অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

জাতীয় পর্যায়ে সমতায় তারুণ্য প্রকল্প শুরু

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:১৬ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ সোমবার  

সমাজে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ, নেতিবাচক জেন্ডার ধারনার পরিবর্তন এবং যুব ও যুব-নেতৃত্বাধীন সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে ২৫ নভেম্বর, সোমবার জাতীয় পর্যায়ে উদ্বোধন করা হয়েছে ‘‘সমতায় তারুণ্য: ইয়ুথ ফর ইকুয়ালিটি” প্রকল্প। নেদারল্যান্ডসের সরকারের অর্থায়নে চার বছর মেয়াদী এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের আটটি বিভাগে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট। 

রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত প্রকল্প উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের মধ্যে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও জেন্ডার-সংবেদনশীল সাংবাদিকতা প্রসারে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ এবং সভাপ্রধান হিসেবে ছিলেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত মি. আন্দ্রে কারস্টেন্স; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খোরশেদ আলম; বাংলাদেশী লেখক, নাট্যকার, নির্মাতা ও সাংবাদিক পলাশ মাহবুব এবং জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান করভি রাকসান্দ।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ইনফ্লুয়েন্সিং, ক্যাম্পেইন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর নিশাত সুলতানা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ডিরেক্টর নীলিমা ইয়াসমিন যুবদের নিয়ে একটি সেশন পরিচালনা করেন, যেখানে যুব সমাজের প্রতিনিধিরা তাদের কথা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় যুব কাউন্সিল, যুব-নেতৃত্বাধীন সংগঠনের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, নির্মাতাসহ বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। 

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘‘তৃনমূল পর্যায়ে সাংবাদিকতা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। তাই জেলা ও উপজেলা পর্যায়েসাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দিতে কাজ করছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ। সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্ঠিতে তাদের ক্ষমতায়ন অত্যন্ত জরুরি এবং বর্তমানের সরকার সে লক্ষে কাজ করছে।”

অনুষ্ঠানের সভাপ্রধান কবিতা বোস বলেন, "মাতৃগর্ভে থাকতেই একজন কন্যা শিশু বৈষম্যের শিকার হতে শুরু করে। এ ধারা তার পরবর্তীজীবনে অব্যাহত থাকে। সমাজে সকল নারী-পুরুষ ও অন্যান্য পরিচয়ের মানুষ যেন সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বাস করতে পারে আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।”

তিনি আরো বলেন, "একটি সমাজে পদ্ধতিগত পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে একযোগে কাজ করা জরুরি। সমতায় তারুণ্য প্রকল্পটিও সেভাবে কাজ করবে । তারুণ্যের শক্তি অসীম, কিন্তু সেই শক্তি দিয়ে আমরা যেন অন্যের মধ্যে ভয় সৃষ্টি না করি, সে শক্তি মানুষের ভয় দূর করতে ব্যবহার করি।” 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডস সরকারের রাষ্ট্রদূত মিঃ আন্দ্রে কারস্টেন্স বলেন, "যুব সমাজ শুধু ভবিষ্যৎ নেতাই নয়, বরং ইতিবাচক পরিবর্তনের চালিকাশক্তিও। কমিউনিটি সেবা, উদ্ভাবন, নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশী যুবরা ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে।"তিনি আরো বলেন আগামী চার বছরে সমতায় তারুণ্য প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশী যুব, তাদের নেতৃত্বাধীন সংগঠন, জাতীয় যুব কাউন্সিল, গণমাধ্যমকর্মী, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, শিক্ষাবিদ এবং নীতিনির্ধারকদের সাথে কাজ করবে। 

বাংলাদেশী নাট্যকার, নির্মাতা ও সাংবাদিক পলাশ মাহবুব বলেন, জেন্ডার অসমতা আমাদের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত। মিডিয়া, বিজ্ঞাপন, কন্টেন্ট এখনও নারীদের দুর্বল হিসেবে চিত্রায়ন করছে। জেন্ডার বৈষম্য সমাজে একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা। এটি দূরীকরণে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। যুব কন্টেন্ট নির্মাতারা নিজেদের জায়গা থেকে ইতিবাচক জেন্ডার সংবেদনশীল কন্টেন্ট তৈরি করে এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারেন।”

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, "সোশ্যাল মিডিয়ার মনিটরিং ও মূল্যায়নের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা জরুরি। কিভাবে নতুন প্রজন্ম এই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। সমাজে ইতিবাচক জেন্ডার ন্যারেটিভ প্রচারের জন্য যুব সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, কন্টেন্ট নির্মাতাদের নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন করা প্রয়োজন।”

জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের এর চেয়ারম্যান করভি রাকসান্দ বলেছেন, "একটি প্রকল্প শেষ হওয়ার পরে স্থানীয় পর্যায়ে যুব-নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলোকে টিকিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা স্থানীয় পর্যায়ের সেসব  সংগঠনকে সক্ষম করে তুলছি যাতে তারা নিজেরাই তহবিল সংগ্রহ করতে পারে।“

সমাজে জেন্ডার সহিংসতা প্রতিরোধ, জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রচলিত নেতিবাচক জেন্ডার ধারনাগুলোর পরিবর্তন, এবং জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে যুব ও যুব নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলোকে আরো শক্তিশালী করতে কাজ করবে প্রকল্পটি। 

বাংলাদেশের ৮টি বিভাগে প্রকল্পের লক্ষিত জনগোষ্ঠী সর্বমোট ১৩,৫১৫ জন। এদের মধ্যে স্থানীয় ২৫২ টি যুব-নেতৃত্বাধীন সংগঠনের ১২,৬৯০ জন যুব সদস্য, জাতীয় যুব পরিষদের ৭৫ জন সদস্য, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, কনটেন্ট নির্মাতা এবং গণমাধ্যমকর্মী থাকবেন।