অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯৪

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:০৫ পিএম, ২৯ মার্চ ২০২৫ শনিবার  

মিয়ানমারে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে এক হাজার ৬৭০ জন। 

শনিবার (২৯ মার্চ) আল জাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুযায়ী, শুক্রবার দুপুর দুপুর ১২টা ২১ মিনিটে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর কেন্দ্র ছিল মিয়ানমারের মান্দালয় শহর থেকে কমপক্ষে ১৭ কিলোমিটার দূরে। উৎপত্তিস্থল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, কম্বোডিয়ায়ও কম্পন অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের ১২ মিনিট পর ৬.৪ মাত্রার একটি আফটার শক হয়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশটির রাজধানী নাইপিডোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেখানে কমপক্ষে ৯৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও, সাগাইংয়ে ১৮ জন ও মান্দালয়ে ৩০ জন নিহত হন।


এদিকে জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদ ধসে পড়ে কমপক্ষে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। 
থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের একটি নির্মাণাধীন ভবনে শতাধিক শ্রমিক কাজ করছিলেন। তবে ভুমিকম্পের সময় ভবনটি ধসে পড়ে অন্তত ৯০ জন নিখোঁজ হয়েছেন। এতে তিনজনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। 

মিয়ানমারের সামরিক সরকার শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিপর্যস্তের জন্যে ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছে। সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইং ভূমিকম্পের পর বলেন, মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করতে চাওয়া যে কোনো দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করতে আমরা প্রস্তুত। সামরিক শাসনের কারণেই আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মিয়ানমারের জন্য এটি একটি বিরল ঘোষণা। 

সেনা মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেন, আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যত দ্রুত সম্ভব মানবিক সহায়তা দিক।

জাতিসংঘ ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর তাদের আঞ্চলিক সহায়তা কার্যক্রম সক্রিয় করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দুবাই থেকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। এদিকে ভারত ভূমিকম্প-পরবর্তী সর্বাত্মক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো বলেন, সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত ফ্রান্স। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাও ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করছে। তবে উদ্ধার কার্যক্রম এই ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রবেশের সীমাবদ্ধতায় ব্যাহত হচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ফুটেজে দেখা যায়, ভূমিকম্প শুরুর পর ব্যাংককে নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ে। সেই সময় আশপাশের লোকজন আতঙ্কে পালাচ্ছেন; ধুলোয়-ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে আশপাশ। হোটেলে থাকা অনেকেই গোসলের পোশাক ও সুইমিংয়ের পোশাক পরে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। 

থাইল্যান্ডের চিয়াং মাইয়ের বাসিন্দা ৭৬ বছরের সাই ভূমিকম্পের সময় একটি দোকানে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, আমি দ্রুত অন্য গ্রাহকদের সঙ্গে দোকান থেকে বের হয়ে যাই। এটা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। 

থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা এক্সে লিখেন, ভূমিকম্পের পর জরুরি বৈঠক করতে দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ফুকেটে তার নির্ধারিত সরকারি সফর স্থগিত করেছেন।

শুক্রবার বিকেলে ব্যাংকক থেকে আলজাজিরার প্রতিবেদক জানান, ভূমিকম্পের কারণে শহরটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। লোকজন রাস্তায় নেমে আসেন। কোনো মেট্রোরেলও চলাচল করছে না। শহরজুড়ে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। 

মিয়ানমারের অনেক স্থানেই ভূপৃষ্ঠে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক সড়কে ফাটল ও মাটি দেবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ভবনের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। 

এদিকে, মিয়ানমারের মান্দালয়ে উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য বলেন, আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি, মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এই সংখ্যা কয়েকশ হতে পারে। উদ্ধার অভিযান চলছে। 

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার জানিয়েছে, ছয়টি অঞ্চল– সাগাইং, মান্দালয়, ম্যাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য ও নাইপিডো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। 

মিয়ানমার দমকল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, তারা অনুসন্ধান শুরু করেছেন। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। 

ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মিয়ানমারের ইয়াংঙ্গুনে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সবকিছু কাঁপতে শুরু করলে আমরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। চোখের সামনে পাঁচতলা ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। আমার শহরের সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। কেউ ভবনের ভেতরে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছে না।

বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, ভূকম্পন মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রদেশ ইউনান ও সিচুয়ান প্রদেশেও অনুভূত হয়েছে। সেখানেও ভবন ধসে কয়েকজন আহত হয়েছেন। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকে মিয়ানমারে এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প আর হয়নি। বৈশ্বিক ভূকম্পন ঝুঁকির ‘রেড জোনে’ রয়েছে মিয়ানমার। সাগাইং ফল্ট লাইনের মধ্যে এর অবস্থান। এর আগে  ১৯৩০ ও ১৯৫৬ সালে সাগাইং ফল্টেই ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। এছাড়াও ২০১৬ সালে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মিয়ানমারে তিনজন নিহত হন।