জামায়াতের সঙ্গে জোট অনেক আগেই অকার্যকর হয়ে গেছে: মির্জা ফখরুল
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:০০ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০২৪ শুক্রবার
১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে আছে বিএনপি। দলের প্রধান খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছিল এবং বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। দণ্ড মাথায় নিয়ে ছেলে তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তন এসেছে। এই নতুন পরিস্থিতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কথা বলেছেন শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে। তার সাক্ষাৎকারটি অপরাজেয় বাংলা'র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
দ্য ডেইলি স্টার: আপনি বারবার বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বলছেন, যৌক্তিক সময় বলতে আপনি কত সময় বুঝিয়েছেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: অন্তর্বর্তী সরকার তো অন্তর্বর্তী সরকার। একটি নির্বাচিত সরকার থেকে আরেকটি নির্বাচিত সরকার হতে যে সময় দরকার। এটি কোনো নির্বাচিত সরকার নয়। এটি একটি সিলেক্টেড সরকার।
তাদের প্রধান দায়িত্ব দেশে দীর্ঘকাল ফ্যাসিবাদী সরকারের দুঃশাসনের ফলে যে গণতান্ত্রিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে, সেগুলোকে একটি জায়গায় নিয়ে আসা, যে জায়গায় আনতে পারলে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা সম্ভব। এবারের জন্য সুনির্দিষ্ট সময় বলা মুশকিল, কারণ এবার এত বেশি ড্যামেজ হয়েছে, দীর্ঘকাল প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে।
ডেইলি স্টার: অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আপনি একটি সংস্কারের রোডম্যাপ চেয়েছেন। কোন কোন সংস্কার হলে বিএনপি মনে করবে 'গুড এনাফ?' কোন কোন ক্ষেত্রে আপনারা সংস্কার চান? আপনারা ক্ষমতায় গেলে এই সরকারের সংস্কারগুলো সংসদে পাস করবেন কি?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠানটাই নষ্ট হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একবারে নষ্ট হয়েছে। বিচার বিভাগ, যেটা রাষ্ট্রের জন্য সবচাইতে জরুরি, সেখানে দলীয়করণ চূড়ান্ত হয়েছে, দুর্বৃত্তায়ন চূড়ান্ত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করা খুব বেশি প্রয়োজন। অর্থনীতিতে বেসিক সমস্যা আছে, যদিও এর তাৎক্ষণিক সমাধান সম্ভব না। কতগুলো ইমিডিয়েট পদক্ষেপ দরকার যাতে অর্থনীতি সচল থাকে। ব্যাংকিং সেক্টরে আমূল সংস্কার দরকার। সেটা দ্রুত হয়ত সম্ভব না, তবে শুরুটা করা দরকার। প্রধানত যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে চাই, সেগুলো হলো নির্বাচন ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা, সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং বিচার বিভাগ, এই চারটি বিষয়ে নূন্যতম যে সংস্কার সেটি হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
তবে এই সংস্কারগুলো করার আগে বর্তমান সরকারের উচিত হবে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে, সব অংশীজনের সঙ্গে কথা বলা। কথা বলে ধারণাগুলো নেওয়া। এটি করা উচিত এবং এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যদি সংস্কার হয় তাকে অবশ্যই সমর্থন করব আমরা।
ডেইলি স্টার: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ব্যাপারে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না? কবে নাগাদ তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: তারেক রহমান সাহেবকে তো আমরা দেশে ফিরিয়ে আনতেই চাই। তিনি আমাদের অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান। দ্বিতীয়ত উনার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে, আমরা মনে করি এবং বিশ্বাস করি সেগুলোর আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। পুরোপুরি বানোয়াট, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মামলাগুলো করা হয়েছে। তার ফিরে আসা দেশের জন্য, দলের জন্য খুব প্রয়োজন।
ডেইলি স্টার: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আপনারা বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে, আপনার বিরুদ্ধেও ৯৮ মামলা। এই মামলাগুলো প্রত্যাহারের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি আছে কি না?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আমরা এই মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আমরা এই কেসগুলোর তালিকা রেডি করে সরকারকে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা বর্তমান লিগ্যাল সিস্টেমে মুভ করছি। অলরেডি আমাদের দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীর জামিন হয়েছে। তবে কেস উইথড্র হয়নি। তবে আমার বিরুদ্ধে যেসব কেসগুলো একেবারেই ফেক, সেগুলো প্রত্যাহার হোক। যত দ্রুত হবে ততই মঙ্গল।
ডেইলি স্টার: চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ট্রিটমেন্টের জন্য তাকে বাইরে পাঠানোর কথা আপনারা বারবার বলেছেন, এখন তিনি মুক্ত, এ বিষয়ে দলের এখনকার চিন্তাভাবনা কী?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আমরা চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে কাজ করছি। উনার মেডিক্যাল বোর্ড কাজ করছে। একদিনে, বললেই তো চলে যাওয়া যায় না। তার যে শারীরিক অবস্থা তাতে তিনি ফ্লাই করতে পারবেন কি না, কোন দেশে যাবেন সেটাও এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি। চেষ্টা হচ্ছে কত দ্রুত তাকে বিদেশে নেওয়া যায়। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে তার শারীরিক কন্ডিশনের ওপর।
ডেইলি স্টার: রাজনৈতিক দল সবসময়ই নির্বাচনমুখী। নির্বাচনে যাওয়ার আগে দলকে কীভাবে সংগঠিত করবেন, আপনাদের পরিকল্পনা কী?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আমরা গত ১৫ বছর কখনই বসে ছিলাম না। আমরা ভার্চুয়ালি প্রতিটি জেলা-উপজেলায় মিটিং করেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যুক্ত হয়েছেন, আমরা যুক্ত হয়েছি। স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং প্রত্যেক সপ্তাহে হচ্ছে। নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।
ডেইলি স্টার: শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে প্রায় সাড়ে পাঁচশ মানুষ মারা গেছে এবং যার অধিকাংশই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। কিন্তু শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার পরও প্রায় ২০০ মানুষ মারা গেছে এবং যেগুলোকে বলা হচ্ছে প্রতিহিংসার বলি, এ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: যা হয়েছে, সেটিকে বিপ্লব পরবর্তী বলা ঠিক হবে না। এগুলো হয়েছে বিপ্লবের মুহূর্তে। বিপ্লব পরবর্তী যখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, তারপর একটিও এমন ঘটনা ঘটেনি। বিপ্লব চলেছে ৫ তারিখ অবধি।
ডেইলি স্টার: আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেখা গেল বিভিন্ন সেক্টরে দখলের সংস্কৃতি। আপনারা অনেককে বহিষ্কারও করেছেন এই অভিযোগে। এই জবরদখলের ব্যাপারে আপনার দলের অবস্থান কী?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: এটা দুঃখজনক। আমাদের দেশে যেকোনো রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় কিছু ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের পুরো সমাজটা তো বদলে যায়নি রাতারাতি। এই সমাজে এখনো বহু মানুষ আছেন যারা দুর্বৃত্ত। দুর্বৃত্তকে যখন পার্টির সঙ্গে, বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তখন আমার ঘোরতর আপত্তি আছে। একজন ব্যক্তি হয়ত বিএনপির সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু সে যখন এগুলো করে তখন দল থেকে কোনো সমর্থন পায় না। আমার ইতোমধ্যে দলীয় ব্যবস্থা নিয়েছি, দল থেকে বহিষ্কার করেছি। বিএনপির দখলদারিত্ব, এটাতে আমার আপত্তি আছে।
ডেইলি স্টার: ১৯৯১ থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে বিএনপি নির্যাতিত, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের ওপর নির্যাতন। এই দুই দলের বৈরিতার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনীতি। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে উত্তরণের জন্য আপনাদের কোনো চিন্তা আছে কি?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: একটি সিস্টেম অবশ্যই দাঁড় করাতে হবে যেখানে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। যদি নির্বাচনের চর্চাটা থাকত, যেমন: পশ্চিমা বিশ্বে বা ভারতে। আমরা তো ৫৩-৫৪ বছরে এখন পর্যন্ত একটা সিস্টেম দাঁড় করাতে পারলাম না, যেখানে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পালাবদল হবে। হয় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সরাতে হয়, নয়ত ঘাড় ধাক্কা দিয়ে আসতে হয়। এই যে কালচার শুরু হয়েছে বাংলাদেশ, এটা ভয়াবহ কালচার। এটা চিরতরে নির্মূলের জন্য একটা রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার। গণতন্ত্রকে চলতে দিতে হবে। ৯০-এর পর একটা সুন্দর সময় এসেছিল- কেয়ারটেকার সিস্টেম। সেটাকে কন্টিনিউ করাতে হবে। আমাদের প্রস্তাব আছে, আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন, সেটাকে পার্মানেন্ট করতে চাই। সেটা সংবিধানে সন্নিবেশিত হওয়া উচিত আমাদের আরও গণতান্ত্রিক হতে।
ডেইলি স্টার: জামায়াতের সঙ্গে আপনাদের জোট ছিল এবং দীর্ঘদিন আপনারা দলটির সঙ্গে একটা দূরত্ব বজায় রেখেছেন। জামায়াতের সঙ্গে আপনার দলের সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে আছে?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আমাদের যে জোট ছিল, আন্দোলনের জন্য জোট, সেটা অনেক আগেই অকার্যকর হয়ে গেছে। এটা এখন কোনো কাজ করে না। অনেক আগেই আমরা যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে প্রোগ্রাম ঠিক করে যুগপৎ আন্দোলন করেছি সরকার পতন অবধি। এটা এখন বলবত নেই। তবে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আমরা আলোচনা অব্যাহত রেখেছি, কারণ এখনো কেয়ারটেকার সরকার আছে, এরপর নির্বাচন আছে। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা আলোচনা বজায় রাখছি, এটা জরুরি। এই মুহূর্তে আমাদের কোনো জোট নেই। আমরা জোটবদ্ধ নই।
ডেইলি স্টার: বিএনপির সঙ্গে অতীতের যাবতীয় দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে আগ্রহী সজীব ওয়াজেদ জয়। বিএনপির সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে চাই বলেও মন্তব্য করেছেন জয়। আপনি কীভাবে দেখেন জয়ের এই আহ্বানকে?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সবসময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। সরকার পতনের পর চেয়ারপারসনও বলেছেন- আমরা প্রতিশোধ, প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চাই না। আমরা সৌহার্দ্য, ভালোবাসা এবং সুসম্পর্কের রাজনীতি করতে চাই। কিন্তু একই সময়ে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা একটা বড় বিষয়। আমরা যে কাজগুলো করেছি জনগণ তো তার জন্য আমাদের বিচার করবে। আজকে আওয়ামী লীগকে তার গত ১৫ বছরের কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিকে কীভাবে তারা ধ্বংস করেছে, তার জন্য তাকে তো জবাবদিহি করতে হবে। তারা জবাবদিহি করে গণতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করলে আমাদের তো কোনো আপত্তি নেই। আমরা বিশ্বাস করি- যেকোনো দলের যে কোনো ব্যক্তির রাজনীতি করার অধিকার আছে, সেভাবে করবে।
ডেইলি স্টার: অনেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলছে। আপনি কি মনে করেন দেশের অন্যতম প্রাচীনতম এই দলটি নিষিদ্ধ হওয়া উচিত?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আমি কখনই কোনো রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধের পক্ষে নই। আমার দলও সেটা বিশ্বাস করে না। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সাহেব বহুদলীয় গণতন্ত্রের শুরু করেছেন। আগে তো আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন শুরু করেছিল। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র শুরু করেছেন। সুতরাং কোন দলের নিষিদ্ধের বিষয়টি আমরা সমর্থন করি না।
ডেইলি স্টার: আমরা সবসময় দেখেছি বিএনপি ক্ষমতায় গেলে চীনমুখী পররাষ্ট্রনীতি, আওয়ামী লীগ ভারতমুখী। আপনাদের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে? চীন, ভারত, আমেরিকার সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক কেমন হবে ভবিষ্যতে?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আমরা সকলের বন্ধুত্ব চাই। আমরা পার্টিকুলারি কোনো দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই না। কোনো দেশ বাংলাদেশের পার্টিকুলারি কোনো দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুক এটাও আমরা চাই না। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, অন্য দেশ এখানকার মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলবে পারস্পরিক স্বার্থ বিবেচনা করে। আমাদের সার্বভৌমত্ব সম্মান করে সম্পর্ক হবে।
ডেইলি স্টার: ২০০১-২০০৬ এর বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উঠেছিল। অতীতের সেই ভুলগুলো থেকে কি বিএনপি শিক্ষা নেবে? হাওয়া ভবন নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত ছিল, আপনারা ক্ষমতায় গেলে হাওয়া ভবন ফিরে আসবে না এই নিশ্চয়তা কোথায়?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: এই ন্যারেশনটা কতগুলো মিডিয়া এবং ব্যক্তি প্রচার করেন। এটার একমাত্র লক্ষ্য দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিকে হেয় এবং নেতৃত্বকে হেয় করা, নেতৃত্বকে দুর্বল করার জন্য। বিএনপি কখনো মানুষের বিপক্ষে কিছু করেনি। দেশ চালাতে গেলে কিছু ভুল হয়, কিন্তু সেই ভুল দেশ ও মানুষকে ক্ষতি করেনি। মিডিয়ার যে স্বাধীনতা সেটা বিএনপি দিয়েছে, সংসদীয় গণতন্ত্র, মুক্তবাজার অর্থনীতি সেটা বিএনপি দিয়েছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে। সেই বিষয়কে গুরুত্ব না দিয়ে তখনকার হাওয়া ভবনের কথা বলেন, আয়নাঘরের সঙ্গে তাকে তুলনা করা হয়। হাওয়া ভবন একটা ব্যক্তিগত অফিস ছিল, যা দেশের অর্থনীতি, রাজনীতির কোনো ক্ষতি করেনি। এই নিয়ে একটা প্রজেকশন করার চেষ্টা করা হয়। এটা একটা ষড়যন্ত্র। একটা দলকে হেয় করার জন্য, তার অর্জনকে খাটো করার জন্য। নির্বাচন হোক- তাহলে জনগণই বেছে নেবে কোন দলটা ভালো কোন দলটা ভালো না, কোন নেতা খারাপ, নির্বাচনেই প্রমাণ হবে। কিন্তু চাপিয়ে দেওয়া- এটা করলে ভালো হবে, ওটা করলে ভালো হবে- সেটা নির্বাচনের মাধ্যমেই ঠিক হোক।
নির্বাচনে যে আসবে তাকে গ্রহণ করতে হবে। আমাদের আমলে আমরা এমন কোনো আইন করেছি, যে আইন গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গেছে? পারবেন না দেখাতে। আওয়ামী লীগের করা সব আইনই গণতন্ত্রের বিপক্ষে গেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তুলনা করলে সেটা গ্রস ইনজাস্টিস হবে। আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার চেতনা, অর্থনীতি, রাজনীতি, মূল্যবোধ সব ধ্বংস করেছে। একজন বিচারপতিকে মানুষ মারছে, আদালতের মধ্যে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় নেতাদের ডিম ছুড়ছে কারণ মানুষের মধ্যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ। বিএনপি আর আওয়ামী লীগকে এক পাল্লায় মাপলে হবে না। বিএনপি দেশে সবচাইতে ভালোটা করার চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগ একদলীয় বাকশাল করেছিল, আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছি। আওয়ামী লীগ সব পত্র-পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল, আমরা সব চ্যানেল-পত্রিকা চালু করেছি। হাওয়া ভবনে কাউকে আটকে রাখা হয়েছে, কাউকে নির্যাতন করা হয়েছে? একটা প্রমাণ দিন। সুতরাং বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তুলনা করাটা 'ইনজাস্টিস টু আস'।