অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

খুলে যাক শুদ্ধ রাজনীতির দুয়ার

তুষার আবদুল্লাহ, সাংবাদিক ও লেখক

প্রকাশিত: ০২:২৫ পিএম, ২ জানুয়ারি ২০২১ শনিবার   আপডেট: ১০:৫৩ পিএম, ২ জানুয়ারি ২০২১ শনিবার

তুষার আবদুল্লাহ

তুষার আবদুল্লাহ

নতুন এলেও পুরাতন কথা ফেলতে পারি না। কারন পুরাতন আবদার পূরণ না হলে বারবার তাতো চাইবোই। ঘ্যানঘ্যান করবোই শিশুর মতো। বায়না করলে অভিভাবকরা নানা শর্ত জুড়ে দেন। দুষ্টুমি কম করা, ঠিক মতো খাওয়া, পড়া, টিভি-মোবাইল কম দেখা, এমন অনেক শর্তপূরণ হলে কখনও কখনও আবদার মেটানো হয়। আবার কখনও দীর্ঘদিন অপেক্ষার একটা লগ্ন ঠিক করে দেয়া হয়। এমনও হয় যে আবদার শেষ পর্যন্ত কখনই পূরণ হয় না। আবার হলেও সেটা আংশিক। তৃপ্তি মেটে না। নানা হৈ হুল্লুরে সেই আবদার আসলে অপূর্ণই থেকে যায়।
 
আমার আবদারটিও তেমন, আংশিক মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অতোটুকু মেটাতে গিয়ে হৈ হুল্লুরে মজাটুকুও উপভোগ করতে পারিনি। 

রাষ্ট্র বা সরকারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলাম, রাজনীতির অনুশীলন ঘরের দরজা খুলে দেওয়া হোক। আদর্শিক রাজনীতির অলুশীলন না করতে করতে আমাদের রাজনীতিতে নেতৃত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। তরুণরা আদর্শের রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। রাজনীতি রূপ নিয়েছে ব্যক্তি কেন্দ্রিকতায়। রাজনীতি এখন ভোগ দখলের নীতি। তৃনমূল থেকে কেন্দ্র সর্বত্র এখন রাজনীতির বাইরের মানুষের দখলে। ব্যবসা সুরক্ষার স্বার্থে সকল স্তরেই বনিকদের এখন দাপট। রাজনীতির সকল পদের দিকে তাদের লোলুপ চোখ।
 
একই চোখ বিভিন্ন পেশাজীবীদেরও। নিজ পেশায় আধিপত্য বিস্তার করতে, টিকে থাকতে তারা ভিড় করছে রাজনীতিতে। তারা রাজনীতির ত্যাগী কর্মী ও নেতাদের সরিয়ে জায়গা করে নিচ্ছেন। অভিমানে ত্যাগী ও পরীক্ষিতরা দূরে সরে যাচ্ছেন। 

এই বাস্তবতায় রাজনীতির শুদ্ধ চর্চা ও নেতৃত্ব তৈরি করতে বিদ্যায়তনের ছাত্র সংসদ খুলে দেয়ার দাবি করে আসছিলাম আমরা অনেকেই। প্রায় তিন দশকে মরচে পরে যাওয়া তালা খুললো, তবে সেটি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের। মেনে নিয়েছিলাম এটি আংশিক আবদার পূরণ। প্রচ্ছন্ন ভাবে শর্ত জুড়ে দেওয়া আছে। ঠিকঠাক মতো চললে ধীরে ধীরে অন্যগুলোও খুলে দেওয়া হবে। 

ভোট হলো। নানা মেরূকরণ ও সংকট পেরিয়ে ডাকসু নতুন নেতৃত্ব পেলো। কিন্তু গোলমাল, বিশৃংখলা বা ষড়যন্ত্র মিটলো না। দীর্ঘদিন অচল থাকা ছাত্র সংসদ পুনরায় চালু হয়ে একটু ঝামেলায় পড়বে স্বাভাবিক। কারণ তারা শুদ্ধ রাজনৈতিক চর্চার ধারাবাহিকতায় নেতৃত্ব পাননি। তাদের একটু গুছিয়ে নেয়ার সময়ের প্রয়োজন ছিল। একইভাবে দরকার ছিল অভিভাবকত্বের। কিন্তু সেখানে নানা বিভেদ ও দ্বন্দ্ব তৈরি হতে দেখলাম। এর কিছুটা যে ছাত্র রাজনীতি সুষ্ঠু ধারায় ফেরার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তা অস্বীকার করা যাবে না।

আমরা স্বৈরাচার পতন পরবর্তী সময়েও ছাত্র সংগঠন গুলোতে নানা ষড়যন্ত্র এবং দমন পীড়ন সইতে দেখেছি। বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন ছাত্র শিবিরের পীড়নের শিকার হতে দেখেছি ছাত্র লীগ এবং বাম সংগঠন গুলোকে। ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরেরও বিরোধ দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। বহিরাগততে ঠাসা ছিল ক্যাম্পাস। হল দখল পাল্টা দখলের লড়াই ছিল। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ছিল। সেশনজট ছিল। এসবের কোন কিছুই অস্বীকার করছি না।
 
পাশাপাশি প্রবলভাবে ছিল গণতন্ত্রের পক্ষে গগনবিদারী শ্লোগান। বলিষ্ঠ তরুণ কণ্ঠস্বর। নেতিবাচক দিক গুলোর জন্য ছাত্ররা দায়ী ছিল যতোটা , তার চেয়ে অধিক দায়ী ছিলেন তাদের রাজনৈতিক অভিভাবকেরা। কিন্তু সকল ব্যর্থতা, অন্যায়ের দায় চাপিয়ে দেওয়া হলো ছাত্রদের ওপর। শিক্ষক রাজনীতিও যে বিদ্যায়তনকে কলুষিত করলে সে কথা বলা হলো না। তাদের প্রকাশ্য রাজনীতি ঠিক চলল, চলছে।

রাজনীতি, রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিবীদরা গত তিন দশকে নানা বিপর্যয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে বড় দলগুলোকে সেই বিপর্যয়কে মোকাবেলাও করতে হচ্ছে, তবে সেই মূহুর্তগুলোতে তাদের নিঃসঙ্গ এবং অসহায় মনে হয়েছে। সংগঠনের নামধারীরা তাদের আশপাশে কিছু জোটে ঠিকই, কিন্তু তারা রাজনীতির বা ছাত্র সংগঠনের লেবাস নিয়ে এসে দাঁড়াতে পারে না। তাদের কণ্ঠে থাকে না আদর্শের বলিষ্ঠ শ্লোগান। রাজনীতির এই দুর্দিন থেকে বের হতে হলে বিদ্যায়তনের ছাত্র সংসদের দরজা খোলা রাখতেই হবে । সেখানে রাজনীতি ও সংস্কৃতির সমান্তরাল চর্চা হবে, হতেই হবে। ২০২১ এ তাই আবারো সেই পুরনো আবদার- ডাকসুর মতো অন্য বিদ্যায়তনেও খুলুক শুদ্ধ রাজনীতির দুয়ার।

তুষার আবদুল্লাহ : সাংবাদিক ও লেখক।