পদত্যাগের জন্য ক্রমবর্ধমান চাপে সিটিমন্ত্রী টিউলিপ
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:২৭ পিএম, ৬ জানুয়ারি ২০২৫ সোমবার
ফ্ল্যাটসহ নানা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে এবার পদত্যাগের জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের সিটিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশের পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে জড়িত কেলেঙ্কারিতে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় এ চাপ বাড়ছে বলে দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
ওদিকে ডেইলি টেলিগ্রাফ বলছে, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে টিউলিপ সিদ্দিকের ফ্ল্যাট উপহার নেওয়ায় বিষয়টি টরি এমপিরাও খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন।
‘টিউলিপ সিদ্দিক আন্ডার রাইজিং প্রেসার টু রিজাইন ওভার প্রোপার্টি স্ক্যান্ডাল’ শিরোনামের প্রতিবেদনে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্বে থাকা টিউলিপ সিদ্দিকের নামে তার খালা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কিত একাধিক সম্পত্তির খবর বেরিয়ে এসেছে।
ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ টিউলিপের সম্পদের উৎস ব্যাখ্যা এবং তার খালার সঙ্গে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের যোগসূত্র স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারকে এই প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত তাকে (টিউলিপ) দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
যদিও স্টারমার সিদ্দিককে সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন। একজন সিনিয়র লেবার কর্মকর্তা অবশ্য দলীয় নেতৃত্বের পক্ষে তার (টিউলিপ) আর্থিক লেনদেনকে ‘রক্ষা করা কঠিন’ হয়ে পড়ছে এবং তার অবস্থান ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক কোনো ভুল করেননি বলে দাবি করলেও কীভাবে তিনি কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটের মালিক হলেন, এ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। মেইল অন সানডে জানিয়েছে, টিউলিপ প্রাথমিকভাবে দাবি করেছিলেন যে, ফ্ল্যাটটি তার বাবা-মা কিনেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বলা হয়, তার বাবা-মা আব্দুল মোতালিফকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মোতালিফ তাকে ফ্ল্যাটটি উপহার দিয়েছেন।
এদিকে ডেইলি টেলিগ্রাফ ‘টিউলিপ সিদ্দিক মাস্ট বি ইনভেস্টিগেটেড বাই ওয়াচডগ ওভার ডিকটেটর লিঙ্কস’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশে খালার রাজনৈতিক দলের মিত্রের কাছ থেকে নেওয়া টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনের ফ্ল্যাট ঘিরে অভিযোগের বিষয়টি টোরি এমপিরা প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতাবিষয়ক উপদেষ্টার মাধ্যমে তদন্তের দাবি তুলেছেন।
তারা বলছেন, ফ্ল্যাটটি তার খালার রাজনৈতিক দলের মিত্রের দেওয়া উপহার ছিল বলে যে দাবি করা হচ্ছে, সেটা স্যার লরি ম্যাগনাসের খতিয়ে দেখা উচিত।
টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যেও ডাউনিং স্ট্রিট রোববার রাতে জোর দিয়ে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী এখনো টিউলিপের পাশে আছেন।
দ্য মেইল জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক প্রথমে বলেছিলেন, এমপি হওয়ার আগে উত্তর লন্ডনে তিনি যে দুই বেডরুমের ফ্ল্যাটে ছিলেন, সেটি তার বাবা-মা কিনেছেন। মেইল বলেছে, ২০২২ সালে যখন প্রথমবার ফ্ল্যাটটি (বর্তমান বাজারমূল্য সাত লাখ পাউন্ড) নিয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহে লেবার পার্টির সূত্র সেই কথা পালটে দিয়ে বলে যে ফ্ল্যাটটি আসলে ‘পরিচিত’ কেউ টিউলিপের মা-বাবাকে উপহার হিসাবে দিয়েছেন।
হান্টিংডনের টোরি এমপি বেন ওবেস-জেক্টি বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক দিনগুলোয় আমরা টিউলিপ সিদ্দিক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা তাকে উপহার দেওয়া এবং তার পোর্টফোলিওতে থাকা সম্পত্তি সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য প্রকাশ হতে দেখেছি।’
‘গত মাসে বাংলাদেশে অর্থ আত্মসাতের তদন্তে তার নাম আসার রিপোর্ট ছাড়াও এখন এটা স্পষ্ট যে কিয়ের স্টারমারের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীকে অবশ্যই মন্ত্রীর মানদণ্ডের স্বাধীন উপদেষ্টার মাধ্যমে তদন্তের মুখোমুখি হতে হবে।’
লেবার পার্টির ঘনিষ্ঠ একজন গত সপ্তাহে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন যে টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা-মা ‘জীবনের চ্যালেঞ্জিং সময়ে একজন বন্ধুকে’ আর্থিক সহায়তা করেছিলেন। সেই ব্যক্তি পরবর্তী সময়ে কৃতজ্ঞতা হিসাবে টিউলিপের মালিকানায় তার ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছিলেন।
টিউলিপের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র টেলিগ্রাফকে বলেছে, ‘তিনি কীভাবে সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করেছিলেন, সে সম্পর্কে টিউলিপের আগের বক্তব্য পরিবর্তন হয়েছে। তিনি ত্রুটি বুঝতে পেরেই যে সাংবাদিক আগে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন তাকে বিষয়টি জানাতে চেয়েছেন।’