অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

‘রিজভী পঙ্গু হলো, ইলিয়াস গুম হলো, আমি ১৩ বার জেল খাটলাম’

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:১৮ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার  

‘এক–এগারোর ভয়াবহ পরিণতি বিএনপির চেয়ে বেশি কেউ ভোগ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিএনপি ১৭ বছর রাজপথে লড়াই করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা এই অবদান অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন, তারা অপচেষ্টাই করছেন।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে মির্জা আব্বাস এ কথাগুলো বলেন।

তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পর্যন্ত এক–এগারোর নির্মম রোষানলে পড়েছিলেন। মির্জা আব্বাস এ–ও বলেন, যদি এ ধরনের কথাবার্তা বলতে থাকেন, তাহলে দেশ কোনো দিন গণতন্ত্রের চেহারা দেখবে না।

২০০৭ সালের সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক–এগারোর সরকার নামে পরিচিতি পেয়েছিল। এখন আবার দেশের রাজনীতিতে সেই এক–এগারোর সরকার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। কারণ, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিবের একটি মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে জুলাই–আগস্টের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কেউ কেউ এক–এগারোর সরকারের প্রসঙ্গ টেনেছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বুধবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নির্বাচন পরিচালনায় নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন হবে। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি সরকারে ছাত্রদের প্রতিনিধি থেকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগের বিষয়কে উল্লেখ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের 'নিরপেক্ষতা' নিয়ে প্রশ্ন তোলা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের 'নিরপেক্ষ' সরকারের দাবি আরেকটা এক-এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এরপর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের আরও অন্তত তিনজন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।

এক–এগারো নিয়ে নতুন করে আলোচনার এই প্রেক্ষাপটে প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকে বহু মত, বহু পথ, বহু টেলিভিশন, বহু সংবাদপত্র। ইদানীং কথা বলার সুযোগ পেয়ে বহু কথা বলা হয় বিএনপির বিরুদ্ধে। বহু লোক বহুভাবে কথা বলছেন। কী বলছেন? কেউ বলছে বিএনপি নাকি এক–এগারো আনার পাঁয়তারা করছে। তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, ২০০৭ সালে এক–এগারোর যে ভয়াবহ পরিণতি, বিএনপির চেয়ে বেশি কেউ ভোগ করে নাই।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপির সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে খালেদা জিয়া পর্যন্ত এই এক–এগারোর রোষানল থেকে রেহাই পাননি। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আর আজকে অনেকে বলেন, বিএনপি এক–এগারো আনার চিন্তা করছে। যদি কেউ কিছু বলে থাকেন আমি জানি না তার নিজ দায়িত্বে সেটা বলেছেন। বিএনপি এর কোনো দায়িত্ব বহন করে না।’

বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যদি আপনারা এ ধরনের কথাবার্তা বলে সংঘাত বিভেদ সৃষ্টি করেন, তাহলে কিন্তু দেশ কোনো দিন গণতন্ত্রের চেহারা দেখবে না।’ তিনি আরও বলেন, হঠাৎ করে নতুন মুখে কথা ফুটলে বাচ্চারা যেমন আবোলতাবোল বলতে থাকে, অনেক দল অনেক ব্যক্তি যারা আজকে কথাবার্তা বলছেন, তারা এমনভাবে কথাবার্তা বলছেন যে মনে হয় বিএনপি যেন আওয়ামী লীগের দোসর।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিএনপিকে আওয়ামী শিবিরের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, ভারতের দোষর আওয়ামী লীগের দিকে যারা বিএনপিকে ঠেলে দিতে চায়, আমি তাদেরকে বলবো আপনারা নিজের চেহারাটা আয়নায় দেখুন। নিজের অন্তরকে আয়না দিয়ে দেখুন। দেশবাসীকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বিএনপি ১৭ বছর রাজপথে লড়াই করেছে। রিজভী তো পঙ্গুই হয়ে গেছেন, অকালে বৃদ্ধ হয়ে গেছে ছেলেটা। আমার জেল হয়েছে ১১ বছর, আমার স্ত্রীর জেল হয়েছে ১৬ বছর, আমার ছোট ভাইয়ের ৮ বছর জেল হয়েছে।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অনেকে বলে ৫ আগস্ট যারা এনেছে, তারা সব কিছুর অধিকার রাখে। ঠিক আছে, অসুবিধা নাই তো কোনো। কিন্তু আমরা যারা ১৭ বছর রক্ত দিলাম। আমাদের যাদের ঘর পুড়ল, আমাদের সংসার পুড়ল, তাদের কী হবে? আমাদের ইলিয়াস আলী গুম হলো, আমাদের চৌধুরী আলম গুম হলো, আমাদের প্রায় ৫ হাজার লোক গুম হয়ে গেল, হাজার হাজার নেতা-কর্মী জেল খাটল আর আমরা এখানে যারা আছি, সবাই কমবেশি...আমি তো তেরোবার জেল খেটেছি।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘একজনের অবদানকে স্বীকৃত দিতে গিয়ে অন্যজনের অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় বাংলাদেশে নাই। যারা চেষ্টা করছেন, তারা অপচেষ্টাই করছেন। যারা চেষ্টা করেন, তারা জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। সবাই তো কথা বলে, বিএনপি বললেই অসুবিধা! বিএনপিকে যারা ভিন্ন শিবিরে ঠেলে দিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন, এটার পরিণতি কিন্তু ভালো হবে না। বরং দেশটাকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করবেন।’