৫ জাহাজে ১৮০৪, ভাসানচরের পথে রোহিঙ্গারা
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ১১:১৩ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার আপডেট: ০২:২২ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার
দ্বিতীয় দফায় স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাচ্ছেন ১,৮০৪ জন রোহিঙ্গা। নৌবাহিনীর ৫টি জাহাজে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের। মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের বোটক্লাব থেকে তারা নৌবাহিনীর এলসিইউ (ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটি) চড়ে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তাদের তত্ত্বাবাধনে আছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড।
আরও পড়ুন**ভাসানচরমুখী রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামে ট্রানজিট ক্যাম্পে
সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) রাত ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে রোহিঙ্গা বহনকারী ১৩টি বাস পতেঙ্গা বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে পৌঁছে। বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্টে রাতে রোহিঙ্গাদের রাখা হয়। রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দলে ৪২৭টি পরিবারের ১ হাজার ৮০৪ জন নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে।
প্রথম ধাপে দেড় হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়ার ২৫ দিনের মাথায় দ্বিতীয় ধাপে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ এলাকা থেকে ১৩টি বাসে চড়ে চট্টগ্রামের আসেন তারা।
আরও পড়ুন**রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে দ্বিতীয় যাত্রা শুরু
এর আগে রবিবার বিকেলে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যেতে উখিয়া কলেজ মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়। ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা গতকাল বিকেল ৪টা থেকেই ট্রানজিট পয়েন্টে আসতে শুরু করে। সকালেও অনেকে এসে যোগ দেন।
এর আগে ৩ ডিসেম্বর রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু কর সরকার। সেবার ৮টি জাহাজে করে ১৬৪২ জন রোহিঙ্গা নারী-শিশু ও পুরুষ ভাসানচরে পৌঁছান। সেখানে পৌঁছে গোছানো সাজানো আবাস দেখে স্বস্তি প্রকাশ করেন রোহিঙ্গারা।
নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে সরকার। মেঘনা মোহনার দ্বীপে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন**ভাসানচরে পৌঁছে খুশি রোহিঙ্গারা, মোনাজাত ও দোয়া
মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে সর্বপ্রথম নমুনা হিসেবে ভাসানচরে নিয়ে রাখা হয়। এরপর গেল ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি চরটি দেখতে যান। তারা ফেরার পর তাদের কথা শুনে রোহিঙ্গাদের একাংশ ভাসানচরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারপর স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ভাসানচর-
১২০টি ক্লাস্টার গ্রাম নিয়ে তৈরি ভাসান চর ১ লাখ রোহিঙ্গার আবাসনের জন্য প্রস্তুত। বিদ্যুৎ ও সোলার প্যানেল, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট এবং মোবাইল ফোনের টাওয়ারসহ ভবনগুলো যে কাউকে অবাক করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বাড়িগুলো মাটির চার ফুট উপরে কংক্রিটের ব্লক দিয়ে তৈরি। পুরো আবাসন সাইটটির নিরাপত্তায় রয়েছে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা সুরক্ষা বাঁধ। এছাড়াও রয়েছে চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, দুটি স্কুল ও তিনটি মসজিদ।
জাতিসংঘ নির্ধারিত আকারেরও বড় মাথা গোঁজার ঠাঁই এই দ্বীপ। সৌরবিদ্যুৎ জোগাবে আলো আর পানি। রান্নায় সাশ্রয়ী আর পরিবেশবান্ধব চুলা। শিশুদের জন্য স্কুল, খেলার মাঠ। কক্সবাজারের ক্যাম্পের তুলনায় এমন অন্তত ১৬টির বেশি সুবিধা নিয়ে ১ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থীর জন্য অপেক্ষা করছে ভাসানচর, যাদের মধ্যে ১৬৪২ জন শুক্রবার পৌছালেন।
তবে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আপত্তি রয়েছে। সাগরের মাঝে বিচ্ছিন্ন ওই দ্বীপে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে রোহিঙ্গারা কতটা নিরাপত্তা পাবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।