অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবো: তারেক রহমান

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭:৫৮ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার  

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘গত ১৬ বছরে আমার নিজের, আমার দলের এবং গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি তথা আপনাদের অনেকের ফ্রিডম অব স্পিচ, ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন এবং ফ্রিডম অব অ্যাসোসিয়েশন সম্পূর্ণভাবে হরণ করা হয়েছে। সেই উপলব্ধিকে ধারণ করে, আমরা সব নাগরিক, বিশেষত মানবাধিকারকর্মী, সংবাদকর্মী ও সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবো, ইনশাআল্লাহ।’

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত ৩১ দফাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

‘৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এমন একটি রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা, যেখানে ইউটিউব, ফেসবুক ও অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিজেদের ভাবনা প্রকাশের কারণে, কিংবা প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিষয়ে মন্তব্যের দায়ে কাউকে হেনস্তা করা হবে না।’

‘সত্য গোপন করতে মেইনস্ট্রিম ও সোশ্যাল মিডিয়া যেমন বাধ্য থাকবে না, তেমনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সেটির প্রচারেও সরকার কাউকে চাপ দেবে না। তবে দেশ গঠনের দায়িত্ব সবার এবং আমরা মিডিয়ার কাছ থেকে নিরপেক্ষ এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি।’

‘বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অতিরিক্ত বল প্রয়োগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা ও বিচার, পরোয়ানা ছাড়াই গণগ্রেফতার এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে যে ভয়ের সংস্কৃতি গত ১৬ বছরে গড়ে উঠেছিল, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে বিএনপি সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে সেটি নির্মূল করার জন্য। জাতিসংঘ প্রণীত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুসারে আমরা নিশ্চিতের চেষ্টা করবো প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা।’

‘নিজ গতিতেই ক্যাপিটাল আসবে’

বিএনপির শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা যদি একটি রুলস-বেসড রাষ্ট্র কাঠামো নিয়ে আসতে পারি, সারা পৃথিবী থেকে প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট ও প্রাইভেট ক্যাপিটাল নিজ গতিতেই বাংলাদেশে আসবে। আমাদের পাবলিক সেক্টরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে, দেশের উন্নয়ন ও উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে।’

‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই আগামীর বাংলাদেশে আর কোনও ব্যক্তি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও স্বেচ্ছাচারী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবে না। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের প্রতিটি লেভেলে নিশ্চিত করা হবে কেউ জবাবদিহির ঊর্ধ্বে না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না’- বলেন তিনি।

বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে তারেক রহমান উল্লেখ করেন, বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে, আমরা দল-মত নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেন, ‘ঠিক যেভাবে আজ থেকে দুই দশক আগে, বিএনপি সরকারের সময়, বাংলাদেশে মিডিয়া নির্ভয়ে সরকারের সমালোচনা করতে পারতো, কার্টুন আঁকতে পারতো।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আমাকে নিয়ে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে, মিডিয়ার একাংশ ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করেছিল, মিডিয়া ট্রায়াল ও প্রপাগান্ডা ক্যাম্পেইন করেছিল। কিন্তু আমরা তার প্রতিদানে কোনও মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করিনি, কাউকে হেনস্তা করিনি, কোনও সম্পাদককে জেলে পাঠাইনি।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার পরিবর্তন মানে কেবল একটি দল থেকে অন্য দলের কাছে রাষ্ট্রের ক্ষমতা হস্তান্তর নয়। বরং, ক্ষমতার পালাবদলে এমন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা হওয়া উচিত, যেখানে সমাজের পরিবর্তিত অবস্থা ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যায়।’

তিন মাসে কী করেছে বিএনপি

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজের দলের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের পর গত ৩ মাসে বিএনপির জাতীয় নেতারা এমন অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন—যাতে রাজনীতিতে আধুনিকায়নের উন্মেষ ঘটে। সেসব উদ্যোগ তারুণ্যের উদ্দীপনায় দেশজুড়ে প্রতিপালন করেছে বিএনপির তৃণমূল।’

‘ফলে আপনারা দেখেছেন অতীতের মতো কীভাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা বন্যার সময় সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি ও সাহায্য নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারগুলোকে আন্তরিক সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করছে। জনদুর্ভোগ এড়াতে মোটরসাইকেল বহর বা শোভাযাত্রা থেকে নিজেদের বিরত রাখছে। রাজনৈতিক প্রোগ্রাম শেষে ওই জায়গা পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন করছে। নগরের দেয়াল থেকে ব্যানার ও পোস্টার অপসারণ করছে। ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছে জনসম্পৃক্ত ও সমাজবান্ধব রাজনীতিকে।’

শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সীমাহীন খুন, হামলা, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়লেও দলীয়ভাবে তাদের শাস্তি দেওয়ার কোনও ইতিহাস নেই। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে দেখা যায়, দেড় হাজারেরও অধিক গণতন্ত্রকামী মানুষকে গণঅভ্যুত্থানে হত্যা করার পরেও আওয়ামী লীগের কোনও নেতার কোনও অনুতাপ, অনুশোচনা বা আত্মসমালোচনার নজির নেই।’

তিনি জানান, বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রয়েছে।

বলেন, ‘তারপরও এত বিশাল সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কেউ বিচ্ছিন্নভাবে কোনও অপরাধে জড়িত হলে—তা জানামাত্রই আমরা দ্রুত সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিয়েছি। ৫ আগস্টের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছিল, পুলিশের অনুপস্থিতি ছিল। ’

‘সেই সময়ে দলীয়ভাবে বিএনপি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, দেশকে আগলে রেখেছে, নিশ্চিত করেছে জননিরাপত্তা ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা। প্রতিহিংসার রাজনীতিতে না জড়িয়ে সহিংসতাকে প্রতিহত করেছে এবং সহাবস্থান নিশ্চিত করেছে।’

তারেক রহমান জানান, ফ্যাসিবাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র ঠেকাতে পূজার সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা মন্দির ও উপাসনালয় পাহারা দিয়ে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধসহ সব মানুষের সুরক্ষায় পাশে দাঁড়িয়েছে।

‘জাতীয়তাবাদের আদর্শই বিএনপির রাজনীতি। আমরা বিশ্বাস করি— ধর্ম, দল ও মত যার যার, তবে রাষ্ট্র সবার।’

‘সংস্কার বলতে বেকারত্বের সমাধানকেই বুঝি’

৩১ দফার মধ্যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবদান উল্লেখ করে তাদের জ্যেষ্ঠ সন্তান তারেক বলেন, ‘আমরা ৩১ দফার যে আলোচনা এখানে করেছি, তা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে। আকাঙ্ক্ষার আলো দেখাবে পরিবর্তনকামী গণমানুষকে।’

‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের এই রূপরেখা তৈরি হয়েছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০, বিএনপির জনসম্পৃক্ততা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে প্রথমে প্রদত্ত ২৭ দফার ওপর ভিত্তি করে, যা পরবর্তীকালে যুগপৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরিক সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে ৩১ দফায় পরিণত হয়।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বলেন, ‘বর্তমানে দেশে আলোচিত প্রায় সব সংস্কার প্রস্তাবই আমাদের ৩১ দফায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমি সংস্কারের উদ্দেশ্য বলতে সেটিই বুঝি, যে সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানের কয়েকটি বাক্য নয়, বরং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। অর্থাৎ একজন মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা হবে, তার ও পরিবারের আর্থসামাজিক নিরাপত্তা ও সঞ্চয় নিশ্চিত হবে।’

‘আমি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি, যা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রতিটি নারী ও পুরুষের বেকারত্ব সমস্যার সমাধান করবে। যে সংস্কার নারীদের সম্মান, স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে।’

‘যে সংস্কার সব মানুষের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, যে সংস্কার দেশের সন্তানদের আধুনিক শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ গঠন করবে, যে সংস্কার মানুষকে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা দেবে, যে সংস্কার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখবে—আমি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি, যা কৃষক, শ্রমিক এবং সব কর্মজীবী মানুষের ন্যায্য ও প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত করবে।’