নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ মিটিং-মিছিল করলেই ব্যবস্থা: আইজিপি
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৩৩ পিএম, ২৬ অক্টোবর ২০২৪ শনিবার
আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা মিটিং-মিছিলসহ যেকোনো কার্যক্রম চালালেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রংপুরে এক সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। রংপুর মহানগর পুলিশের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
পুলিশপ্রধান বলেন, ‘ছাত্রলীগ আর কখনো মিটিং-মিছিল করতে পারবে না। তাদের মিটিং-মিছিল করতে দেওয়া হবে না। ছাত্রলীগকে ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্রলীগের অপকর্মে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়েছে। তাই ছাত্রলীগ আর কখনো বাংলাদেশে কোথাও একত্রিত হয়ে মিটিং-মিছিল করতে পারবে না।’
আইজিপি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করা হয়েছে, তাদের পশুর মতো মেরে ফেলা হয়েছে। সেখানে আমাদের কিছু সহকর্মী জড়িত ছিল। সেই সাথে মূল ফ্যাসিস্ট শক্তি, স্বৈরাচার শক্তি, সরকার অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর অস্ত্রের লাইসেন্স যারা পাওয়ার তারা পায়নি। যারা পেয়েছে বৈধ অস্ত্র পেলেও অবৈধভাবে ব্যবহার করেছে। অত্যন্ত দুঃখজনক, সেই অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে আমাদের নিরীহ জনগণের ওপর।’
পুলিশপ্রধান বলেন, ‘যেসব অস্ত্র দেওয়া হয়েছিল, তাদের তালিকা করে ইতোমধ্যে সরকারের জিম্মায় নেওয়া হয়েছে। অস্ত্রের নতুন করে বিধিমালা তৈরি হচ্ছে। যাতে করে সরকারের অস্ত্র, বৈধ অস্ত্র কেউ ব্যবহার করতে না পারে। এর আগে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার হলেও এবারে বৈধ অস্ত্র জনগণের বিপক্ষে ব্যবহার করা হয়েছে। এজন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
ময়নুল ইসলাম, একটা বৈআইনি পর্যায় শুরু হয়েছিল। ছাত্রলীগ শুধু ইউনিভার্সিটিতে থাকবে, মাস্তানি করবে, হল দখলসহ যাবতীয় চাঁদাবাজি এবং সবধরনের অন্যায় করবে। একটা পর্যায়ে ওরাই বিসিএস দেবে, পুলিশসহ বিভিন্ন প্রশাসনে আসবে, ক্যাডার হিসেবে কাজ করবে। তাদের ক্ষমত অনেক। এই চর্চা ও ব্যবস্থাপনার সংস্কার শুরু হয়েছে। এই সংস্কার না হলে, আমরা ভালো পুলিশ ও ভালো সার্ভেন্ট পাবো না।’
রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা পুলিশকে রাজনীতির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবেন না। সেই সাথে পুলিশের উদ্দেশেও বলব, আপনারা রাজনীতির উদ্দেশ্যে ব্যবহার হবেন না। তাহলে পুলিশের প্রফেশনালিজম ঠিক থাকবে। পুলিশের ইতিহাস, সুনাম সবই ঠিক থাকবে।’
এসময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘পুলিশের আজ সুনাম নষ্টের পথে। এটি কেন হলো, সেটি আমাদের অনুধাবন করতে হবে।’
পুলিশপ্রধান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদসহ সব শহীদের পরিবার থেকে যে মামলা দায়ের হয়েছে, সেগুলো অত্যন্ত সুনিপুণভাবে পিবিআই তদন্ত করছে। যারা এর সাথে জড়িত তাদের কোনো ছাড় নেই। আবু সাঈদের মামলাসহ রংপুরে ইতোমধ্যে দুই পুলিশ সদস্যসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাগুলোর বিষয়ে পুলিশের হেডকোয়ার্টার্স তদারকি করছে। শুধু তাই নয়, ইন্টারন্যাশনালভাবে মামলাগুলো তদন্তের আওতায় আসবে। যাতে করে মামলাগুলো ভালোাভাবে তদন্ত হয়। যাতে করে প্রকৃত অপরাধীরা সাজা পায় সেটি নিশ্চিত করছি। বর্তমানে সাড়া দেশে এমন মামলায় গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।’
পরে পুলিশের আইজিপি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সুধী সমাবেশে আরপি এমপি কমিশনার মজিদ আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম, রংপুরের সমন্বয়ক ইমরান আহমেদ, ডা. মো. আশফাক আহমেদ জামিল, শহীদ আবু সাঈদের ভাইসহ পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা।
এর আগে সকালে পুলিশের আইজিপি পীরগঞ্জের বাবনপুরে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলীসহ রংপুর জেলা ও মহানগর পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।