বছরে মৃত্যু ২২ বন্যহাতির, বাঁচাতে ৫ দফা দাবি
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০২:০৬ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ শনিবার আপডেট: ০২:৫৮ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ শনিবার
গেল এক বছরে দেশে প্রায় ২২টি বন্যহাতি মারা গেছে। এর মধ্যে চলতি মাসেই মারা গেছে চারটি হাতি। মারা যাওয়া হাতিগুলোর বেশিরভাগই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বন্যপ্রাণি গবেষকরা।
শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে বিপন্ন এশিয়ান হাতি রক্ষায় 'প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষায় সম্মিলিত আন্দোলন' এর ব্যানারে মানববন্ধন এবং গণঅবস্থান কর্মসূচিতে তারা এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অব্যাহত বন্যহাতি হত্যা বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া এবং হাতি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন প্রাণি সংরক্ষণকর্মী, গবেষক, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা মানুষ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৃত হাতিগুলোকে গুলি করে, বিষ প্রয়োগ এবং বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এভাবে হাতি হত্যা ও মারা যেতে থাকলে শিগগির এদেশ থেকে প্রাণিটি বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই হাতি সংরক্ষণকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
তারা বলেন, ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হাতি সংরক্ষণের উদ্যোগগুলো কার্যকারিতা নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা পূর্বক প্রয়োজনে সংরক্ষণ কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে। তাহলেই ভবিষ্যতে হাতি সংরক্ষণ সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ বন বিভাগ ও প্রকৃতি-প্রাণি সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থা-আইইউসিএনের সবশেষ ২০১৬ সালের হাতি জরিপের তথ্যমতে, বাংলাদেশে এশিয়ান বন্যহাতি রয়েছে ২৬৮টি। দেশের সীমান্তবর্তী পাঁচটি বনাঞ্চলে ৯৩ পরিযায়ী হাতি বিচরণ করে। এছাড়া সরকারি অনুমতিক্রমে পালিত হাতি রয়েছে ১০০টি। কিন্তু দিন দিন মারা যাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার এ সংখ্যা এখন কমছে।
কর্মসূচি শেষে তারা হাতি সংরক্ষণে পাঁচ দফা দাবি উপস্থান করেন। দাবিগুলো হলো ১/ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অব্যাহত বন্যহাতি হত্যা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। হাতি হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, ২।
বন্যহাতির প্রাকৃতিক চলার পথ, খাবার পানির উৎস গহীন বনের প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণসহ হাতির নিরাপত্তা, অভয়ারণ্যসহ বনে পর্যাপ্ত খাদ্য শৃঙ্খল নিশ্চিত করতে হবে, ৩। বন্যপ্রাণী ও হাতির নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ও কর্তব্য অবহেলার ঘটনা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে ব্যর্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, ৪।
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ সংশোধন করে হাতির বাণিজ্যিক ব্যবহার স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে, ৫/বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও প্রাণী কল্যাণ আইন যথাযথ কার্যকর করতে হবে।
মানববন্ধনে শিক্ষক, সাহিত্যিক, পরিবেশবাদী, পেশাজীবি সংগঠন ও গণমাধ্যম কর্মীরা সংহতি জানান।
মানববন্ধন ও গণঅবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বন্যহাতির প্রাকৃতিক চলাচলের পথ, খাবার ও পানির উৎস রক্ষায় গহীন বনের প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ, হাতির নিরাপত্তা, অভয়ারণ্যসহ বনে পর্যাপ্ত খাদ্য শৃঙ্খল গড়ে তোলার দাবি জানান।