আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ (প্রথম পর্যায়)।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘সুন্দরবন সুরক্ষা’।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ‘ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগকালে অনুসন্ধান, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ (তৃতীয় পর্যায়)’।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘জেলা মহাসড়কগুলোর যথাযথ মান ও প্রশস্ততা উন্নীতকরণ-সিলেট জোন (প্রথম সংশোধিত)।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড (তৃতীয় সংশোধিত)।