অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার ছাড়াতে পারে ১০ শতাংশ, বিবিসিকে গভর্নর

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:৪৯ পিএম, ২২ আগস্ট ২০২৪ বৃহস্পতিবার  

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ করা হবে আগামী দুই-একদিনের মধ্যে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী মাসে সুদহার আরও বাড়িয়ে ১০ শতাংশ বা তার বেশি করা হবে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তথা মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতায় রেমিট্যান্স কমে যাওয়া এবং তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টিও দেশের অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।

চলতি বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদনের সময় বাংলাদেশকে মুদ্রানীতি কঠোর করতে এবং বিনিময় হার নমনীয় রাখতে বলেছিল। আহসান এইচ মনসুর বলছেন, আইএমএফের কাছ থেকে আরও বাড়তি ৩ বিলিয়ন ডলারের জন্য সংস্থাটির সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত দেড় বিলিয়ন ডলার এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির কাছে ১ বিলিয়ন ডলার করেও সহায়তা চাইছে বাংলাদেশ। আগস্টের শুরুর দিকে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট এবং কারফিউও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ওপর চাপ ফেলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাত পরিচ্ছন্ন করা তাঁর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় পরিকল্পিত ডাকাতি হয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। সেই সঙ্গে শেয়ারবাজার ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে জড়িত কিছু গোষ্ঠীর ঋণখেলাপির কারণে দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলো থেকে হঠাৎ মানুষের টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, এই খেলাপি ঋণগুলো আসলে রীতিমতো ব্যাংক ডাকাতি। তারা টাকা নিয়ে সিঙ্গাপুর, দুবাই, লন্ডনসহ আরও কিছু জায়গায় পাচার করেছে। তাই আমাদের প্রথম প্রচেষ্টা হবে, বিষয়টি নিয়ে কাজ করা এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করা। এটি করার পাশাপাশি আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে। তাই আমরা একটি ব্যাংকিং কমিশন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। এই কমিশনের কাজ হবে, ব্যাংকগুলোর বড় পরিসরে অডিট করা এবং বোর্ড পরিবর্তন, ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন, তারল্য সহায়তা বা কিছু ছোট ব্যাংকের ক্ষেত্রে একীভূতকরণের মতো পরামর্শ দেওয়া।

নতুন এই গভর্নর আরও বলেন, শরিয়াভিত্তিক কিছু ইসলামী ব্যাংকে সরকারকে হয়তো ১৫ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিতে হবে। কার্যত যার অর্থ দাঁড়াবে ব্যাংকগুলোকে জাতীয়করণ করা। তিনি আরও বলেন, আমরা এটা করতে চাই না। কিন্তু এই লোকগুলো অনেক টাকা ঋণ নিয়েছে যা তারা ফেরত দিচ্ছে না। আমাদের অন্তত আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে।

মুদ্রানীতিতে সংস্কারের পাশাপাশি, গভর্নর এটাও আশা করেন যে—বাংলাদেশের নতুন সরকার চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হবে। ব্যয় আরও ৯/১০ শতাংশ কমাতে হবে, যাতে বেসরকারি খাতের জন্য আরও বেশি ঋণ পাওয়া যায়।

গত সপ্তাহের শেষের দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস কূটনীতিকদের বলেছিলেন যে তার সরকার আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যাবে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, তিন বছর বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।