বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রশ্ন
গণহত্যায় জড়িত শেখ হাসিনার দোসররা কিভাবে পালাল
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৫১ পিএম, ২ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যার সহযোগী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোসর মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগ নেতারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে দেশ ছেড়ে পালালেন সেই প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। এছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের দুই মাসের মাথায়ও গণহত্যায় জড়িতদের মধ্যে যারা এরই মধ্যে হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন, তারা কেন গ্রেফতার হচ্ছেন না- সেই প্রশ্নও তুলেছেন দলটির নেতারা।
দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছ, মঙ্গলবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কয়েকজন সদস্য এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলে আলোচনা করেন। তারা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে তারা (শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আ.লীগ নেতা) পালালেন তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি তারা সরকারের কাছেও জানতে চাইবেন।
বৈঠকে প্রায় ১৬ বছর ধরে বিএনপিসহ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে কথা বলেন কয়েকজন নেতা। কথা বলেন এসব মামলায় সাজা প্রসঙ্গেও। তারা বলেছেন, এ বিষয়টি সরকার এখনো গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। যা দুঃখজনক। স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কমিটির একজন সদস্য জানান, তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখতে পেয়েছেন, পতিত শেখ হাসিনা সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, মন্ত্রী, সংসদ-সদস্য বিদেশে পালিয়ে গেছেন। তাদের কাউকে কাউকে ভারতের বিভিন্ন মাজার ও পার্কেও দেখা গেছে। বিএনপির নেতারা মনে করেন, হত্যা মামলার পরেও এসব আসামি কিভাবে পালালেন, কারা তাদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে, এসব বিষয়ে জনমনে যথেষ্ট প্রশ্ন ও উদ্বেগ আছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী একটি সূত্র জানিয়েছে, সোমবারের সভায় দেশের চলমান পরিস্থিতি, গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও সদস্যরা আলোচনা করেন। তারা বুঝতে চাইছেন, দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার কিভাবে সংস্কার করতে চাইছে, সংস্কারের রোডম্যাপ কেন দেওয়া হচ্ছে না, সংস্কার কবে নাগাদ হবে- এসব বিষয়েও বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন আছে। বৈঠকে সব কর্মকাণ্ডে সরকারের ধীরগতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কয়েকজন নেতা। এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে সজাগ থাকার কথা বলেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, চলমান পরিস্থিতি, সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে তারা আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন।
সংস্কারের বিষয়ে দলীয় অবস্থান ঠিক করতে ৬ কমিটি: বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগের বিষয়ে দলীয় অবস্থান ঠিক করতে ছয়টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এই কমিটির সদস্যরা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার বিষয়ে দলের কর্মকৌশল ঠিক করে তা জাতির সামনে তুলে ধরবেন। দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে তাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছেও মতামত এবং সুপারিশ তুলে ধরা হবে। গঠিত কমিটিগুলো হলো- সংবিধান সংশোধন, বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসংক্রান্ত।
সূত্র জানায়, মূলত সরকার গঠিত কমিটির সংস্কারবিষয়ক কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে দলের কৌশল তৈরি ও সে অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক কাজ প্রণয়ন করতে কাজ করবেন তারা। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করলে বিএনপি যাতে তাদের পরামর্শ তুলে ধরতে পারে- সেই প্রস্তুতিও নেবে এসব কমিটি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবিত ৬টি কমিটির মধ্যে সংবিধান পুনর্গঠন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। সদস্য আছেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হক সুপন ও অধ্যাপক ড. নাজমু জামান ভূঁইয়া ইমন। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারকে। সদস্য হলেন- অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি মোহাম্মদ রইস উদ্দিন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বিচারক ইকতেদার হোসেন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম। পুলিশ বিভাগ সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। সদস্য হচ্ছেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জহিরুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম, সাবেক ডিআইজি খোদা বক্স ও সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান। প্রশাসন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে। সদস্যরা হলেন- সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান। দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে সাবেক বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি শরফুদ্দিন চাকলাদার ও বিচারপতি এএফএম আবদুর রহমানের নাম রয়েছে। সদস্য হচ্ছেন- ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও সাবেক সচিব আবদুর রশিদ। নির্বাচন কমিশনবিষয়ক সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানকে। সদস্য হচ্ছেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব আবদুর রশিদ।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা তারা বিশ্লেষণ করেছেন। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, তা তারা কীভাবে সম্পন্ন করতে চাইছে তা স্পষ্ট করতে হবে। পাশাপাশি সংস্কারের রোডম্যাপ কেন দেওয়া হচ্ছে না বা সংস্কার কবে নাগাদ হবে- এসব বিষয়েও আরও স্পষ্টীকরণ চাইছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তারা মনে করেন, সংস্কারের সরকার সময়ক্ষেপণ করছে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও এজেডএম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তারেক রহমান লন্ডন থেকে এবং মির্জা ফখরুল, আমির খসরু ও ইকবাল হাসান দেশে ও বিদেশ থেকে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।