গুগল-অ্যামাজন বয়কটের ডাক
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:২৭ পিএম, ২২ জুন ২০২৪ শনিবার
যুক্তরাষ্ট্রের ১২০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছেন, গুগল ও অ্যামাজন কোম্পানিতে চাকরি করবেন না এবং এ দুই কোম্পানির ঘরোয়া প্রশিক্ষণ কোর্সেও অংশ নেবেন না, যতক্ষণ না এ দুই কোম্পানি দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে ‘নিম্বাস’ প্রকল্পে শরিক হওয়ার চুক্তি বাতিল করে।
সম্প্রতি শিক্ষার্থীরা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
গুগল ২০২১ সালে ইসরাইলের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলার মূল্যের নিম্বাস প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ইসরাইলি সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীকে ক্লাউড ইলেকট্রনিক সার্ভিস দেওয়াই এই প্রকল্পের লক্ষ্য।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, নিম্বাস প্রকল্পের প্রযুক্তির মাধ্যমে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ওপর অবৈধভাবে আরও বেশি নজরদারি করার ও তাদের সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য সংগ্রহের তথা গোয়েন্দাবৃত্তি করার সুযোগ পাবে। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনে অবৈধভাবে ইহুদি বসতি বিস্তারের পথও সুগম করার সুযোগ পাবে ইসরাইল।
আল আরাবি জাদিদ নামে একটি সংবাদ মাধ্যমের জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ১২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ শতাধিক শিক্ষার্থী ও যুব প্রজন্মের কর্মী, যারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, তারা একটি প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, তারা গুগল ও অ্যামাজন কোম্পানিতে চাকরি করবেন না এবং এ দুই কোম্পানির ঘরোয়া প্রশিক্ষণ কোর্সেও অংশ নেবেন না, যতক্ষণ না এ দুই কোম্পানি দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে ‘নিম্বাস’ প্রকল্পে শরিক হওয়ার চুক্তি বাতিল করে।
ওই প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সানফ্রানসিসকো বিশ্ববিদ্যালয় ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট কোর্সগুলোর আওতাধীন শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। তাদের অনেকেই কিছুদিন আগে নিম্বাস প্রকল্পের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন।
বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল সানফ্রানসিসকো শহরে গুগল কার্যালয়ের সামনে। প্রযুক্তি সার্ভিস বিভাগের অনেক কর্মী ও ফিলিস্তিন সমর্থক কর্মীরাও ওই প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নেন।
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা এমন সময় গুগল ও অ্যামাজন বর্জনের কর্মসূচি শুরু করলেন, যখন গুগল ও অ্যামাজন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ে উচ্চ শিক্ষিতদের কর্মসংস্থান বা চাকরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত হয়।
শিক্ষার্থীরা যে প্রতিজ্ঞাপত্রে সই করেছেন, তাতে লেখা আছে- ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি নজরদারি ও সহিংসতার কারণে বাস্তবেই ক্ষতিগ্রস্ত। আর এই প্রক্রিয়া ক্লাউড কম্পিউটিং সিস্টেম জোরদার করাসহ ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠী ও ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীকে নানা ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে অ্যামাজন ও গুগল ফিলিস্তিনিদের ওপর আরও বেশি সহিংসতা চালানোর ক্ষেত্রে বর্ণবাদী ইসরাইলকে সাহায্য করেছে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যেই বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮৫ জন ডিগ্রিধারী ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১৬ জন ডিগ্রিধারী গুগল কোম্পানিতে চাকরি করছেন।
তাদের এই বয়কট কর্মসূচির স্লোগান হচ্ছে- ‘বর্ণবাদের সেবায় নিয়োজিত প্রযুক্তিকে না’। এ কর্মসূচি গড়ে তুলেছেন ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে গড়ে ওঠা কয়েকটি আন্দোলনের কর্মীরা। আর ফিলিস্তিনের সমর্থনে এসব আন্দোলন গড়ে উঠেছে গাজায় গত অক্টোবরে ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে। এসব আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন সেই সব ব্যক্তিরাও, যারা ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন ও দখলদার ইসরাইলের প্রতি সহযোগিতার বিরোধিতা করার দায়ে গুগলসহ প্রযুক্তিবিষয়ক কয়েকটি কোম্পানির চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন।