যাদের হারালাম ২০২০ এ
আমার এ ঘর শূন্য করে...
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৫:০৬ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার আপডেট: ০৭:০৭ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার
আমরা যে পৃথিবীকে জানতাম, চিনতাম তার পরিবর্তন হয়ে গেছে। করোনার দুঃসময়ে একের পর এক মৃত্যুশেল আমাদের প্রিয় মানুষদের, আমাদের কাছ থেকে পরপর ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের বিস্তার শেষ হওয়ার পর নতুন আলো আসলেও, আর কোনোদিন পাওয়া যাবে না সেইসব মানুষদের। ভীষন বিষন্ন, বিমর্ষ মহামারীর বছরে বাংলাদেশ হারিয়েছে ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, কামাল লোহানী, মুর্তজা বশীর, আলী যাকেরের মতো আরও অসংখ্য গুণীজনদের।
জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
করোনায় জাতি হারিয়েছে বনস্পতিকে। তিনি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। এই মহাক্রান্তিকালে মনস্বী শিক্ষককে হারিয়ে বিপুল আক্ষেপে ভেসেছে জাতি। যে মানুষটির জীবন মিশে গিয়েছিল বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের উত্থান পতনময় বন্ধুর পথে, ইতিহাসের মানচিত্র থেকে সেই মানুষটির প্রস্থান হয়েছে ১৪ মে।
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী
তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। জন্ম ১৯৪৩ এর ১৫ নভেম্বর। কিন্তু বয়সের ভারকে তিনি তুচ্ছ করেছিলেন কর্মদ্দীপনায়। স্বাধীনতার পর এ দেশে যত বড় বড় ভৌত অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, তার প্রায় প্রতিটির সঙ্গেই জামিলুর রেজা চৌধুরী কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিলেন। যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে এবং পদ্মাসেতু নির্মাণের বিশাল প্রকল্পে। বুয়েটের একসময়ের এই অধ্যাপক ঘুমের মধ্যেই চলে যান এপ্রিলের ২৮ তারিখে।
কামাল লোহানী
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২০ জুন, তার জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন। ১৯৬১ সালে অন্য অনেকের সঙ্গে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনে তার ছিল দৃঢ় ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতারের সংবাদ বিভাগের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতা—সব ক্ষেত্রেই অবদান রেখেছেন কামাল লোহানী। মাঠে সাংস্কৃতিক আন্দোলন করেছেন, আবার কলমযোদ্ধাও ছিলেন। আজীবন কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে অবিচল থাকা মানুষটি ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদ ও দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।
সাইদা খানম
১৯৩৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী একুশে পদকপ্রাপ্ত সাইদা খানম ৮২ বছর বয়সে ১৮ আগস্ট মারা যান, ঘুমের মধ্যেই। বেগম পত্রিকা দিয়ে সাইদা খানম আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার ছবি ছাপা হয় অবজারভার, মর্নিং নিউজ, ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায়। আলোকচিত্রী হিসেবে দেশেও দেশের বাইরে তিনি খ্যাত ছিলেন। সত্যজিতের তিনটি ছবিতে আলোকচিত্রী হিসেবেও কাজ করেন তিনি।
অধ্যাপক আতফুল হাই শিবলী
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. আতফুল হাই শিবলী মারা গেছেন ২৯ ডিসেম্বর। অধ্যাপক আতফুল হাই শিবলী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও উপ-উপাচার্য ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর তিনি ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ছিলেন সিলেটের নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
নিলুফার মঞ্জুর-
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৬ মে মারা যান দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ ও সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুর। বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর স্ত্রী তিনি। শিক্ষাবিদ নিলুফার মঞ্জুর ইংরেজি মাধ্যমের সানবিমস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিজেদের বাসায়, ১৯৭৪ সালে। চার দশকের বেশি সময় আগে ১৫ জন শিক্ষার্থীর সেই ছোট বিদ্যালয়টিকে তিনি গড়ে তোলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে।
মুর্তজা বশীর
মুর্তজা বশীর অনেক দিন ধরেই হৃদরোগ, ফুসফুস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। শেষমেশ করোনায় সংক্রমিত হয়ে ১৫ আগস্ট মারা যান প্রখ্যাত ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে মুর্তজা বশীর। তার জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৭ আগস্ট। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর সদ্য বিকাশমান এই অঞ্চলের দ্বিধাগ্রস্ত শিল্পকলাকে যারা পর্যাপ্ত আস্থা ও উপাদান জুগিয়েছেন, তিনি অবশ্যই তাদের মধ্যে অন্যতম। শুধু তাই নয়, মুর্তজা বশীর একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাষাসংগ্রামী, গবেষক ও ঔপন্যাসিক।
বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর-
২৩ মার্চ চলে যান শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। বার্ধক্যজনিত সমস্যায় দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। তার জন্ম ১৯৩৬ সালের ৯ জানুয়ারি। ৫০ দশকের গোড়া থেকে যে মানুষেরা সাহিত্যাঙ্গনে উজ্জ্বল হয়ে বিরাজ করছেন নিজের সৃজনশীল ক্ষমতা নিয়ে, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। সাহিত্যাঙ্গনে তার অবদান রয়েছে কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিল্প সমালোচনা, সাহিত্য সম্পাদনা-সমালোচনার ক্ষেত্রে।
মনজুরে মাওলা
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক, কবি ও প্রাবন্ধিক মনজুরে মওলাও মারা যান করোনায় ২০ ডিসেম্বর। জন্ম ১৯৪০ সালের ১ অক্টোবর। যিনি জীবনের শেষ দিনগুলোতেও কর্মক্ষম ছিলেন, লিখে গেছেন বিচিত্র বিষয়ে। লেখালেখি, সম্পাদনা, গ্রন্থ পরিকল্পনা—নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন তিনি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করা মানুষটির সব ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পরিচয়টি।
ড. আলী আসগর
১৬ জুলাই ৮৪ বছর বয়সে জীবনযাত্রা সমাপ্ত করেন ড. আলী আসগর। তার মৌলিক পরিচয় তিনি একজন বিজ্ঞানমনস্ক অসাম্প্রদায়িক মানুষ। কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। দীর্ঘকাল তিনি জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। শিশুদের বিজ্ঞানমনস্ক করতে গড়ে তুলেছেন ‘বিজ্ঞান খেলাঘর’।
রশীদ হায়দার
১৩ অক্টোবর মারা যান কথাসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক রশীদ হায়দার। ১৯৪২ সালের ১৫ জুলাইয়ে জন্ম নেওয়া একজন গবেষক রশীদ হায়দারের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক গবেষণামূলক কাজ। যার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ২০১৪ সালে একুশে পদক পান। এই সাহিত্যিক ছিলেন বাংলা একাডেমির পরিচালক। রশীদ হায়দারের মৃত্যু দেশের অপূরণীয় ক্ষতি।
আবুল হাসনাত
সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘কালি ও কলম’ এর সম্পাদক আবুল হাসনাত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১ নভেম্বর। জন্ম ১৯৪৪ এর ১০ ডিসেম্বর। কবিতা, উপন্যাস, চিত্র-সমালোচনাসহ সাহিত্যের নানা বিভাগে পদচ্ছাপ রেখেছেন আবুল হাসনাত। তিনি পরিচিতি লাভ করেছেন একজন বিচক্ষণ ও সংবেদনশীল সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে।
কবি মুশাররফ করিম
বিশিষ্ট সাংবাদিক, সংগঠক ও কবি মুশাররফ করিম মারা যান বছরের শুরুতেই জানুয়ারির ১১ তারিখে, বার্ধক্যের নানান অসুখবিসুখে ভুগে। তার জন্ম ১৯৪৬ সালের ৯ জানুয়ারি। কবি মুশাররফ করিম ‘দৈনিক দেশ’ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন পরে ‘দৈনিক দিনকাল’ পত্রিকার মফস্বল সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মুশাররফ করিম।
সঙ্গীতজ্ঞ আজাদ রহমান-
বাংলাদেশের খেয়াল গানের জনক, প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আজাদ রহমান মারা যান ১৬ মে। জন্ম ১৯৪৪ এর ১ জানুয়ারি। আজাদ রহমান সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে খ্যাতিমান। পাশাপাশি তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও খেয়াল গানের চর্চা করতেন। তাকে বাংলাদেশের খেয়াল গানের জনকও বলা হয়। বাংলা একাডেমি থেকে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা সঙ্গীত বিষয়ক বই ‘বাংলা খেয়াল’।
সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী-
বরেণ্য সংগীতব্যক্তিত্ব আলাউদ্দীন চলে যান ৯ আগস্ট, তার জন্ম ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর। আলাউদ্দীন আলী ফুসফুসের প্রদাহ ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যায় ভুগছিলেন দীর্ঘদিন। তিনি একই সঙ্গে সুরকার, সংগীত পরিচালক, বেহালাবাদক ও গীতিকার। লোকজ ও ধ্রুপদি গানের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা আলাউদ্দীন আলীর সুরের নিজস্ব ধরন বাংলা সংগীতে এক আলাদা ঢং গড়ে ওঠে প্রায় চার দশক ধরে।
এন্ড্রু কিশোর
দীর্ঘ ১০ মাস ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে হেরে যান জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর, চলে যান ৬ জুলাই নিজের শহর রাজশাহীতে। বাংলা গানের এই কণ্ঠশিল্পী ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামে পরিচিত। জন্ম ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর। বাংলাদেশের আধুনিক ও চলচ্চিত্রজগতের কালজয়ী অনেক গান তার কণ্ঠে সমৃদ্ধ হয়েছে।
মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ
মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ গত ৩ অগাস্ট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বিটিভির জনপ্রিয় সব নাটকের সঙ্গে জাড়িয়ে আছে বরকত উল্লাহর নাম। তার নির্মিত তুমুল জনপ্রিয় নাটকের মধ্যে আছে ‘সকাল-সন্ধ্যা’, ‘ঢাকায় থাকি’, ‘কোথাও কেউ নেই’। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বাস করা এই প্রযোজকের স্ত্রী বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকত উল্লাহ ও তার মেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিজরী বরকত উল্লাহ।
মান্নান হীরা
হৃদরোগে ২৩ ডিসেম্বর নাট্যকার মান্নান হীরা মারা যান। জন্ম ১৯৫৬। তিনি প্রধানত নাট্যকার হলেও মঞ্চের অন্যান্য শাখার সঙ্গেও তার নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সব সময় তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন মঞ্চনাটক, টেলিভিশন ও পথনাটক রচনায়।
এস কে ফিরোজ
নাট্যদল ‘থিয়েটার’–এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে অভিনয়ে কে এস ফিরোজের পথচলা শুরু। করোনায় তিনি মারা যান ৯ সেপ্টেম্বর। এই দলের হয়ে তিনি অভিনয় করেছেন ‘সাত ঘাটের কানাকড়ি’, ‘কিং লিয়ার’ ও ‘রাক্ষসী’ নাটকে।
আলী যাকের-
২৭ নভেম্বর করোনায় চলে যান বরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের। জন্ম ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর। মঞ্চে তিনি বিদ্রোহী নূরলদীনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে রোমহর্ষে জেগে উঠত দর্শক। এ রকম নানা চরিত্রে অভিনয় করে তিনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য উচ্চতায়। স্বাধীনতা-পরবর্তী মঞ্চনাটকের অন্যতম সংগঠক ও সফল নাট্যনির্দেশকও ছিলেন আলী যাকের। সংস্কৃতিজগৎ ছাপিয়ে তার মেধার দ্যুতি ছড়িয়েছিল বিজ্ঞাপনী খাতে। একুশে পদকসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আব্দুল কাদের
২৬ ডিসেম্বর অভিনেতা আবদুল কাদের মারা গেছেন। ক্যান্সারে ভুগছিলেন, পরে তিনি করোনায়ও আক্রান্ত হন। জন্ম ১৯৫১। থিয়েটারের প্রায় ৩০টি প্রযোজনার এক হাজারের বেশি প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন। আর টেলিভিশনে দুই হাজারের বেশি নাটক। আজ থেকে ২৬ বছর আগের কথা ১৯৯৪ সালে সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে তিনি বদি চরিত্রে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। প্রায় তিন দশক পরেও সেই নাম এখনও দর্শকদের মন থেকে মুছে যায়নি।
সাদেক বাচ্চু
করোনায় ২৪ সেপ্টেম্বর মারা যান অভিনেতা সাদেক বাচ্চু। জন্ম ১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারি। মহিলা সমিতির মঞ্চে এক নাটকে সাদেক বাচ্চুর অভিনয় দেখে তাকে বিটিভিতে ডেকে নেন প্রযোজক আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। তার অভিনীত নাটকের সংখ্যা হাজারের বেশি। সুনাম কুড়িয়েছেন চলচ্চিত্রেও।
ইশরাত নিশাত
বাংলাদেশের থিয়েটার অঙ্গনের পরিচিত মুখ ইশরাত নিশাত। মারা গেছেন ২০ জানুয়ারিতে, হৃদরোগে। প্রয়াত অভিনেত্রী নাজমা আনোয়ারের মেয়ে ইশরাত নিশাত ঢাকার মঞ্চ নাট্যাঙ্গনে ‘বিদ্রোহী কণ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অনেক নাটকে ও আবৃত্তি প্রযোজনায় মঞ্চ ও আলোক নির্দেশকের কাজ করে সংস্কৃতি অঙ্গনে তিনি নিজেকে করে তুলেছিলেন অনন্য।
ব্যারিস্টার রফিকুল হক
করোনার সঙ্গে লড়াই করে ২৪ অক্টোবর চলে যান আইনপেশার দেশবরণ্য ব্যক্তিত্ব, আইনের বাতিঘর ব্যারিস্টার রফিকুল হক। ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বরে তার জন্ম, বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সুবর্ণ ক্লিনিক। ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা ছিল তার। আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ২৫টিরও বেশি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন এই আইনজ্ঞ।
মাহবুবে আলম
করোনায় এই দেশ হারিয়েছে প্রধান আইনি কর্মকর্তাকে। ২৭ সেপ্টেম্বর মারা যান এই আইনজ্ঞ। জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। আইনজীবী মাহবুবে আলম ১৫তম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি। আমৃত্যু তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন মাহবুবে আলম। এছাড়া সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম, ত্রয়োদশ ও ষোড়শ সংশোধনী মামলা পরিচালনাও করেন তিনি।
চিত্তরঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত)
২৫ আগস্ট সি আর দত্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি তার জন্ম। তিনি মুক্তিযুদ্ধে ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। আমৃত্যু বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
আবু ওসমান চৌধুরী
১৯৩৬ সালে ১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী করোনায় প্রাণ হারান ৫ সেপ্টেম্বর। তিনি মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহসভাপতি।
জিয়াউদ্দিন তারিক আলী
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারিক আলী মারা যান ৭ সেপ্টেম্বর, করোনায়। তার জন্ম ১৯৪৫ এ। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন দৃষ্টিনন্দন ভবনের সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। একাত্তরে যে গানের দল ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিল, সেই 'মুক্তির গান'-এর দলের সদস্য ছিলেন জিয়াউদ্দিন তারিক।
রাহাত খান
কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাহাত খান মারা যান ২৮ আগস্ট। জন্ম ১৯৪০ এর ১৮ ডিসেম্বর। বার্ধক্যের কারণে রাহাত খান বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন, তার হৃদরোগও ছিল। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় তিনি ষাটের দশক থেকে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে পান একুশে পদক আর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান ১৯৭৩ সালে।
খন্দকার মনীরুজ্জামান
দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, কলামিস্ট খন্দকার মুনীরুজ্জামান করোনাক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৪ নভেম্বর। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র সাপ্তাহিক একতায় মুনীরুজ্জামানের সাংবাদিকতার শুরু। পরে রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী কলাম লেখক হিসেবে তিনি পরিচিতি পান।
মোস্তফা কামাল সৈয়দ
বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত উপমহাপরিচালক, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির উপদেষ্টা (অনুষ্ঠান), এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ মারা যান ৩১ মে। একজন স্বনামধন্য টিভি প্রযোজক, নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা, আবৃত্তিকার ও পরিচালক হিসেবেও পরিচিতি ছিল মোস্তফা কামাল সৈয়দের। বিটিভির উপমহাব্যবস্থাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
হুমায়ুন কবীর খোকন
দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক হুমায়ুন কবীর খোকন মারা গেছেন করোনায়, ৯ এপ্রিল। ঢাকায় বৃহত্তর কুমিল্লা সাংবাদিক সমিতির সভাপতি হুমায়ুন কবীর খোকন আগে আমাদের সময়সহ বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন।
আবদুল মোনেম
দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল মোনেম ৩১ মে ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। জন্ম ১৯৩৭ সালের ৫ জানুয়ারি। ১৯৫৬ সালে আবদুল মোনেম নিজের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। আবদুল মোনেম লিমিটেডের নির্মাণ, খাদ্য, পানীয়, ওষুধ, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নানা খাতে ব্যবসা রয়েছে।
লতিফুর রহমান
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, দ্য ডেইলি স্টার’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান ১ জুলাই ৭৫ বছর বয়সে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে মারা যান। জন্ম ১৯৪৫ সালের ২৮ আগস্ট। লতিফুর রহমান একজন বিরল ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তা। স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় অপরিসীম ভূমিকা ছিল প্রয়াত এই বিজনেস টাইকুনের।
এম এ হাসেম
২৪ ডিসেম্বর করোনায় দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গ্রুপ পারটেক্স স্টার গ্রুপের কর্নধার এবং সাবেক সংসদ সদস্য এম এ হাশেম মারা গেছেন। এম এ হাশেম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে বিএনপি'র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিছুদিন আগে রাজনীতি থেকে অবসর নেন এই শিল্পপতি ও রাজনীতিবিদ।
নুরুল ইসলাম বাবুল
করোনায় ২৩ জুলাই যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল মারা গেছেন। বস্ত্র, রাসায়নিক, চামড়া, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিকস, বেভারেজ, টয়লেট্রিজ উৎপাদন করছে এ গ্রুপটি। দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন এই গ্রুপের মালিকানাধীন।
ফুটবলার বাদল রায়
ক্যান্সারের সাথে লড়ে দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই তারকার মৃত্যু হয় ২২ নভেম্বর। জন্ম ১৯৫৭ সালের ৪ জুলাই। ১৯৮১ ও ১৯৮৬ সালে মোহামেডানের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালে টানা তিন বছর পর মোহামেডানের লিগ জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন বাদল রায়। খেলা ছাড়ার পর মোহামেডানের ম্যানেজার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার।
সেলিম আহমেদ
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৩ ডিসেম্বর মারা যান অভিনেতা, শিল্পনির্দেশক ও প্রচ্ছদশিল্পী সেলিম আহমেদ। আশির দশক থেকে প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন সেলিম। আর অভিনয়জীবনে তিনি একক, ধারাবাহিক নাটক ছাড়াও বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন।
মহিউদ্দিন বাহার
জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ খ্যাত অভিনেতা মহিউদ্দিন বাহার মারা যান ১৪ সেপ্টেম্বর। অনেকদিন ধরে তিনি হার্ট ও কিডনিসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন নাট্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৬ সালে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ছোটদের সিরিজ ‘রোজ রোজ’-এ প্রথম অভিনয় করেন মহিউদ্দিন বাহার।
ড.সাদাত হুসাইন
গত ২৩ এপ্রিল মারা যান সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সাদাত হুসাইন। কিডনিসহ নানা রকমের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছাড়াও তিনি শিক্ষাসচিবসহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।
শুদ্ধানন্দ মহাথেরো
বাংলাদেশি বৌদ্ধদের অন্যতম প্রধান ধর্মগুরু বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি ও ঢাকা ধর্মরাজিক মহাবিহারের অধ্যক্ষ শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর মৃত্যু হয় গত ২০ মার্চ। সমাজ সেবায় মহান একুশে পদকপ্রাপ্ত মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কারসহ নানা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদকে ভূষিত এ সংঘনায়কের জন্ম ১৯৩৩ সালের ১৫ জানুয়ারি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেন। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই অসহায় ছিন্নমূল শিশুদের নিজ ধর্মপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দেন। পরে ঢাকার কমলাপুর বৌদ্ধবিহারে একটি বিশাল অনাথাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।
হায়দার আনোয়ার খান জুনো
কমিউনিস্ট নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক হায়দার আনোয়ার খান জুনো মারা যান ২৯ অক্টোবর। জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের সময় গেরিলা দলে ছিলেন হায়দার আনোয়ার। তিনি বোমা তৈরির কাজ করতেন। প্রতিরোধ যুদ্ধেও অংশ নেন এই গেরিলা।
দেখুন ভিডিও স্টোরি: