অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ভ্যাকসিন রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা, অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১১:৪৯ এএম, ৪ জানুয়ারি ২০২১ সোমবার   আপডেট: ১২:৪৪ পিএম, ৪ জানুয়ারি ২০২১ সোমবার

সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদার পুনাওয়ালার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি আরও বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও এখন পর্যন্ত কিছু জানা নেই। বিস্তারিত জানতে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে বলেও জানান আব্দুল মোমেন। 

আরও পড়ুন**অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের জরুরি অনুমোদন দিলো ভারত

যদিও দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছিল, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যুক্তরাজ্য ও ভারতে অনুমোদনের পর বাংলাদেশে ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে আর কোনো বাধা নেই। গত ডিসেম্বর থেকে সরকার জানিয়ে আসছিল, জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে এসে পৌঁছুবে। এদিকে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সেরাম ইন্সটিটিউট জানালো, আগামী মার্চ বা এপ্রিল মাস পর্যন্ত তারা স্থানীয় চাহিদা মেটাবে। এরপরই আগ্রহী দেশগুলোয় টিকা রপ্তানি করা হবে।
 

এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে পুনাওয়ালা বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, 
‘ভারতের ওষুধ প্রশাসন (ডিসিজিআই) ভ্যাকসিনটি জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু, তারা শর্ত দিয়েছে যে দেশটিতে ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন জনগোষ্ঠীর জন্যে ভ্যাকসিন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সেরাম ইনস্টিটিউট তা রপ্তানি করতে পাবে না, ফলে এই মুহূর্তে আমরা শুধু ভারত সরকারকে ভ্যাকসিন দিব।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আদর পুনাওয়ালা বলেছেন-
‘সরকারের সঙ্গে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আমরা ৫ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করতে পারবো বলে আশা করছি। আর দেড় মাসের মধ্যে ৭ থেকে ৮ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। 

আদার পুনাওয়ালার আরও জানিয়েছেন, খোলা বাজারে ভ্যাকসিন বিক্রি না করার শর্তও দেওয়া হয়েছে ভারতের সরকারের তরফ থেকে। সেইসাথে ভ্যাসকিন মজুদ বন্ধের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এর ফলে যেসব দেশ ভারত থেকে ভ্যাকসিন আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে পারে।

শনিবার (২ জানুয়ারি) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন-

‘বাংলাদেশ সরকার, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে সই হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সর্বোচ্চ ৫ ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ৪২৫ টাকায় পাওয়া যাবে। এবং চলতি মাসেই সেরাম ইনস্টিটিউট ৫০ লাখ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে বেক্সিমকোর মাধ্যমে। এরপর প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ভ্যাকসিন দেবে। এভাবে মোট তিন কোটি ভ্যাকসিন কেনা হবে সেরাম থেকে।’

আরও পড়ুন** চলতি মাসেই আসছে ভ্যাকসিন, প্রতি ডোজ ৪২৫ টাকা

একই দিনে অর্থাৎ শনিবার (২ জানুয়ারি) শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সাংবাদিকদের জানান-

'সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যুক্তরাজ্য ও ভারতে অনুমোদনের পর বাংলাদেশে ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে এখন আর কোনো বাধা নেই।ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার ভ্যাকসিন কেনার জন্য ৫০ লাখ ভ্যাকসিনের দাম বাবদ ৬০০ কোটি টাকা ব্যাংকে সেরাম ইন্সটিটিউটের অ্যাকাউন্টে জমা করার কথাও রয়েছে। বিনিময়ে সেরাম ইন্সটিটিউট একটা ব্যাংক গ্যারান্টি দেবে। এই ৫০ লাখ হলো প্রথম চালানের ভ্যাকসিন।’ 
 

আরও পড়ুন**৫০ লাখ ভ্যাকসিন কিনতে আজ ৬০০ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ

এর আগে ২১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভ্যাকসিন সম্পর্কিত আলোচনা হয়। পরে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন-

'আগামী মে থেকে জুন মাসের মধ্যে দেশে সাড়ে চার কোটি মানুষের জন্য করোনার ভ্যাকসিন আসবে। আগামী জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির প্রথমে ভ্যাকসিনের প্রথম চালান এসে পৌঁছুবে। প্রথম চালানের তিন কোটি ভ্যাকসিন দেয়া হবে দেড় কোটি মানুষকে।’
 

আরও পড়ুন**দেশে সাড়ে ৪ কোটি মানুষের ভ্যাকসিন মিলবে মে-জুনের মধ্যে

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ সংগ্রহের জন্য গত ৫ নভেম্বর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) ও বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে সরকার। ভারতে ভ্যাকসিনের জরুরি অনুমোদন পাওয়ায় বাংলাদেশও ভ্যাকসিনপ্রাপ্তিতে আরও অগ্রসর হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু ভারতের ভ্যাকসিন রপ্তানিতে এই নিষেধাজ্ঞায় শিগগিরই বাংলাদেশের ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে বড় ধরণের অনিশ্চয়তা তৈরি করলো।