আহমদ শফীর মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি ৩১৩ আলেমের
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ১০:৪১ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ শনিবার আপডেট: ১০:৪৫ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ শনিবার
হেফাজতে ইসলাম বাংলদেশের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আহমদ শফীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্য দু’দিন ধরে নির্যাতন ও মানসিক নিপীড়ন চালনো হয়েছে বলে দাবি করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন দেশের শীর্ষ ৩১৩ আলেম-পীর মাশায়েখ।
মহিব্বিনে আহমদ শফি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রচার সচিব মাওলানা মুফতি আব্দুস ছাত্তারের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেশের শীর্ষ আলেমরা এ দাবি জাানান।
বিবৃতিতে তারা দাবি করেন, ‘হাটহাজারী মাদ্রাসায় আন্দোলনের নামে লুটতরাজের মাধ্যমে আল্লামা আহমদ শফির রুম ভাংচুর, মাদ্রাসার মুহাদ্দিসদের রুম ভাংচুর ও তাদেরকে শারীরিকভাবে মারধরের মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা পুরো কওমি অঙ্গনকে কুলষিত করেছে। জামাত শিবিরের ক্যাডার ও মানহাজী ও চরমপন্থী এ চক্রান্তের সাথে জড়িত। মূলত হাটাহাজারী মাদ্রাসার ক্ষমতা দখল, কওমি অঙ্গনকে দখল ও রাজনৈতিকভাবে সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্লাট ফরম তৈরি করতে এবং কওমি মাদ্রাসার লক্ষ লক্ষ ছাত্র-তরুণ প্রজন্ম সরকার বিরোধী ইস্যু সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের পতন তরান্বিত করতে বিরোধী রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শাহ আহমদ শফীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়াই তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।’
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ‘আজ যখন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পরিবার হত্যার বিচার চেয়ে ধারে ধারে ঘুরছে, যখন বিচারের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হল, তখন আমরা দেখতে পাচ্ছি এক শ্রেণীর ক্ষমতা লোভী ও রাজনৈতিক এজেন্ডা বস্তবায়নকারীরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিকে অস্বীকার করে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর লাশ কবর থেকে তুলতে হবে বলে সধারণ মানুষকে বিভ্রান্তি করছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। সাথে সাথে সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে তার খুনের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি এবং দোষীদেরকে গ্রেপ্তার পূর্বক সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি।’
গত বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) হাটহাজারী মাদ্রাসায় জুনাইদ বাবুনগরী তার আপন মামাকে ও হাটহাজারী মাদ্রাসার কিছু নিরহ ওস্তাদদের সাথে নিয়ে যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার মাধ্যমে তিনি একটি কথাই বারবার তুলে ধরেছেন, তা হলো- আল্লামা শাহ আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হয় তবে তদন্ত হলে সমস্য কোথায়? স্বাভাবিক মৃত্যু হলে তদন্তের ফলাফল তাইতো বেরিয়ে আসবে। তাহলে তিনি কেন মামলা প্রত্যাহার করার জন্য হুমকি দিচ্ছেন এবং প্রত্যাহার করা না হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে হুমকি দিচ্ছেন?’ আলেমদের বিবৃতিতে এই প্রশ্ন রাখা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘৩৬ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে যে মামলা হয়েছে তারা সবাই আল্লামা শাহ আহমদ শফীর হত্যাকাণ্ডের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। শাক দিয়ে মাছ ডাকতে তারা আজ বিভিন্ন আলেমদের নামে নিজেদের বিবৃতি দিচ্ছে মিডিয়াতে। যারা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জানাজায় শরিক হয়েছিলেন তারা সবাই আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হত্যাকাণ্ডের নিশান প্রত্যক্ষ করেছে এবং হযরতের পরিবার থেকে একাধিকবার বক্তব্য ও সাংবাদিক সম্মেলন করে বিচারের দাবি করা হয়েছে। একজন ভিকটিম হিসাবে হত্যার বিচার দাবি করা তার পরিবারের জন্য আপরাধ? সন্ত্রাসিরা হযরতের পরিবার এবং মাওলানা আনাছ মাদানীকে আজও হত্যার হুমকি দিচ্ছে, তাদের হুমকির ভয়ে তিনি সচরাচর চলাফেরা করতে পারছে না। আমরা এই পরিস্থিতির জন্য আইন শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কমনা করছি।’
যে কোন অবস্থায় কওমিয়াতের ঐক্য ধরে রাখতে ও ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পা না দিতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান আলেমরা।
বিবৃতি দেয়া আলেমদের অন্যতম হলেন, মুফতি ওসমান (ঢাকা), মুফতি নুরুল ইসলাম (ঢাকা), আব্দুল কাদের, মুফতি সাইফুল ইসলাম (ঢাকা), মুফতি খেফায়ত উল্লাহ (ঢাকা), মুস্তাফা কামাল (সিলেট), মুফতি সিরাজুল ইসলাম (চট্টগ্রাম), মুফতি নোমান কাসেমী (নোয়াখালী), মাহমুদুল হাসান জিহাদী (চট্টগ্রাম), রহিম উল্লাহ নোমানী (কুমিল্লা), আব্দুল হক (চাঁদপুর), আব্দুস সাত্তার জিহাদী (ঢাকা), মুজাহেরুল হক (জামালপুর), সাইফুদ্দিন কাসেমী (চট্টগ্রাম), আমিনুল ইসলাম (বাগেরহাট), নাছির উদ্দিন আফেন্দি (পাবনা), মুফতি আহমদ আলী (কুমিল্লা), হাফেজ জাবের আহমদ (নরসিংদী), মুফতি ফয়জুল করিম (সিলেট), শহিদুল্লাহ (যশোর), ইয়াকুব আহমেদ (কক্সবাজার), মুবিনুল হক, এনামুল হক, সুলাইমান, সাদেক হোসাইন, ইকবাল হোসেন, সাকের হোসেন জালালী, নজরুল ইসলাম রহিমী, আব্দুল ওয়াহাব জাফরী নওগা, মুফতি রফিকুল ইসলাম।