অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

নজরদারির কাজে ১৬ বছরে সরকারের ব্যয় কত, শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৪৬ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০২৪ শনিবার  

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নামে টেলিফোনে আড়িপাতা, ফোনালাপ ফাঁস এবং ইন্টারনেট নজরদারির মতো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের সব ঘটনাকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেছেন একটি নাগরিক সংলাপে অংশ নেওয়া বক্তারা। তারা বলেছেন, গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনীতিবিদসহ জনসাধারণের ওপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এসব নজরদারির কাজে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে।

এ পর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় নজরদারি বাবদ আওয়ামী লীগ সরকার কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করেছে, কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত, কে এমন নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন—এমন সবকিছু শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশের দাবি জানান তারা। সেইসঙ্গে টেলিফোনে আড়িপাতা সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এবং ইন্টারনেট শাটডাউন, কনটেন্ট ফিল্টারিং ও ওয়েবসাইট ব্লকিংয়ের কাজে নিয়োজিত সংস্থা ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশনসের (ডিওটি) বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিডিবিএল ভবনে 'নতুন বাংলাদেশে আড়িপাতা, গোপনীয়তার অধিকার ও বাক স্বাধীনতা' শীর্ষক এই নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এটি আয়োজন করে 'সিভিল রিফর্ম গ্রুপ—বাংলাদেশ ২.০' নামের একটি প্ল্যাটফর্ম ।

সংলাপে সাইবার বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাব্বির বলেন, 'যেকোনো নাম্বার ট্যাপ করার সক্ষমতা তাদের (এনটিএমসি) আছে। কিন্তু একসঙ্গে প্রত্যেকের কল রেকর্ডের সক্ষমতা তাদের নেই। এখন আমাদের মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা যদি ১০ কোটি হয় আর তাদের মধ্যে এক শতাংশও যদি ট্যাপ করা হয় তাহলে সেই সংখ্যাটা কিন্তু অনেক বড়।'

এই সাইবার বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, 'উন্নত দেশগুলোতে কারও ফোন ট্যাপ করতে গেলে অবশ্যই কোর্ট অর্ডার লাগে। সেই অর্ডার হাতে পেলে অপারেটর একটা অ্যাক্সেস দেয়। কিন্তু আমাদের দেশে অপারেটরগুলোকে একপ্রকার বাধ্য করা হয়।'

সাংভাদিক গোলাম মোর্তোজা বলেন, 'পেগাসাসসহ আমরা যে সমস্ত ইসরায়েলি প্রযুক্তি পেয়েছি এবং এগুলো কেনার সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা যে সমস্ত বেআইনি কাজ করেছি, অপরাধমূলক কাজ করেছি সেগুলো কার নির্দেশে হয়েছে, কোন প্রক্রিয়াতে কেনা হয়েছে, টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হয়েছে—এই তথ্যগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট করে জানতে চাই নাগরিক হিসেবে। জানতে চাই আমরা যতটুকু জানি ততটুকুই সত্য, না কি এই জানার বাইরে আরও সত্য আছে।'

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, 'এই ফ্যাসিস্ট রেজিমে আমরা যেভাবে আমাদের জীবন কাটিয়েছি তার মধ্যে একটা বড় ঘটনা ছিল মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারের চরম লঙ্ঘন। সেটা পুরো রাষ্ট্র দিয়ে, যন্ত্র দিয়ে, প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়ে করানো হয়েছে।

সংলাপে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'এনটিএমসির প্রয়োজন নেই। ডিওটির প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন আছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আর সরকারের বহুমত দমনের হাতিয়ার এক ব্যাপার নয়।

'অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন একটা কাঠামো তৈরি করতে হবে তাতে ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা যেন একই সংস্কৃতির কাছে জিম্মি না হন।'

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলেন, 'আড়িপাতা থাকবেই। কিন্তু এটা দিয়ে কাউকে ধরব, ব্ল্যাকমেইল করব এটা তো হতে পারে না।'

সংলাপে সবার শেষে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন। তিনি নজরদারির পাশাপাশি গত সরকারের আমলে প্রবর্তিত ডিএসএ, সিএসএসহ বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইনের ব্যাপারে আলোচনা করেন। এসময় উপস্থিত সাংবিদকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'নতুন এই সময়ে এখনো পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনী যা বলছে সেটাই আপনার ছেপে দিচ্ছেন। এটা ঠিক না।'

আরও বক্তব্য রাখেন টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশীদ, আইনজীবী মিতি সানজানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বি এম মইনুল হোসেন।

সংলাপটি সঞ্চালনা করেন বেসিসের সাবেক সভাপতি ও বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর।