অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

২৫ বছরের সমাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটতে পারে ভেনেজুয়েলায়

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:০০ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২৪ রোববার  

২৫ বছরের সমাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটতে পারে- এমন একটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আশা ও আশঙ্কার পটভূমিতে রোববার (২৮ জুলাই) ভেনেজুয়েলায় ভোট হয়েছে। জনমত জরিপে আভাস পাওয়া গেছে, ৬১ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো- যিনি তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে চাইছেন, বিরোধী জোটের প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক এডমুন্ডো গঞ্জালেজ উরুতিয়ার (৭৪) কাছে পরাজিত হতে পারেন।

তবে নির্বাচন নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে ভোটারদের মধ্যে। স্বাধীন পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচনকে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে 'সবচেয়ে স্বেচ্ছাচারী নির্বাচন' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এমনকি মাদুরোর পূর্বসূরি হুগো শ্যাভেজের সময় শুরু হওয়া কর্তৃত্ববাদী শাসনের মানদণ্ডেও।

মাদুরো তার 'গুরু' হুগো শ্যাভেজের মৃত্যুর পর থেকে ক্ষমতায় আছেন। প্রথমবার তিনি সংকীর্ণভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে তার পুনরায় নির্বাচনকে 'একটি প্রতারণার নির্বাচন' হিসাবে ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছিল।

চলতি নির্বাচনেও অনিয়মের নানা ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে রয়েছে- প্রার্থিতা বাধাগ্রস্ত করা, বিরোধী দলের সদস্যদের আটক করা, ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন এবং দেশে-বিদেশের ভোটারদের নিবন্ধনে বাধা দেওয়া।

এনজিও ইলেক্টোরাল ট্রান্সপারেন্সির পরামর্শক জেসুস কাস্তেলানোস বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনের মধ্যে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব।

বিরোধী জোটের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, সাবেক আইনপ্রণেতা মারিয়া করিনা মাচাদো (৫৬), যিনি ২৩ লাখ ভোটের ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু মাদুরোর অনুগত জ্যেষ্ঠ আদালত তাকে নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তাই তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন শিক্ষাবিদ কোরিনা ইয়োরিস।

ক্যারিশম্যাটিক পাবলিক স্পিকার মাচাদো নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও প্রচারণার মাঠে রয়েছেন। দেশব্যাপী হাজার হাজার সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্য দেশজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যদিও কর্তৃপক্ষ ক্রমাগত হয়রানি করে যাচ্ছে তাকে। তার নিজের নিরাপত্তা প্রধানসহ কয়েক ডজন বিরোধী দলীয় ব্যক্তিত্বকে গ্রেপ্তারও করেছে।

ভেনেজুয়েলার ইলেক্টোরাল অবজারভেটরির (ভিইও) পরিচালক ইগনাসিও আভালোস বলেন, সরকার ভিইওর স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে। তবুও আমাদের প্রায় ৭০০ স্বেচ্ছাসেবক পর্যবেক্ষক আজ স্বাধীনভাবে ভোটকেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করবে।

তবে এ নির্বাচনে কার্যত কোনো আন্তর্জাতিক নজরদারি থাকবে না। জাতিসংঘ এবং কার্টার সেন্টারের পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যদিও তবে তাদের ভূমিকা রাখার প্রচেষ্টা সীমিত হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশের পর্যবেক্ষকদের মাদুরো আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে আমন্ত্রিতরা কেবল তারা ছিলেন, যে দলগুলো আগে মাদুরোর প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল।

ভেনেজুয়েলার নিকটবর্তী দেশ আর্জেন্টিনার বামপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ বলেছেন, পরাজিত হলে মাদুরোকে ফলাফল মেনে নিতে হবে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ব্রাজিলের গত নির্বাচন নিয়ে মাদুরোর এক মন্তব্যের জেরে ব্রাজিলের নির্বাচনী আদালত পর্যবেক্ষক পাঠাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়।

ইগনাসিও আভালোস বলেন, বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে, যা এক ধরনের নির্বাচনী সহিংসতা। প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নির্বিচারে আটক, জোরপূর্বক গুম, মিডিয়া ও সাংবাদিকদের নিপীড়ন দেখেছি।

ফোরো পেনাল নামে একটি এনজিওর মতে, এ বছর ১০২ জন বিরোধী সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আভালোস বলেন, নির্বাচনী যুদ্ধক্ষেত্রকে নিজের পক্ষে নেওয়ার জন্য বিরোধীদের নিপীড়ন করাই একমাত্র পদ্ধতি নয়। মাদুরো প্রশাসন 'ভোটদানের হার কমানোর একটি সুস্পষ্ট কৌশল'ও প্রণয়ন করেছে।

২০২১ সাল থেকে স্পেনে বসবাসকারী এবং গত সপ্তাহে মাদ্রিদে 'পরিবর্তনপন্থী সমাবেশে' অংশ নেওয়া ভেনেজুয়েলার সাংবাদিক থাবাতা মোলিনা বলেন, দীর্ঘ সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো আমরা সত্যিকারের আশা পেয়েছি।

ক্লাভিজো বলেন, গঞ্জালেজ সফল হলে ভেনেজুয়েলার অনেক নাগরিক এরই মধ্যে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছেন। আমরা আবার গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করতে চাই। আমরা আরও একবার অনুভব করতে চাই যে, দেশটি আমাদের।