অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

কোটা ও শিক্ষকদের আন্দোলন ‘সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে’ সরকার

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:৩৯ পিএম, ৯ জুলাই ২০২৪ মঙ্গলবার  

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও পেনশন স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন সরকার সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কোটাবিষয়ক আন্দোলনে ছাত্রলীগ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন কোনো উস্কানি না দেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক যৌথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল বাংলাদেশে। তার মাঝে ৩০ শতাংশই ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা। বাকি কোটার মাঝে ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ কোটা ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য এবং এক শতাংশ কোটা ছিল প্রতিবন্ধীদের।

ওই বছরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল যে কোটা ৫৬ শতাংশ না হয়ে ১০ শতাংশ করা হোক। তাদের দাবির মুখে সে বছর পুরো কোটা পদ্ধতিই বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

কিন্তু ২০২১ সালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে পাবার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন এবং গত পাঁচই জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। তারপর হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার সকালে কোটার পক্ষের এক আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি করেনি আদালত। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত না করায় পূর্বের নিয়মানুযায়ী সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আপাতত বহাল রয়েছে।

হাইকোর্টের রায়ের পর গত ৬ জুন থেকেই তা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। মাঝে কিছুদিন আন্দোলন চললেও ঈদুল আজহার কারণে ২৯ জুন পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন ৩০ জুন থেকে ফের আন্দোলন শুরু করেন তারা।

অন্যদিকে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিতে ক্যাম্পাসগুলো অচল হয়ে পড়েছে।

সরকার এসব আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা বাতিলের আন্দোলন চলছে। পাশাপাশি পেনশনের বিষয়ে শিক্ষকরা একটা আন্দোলন ও কর্মসূচি পালন করছেন। এই দুটি কর্মসূচি আমরা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।

আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে কবে আনুষ্ঠানিকভাবে বসবেন এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসব আমরা কি বলেছি?’

শিক্ষকরা বলেছেন বলে সাংবাদিকরা উত্তর দিলে মন্ত্রী বলেন, এখন তারা কি বললো সেটা তো আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমাদেরও তো অসুবিধার বিষয় থাকতে পারে। আমরা তাদের প্রতি কোনো প্রকার অসম্মান করছি না। আমরা তাদের আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করছি। সময়মতো এর সমাধান হয়ে যাবে এটাই আমরা আশা করি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। পাশাপাশি পেনশনের বিষয়ে শিক্ষক সমাজেরও আন্দোলন, কর্মবিরতি চলছে। এই দুটি কর্মসূচি চলমান অবস্থায় আমরা খুব সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। যতটুকু জানি, কোটা সংস্কারবিরোধী যে আন্দোলন শিক্ষার্থীরা করছে তাদের আজকে নির্ধারিত কর্মসূচি নেই, সেজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এমনও শুনেছি, তারা উচ্চ আদালতে যে মামলা তাদের পক্ষ থেকে ল'ইয়ার নিয়োগ করেছে এবং তারা আদালতে যথাসময়ে হাজির হবেন। এটা একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী পরিপত্র জারি করে কোটামুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এতদিন সরকারি কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ৭ জন একটা মামলা করেন। হাইকোর্ট একটা রায় দেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ নিয়মানুযায়ী আপিল হয়েছে। ফুলকোর্টে আমরা আশা করছি শীঘ্রই শুনানি হবে।

কোটাবিরোধী নয়, কোটা সংস্কারে আন্দোলন হচ্ছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, সরকারের অবস্থান পরিষ্কার। যারা আন্দোলন করছেন, আমাদের বিভিন্ন মিডিয়া কোটাবিরোধী আন্দোলন, তবে তারা যেটা বলছে কোটা সংস্কার চায়।

খালেদা জিয়াকে নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি সব কিছুতে রাজনৈতিক গন্ধ পায়। আইনি লড়াই তারা ঠিকমতো করেনি। মাসের পর মাস এমনকি বছর কেটে গেছে তাকে (খালেদা) উপস্থিত হতে দেননি, জামিনও চাননি। তারা আইনি লড়াইয়ে ব্যর্থ। তারা এই শহরে দৃশ্যমান একটা বিক্ষোভ মিছিল খালেদা জিয়ার জন্য করেছে এমন প্রমাণ আমাদের সামনে নেই।’

বিএনপি বলছে প্রধানমন্ত্রী ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে চীন গেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে প্যারিস কনসোর্টিয়াম বৈঠকে তাদের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বার বার ছুটে গেছেন, আমাদের কোন অর্থমন্ত্রী প্যারিস কনসোর্টিয়াম বৈঠকে জাননি। বাজেটের আগেও জাননি।’