রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকারের উদ্যোগ নেই: রিজভী
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:২৬ পিএম, ৪ জুন ২০২৪ মঙ্গলবার
আওয়ামী লীগ কখনোই জনকল্যাণে ইতিবাচক রাজনীতি করেনি মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গত ২৭ মে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে মৎস্যখাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৪০০০ কোটি টাকা।
গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ভেসে গেছে দেশের আক্রান্ত উপকূলীয় ১৯ জেলা, পার্বত্য তিন জেলা ও সিলেট বিভাগের মৎস্য ঘের ও খামার। ভেঙ্গে যায় হাজার হাজার মৎস্য ঘের ও খামার। এমনিতে গত ২২ মে হতে সাগর ও নদীর মোহনায় ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞায় মাছ ধরা বন্ধ। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস যা জেলেদের মরার উপর খরার ঘা। গত ১সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত দেশের এক পঞ্চমাংশ জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনে সরকার কোনো কার্যকর উদ্যোগ বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যা বেদনাদায়ক। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মঙ্গলবার (৪ জুন) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সিরাজুল ইসলাম, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম প্রমুখ।
রিজভী বলেন, প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ভেঙ্গে গেছে ঘের, পুকুরের পাড় ও মৎস্য খামার। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। মৎস্য খামারিদের ভাগ্যে নেমে এসেছে মহাবিপর্যয়। তাদের বর্তমান অবস্থা অবর্ণনীয় ও দুর্বিষহ। উপকূলীয় ১৯টি জেলার ১০৭টি উপজেলার মৎস্য খামারিদের যে ক্ষতি হয়েছে, সে ক্ষতি কাটানোর একমাত্র উপায় আর্থিক সহায়তা প্রদান। দ্রুত অর্থ না পেলে খামারিদের ঘের ও পুকুর সংস্কারসহ মাছের পোনা ছাড়ার কোনো বিকল্প পথ থাকবে না। খামারিরা বেশিরভাগই ব্যাংক ও অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করে। এই অবস্থায় ১৯টি জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষীদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে সরজমিনে পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে অস্বীকার করে ডামি সরকার রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে আওয়ামীকরণের মাধ্যমে জনগণকে ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী ফ্যাসিজমের ছায়া-উপছায়া দেশে বিস্তার লাভ করেছে। খুন, রক্তপাত, সহিংসতা, দখল, টাকা পাচার আর অনর্গল মিথ্যা কথা বলাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- ‘আজিজ, বেনজির আমাদের লোক নয়।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কেউ দুর্নীতিবাজ নয়’। আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বলতে চাই- আপনি কি ডানে বামে তাকিয়ে কথা বলছেন, নাকি আপনাদের স্বভাবসূলভ ডাহা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। আপনার কথাই যদি ঠিক হয় তবে আপনাদের ডামি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা হয়েছিল কীভাবে? তাছাড়াও অসংখ্য আওয়ামী শীর্ষ নেতাদের নামে কীভাবে তখন এতো মামলা হয়েছিল? ব্যাংক খালি হওয়া, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়া, আওয়ামী ঘনিষ্ঠ বিপুল অঙ্কের ঋণখেলাপি, নজিরবিহীন আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যারা জড়িত তারা কি তাহলে আওয়ামী লীগের মাঝারি নেতা। আপনার কথাই মনে হয়, মাঝারি নেতাদের দুর্নীতি করার অধিকার রয়েছে। আপনাদের কর্মচারীদের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বেনজীর যখন বন্দুকের ভাষায় কথা বলতেন তখন তো তাকে অস্বীকার করেননি। বেনজীর-আজিজদের দুর্নীতির দায় আপনারা কখনোই এড়াতে পারবেন না।
রিজভী আরও বলেন, ক্ষমতা দখলে রেখে অনন্তকাল অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার অসৎ অভিপ্রায়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিনাশ করার জন্য শেখ হাসিনা তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বেনজীর-আজিজদের ব্যবহার করার পাশাপাশি বড় হাতিয়ারে পরিণত করেছে বিচার বিভাগকে। যে বিচারালয় ছিল মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল, সেই বিচারাঙ্গণকে পরিণত করা হয়েছে আওয়ামী স্বর্গ আর বিরোধীদের জন্য আতঙ্কপুরী। তাদের নিজেদের লোকদের জন্য এক আইন-সাত খুন মাফ। আর বিরোধীদের জন্য ফরমায়েশি নির্দেশ অনুযায়ী চলে বিচার কার্যক্রম। তারা জামিনও পাবে না। বিনা দোষে তাদের সাজা ভোগ করতে হবে। বিচারকের আসনে বসানো হয়েছে বাছাই করা দলীয় লোকজন। বিচারের বাণী আক্ষরিক অর্থে আজ নিভৃতে কাঁদছে।
তিনি বলেন, শরীয়তপুর-৩ আসনের ধানের শীষের সাবেক প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন অপুকে গত প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর কারারুদ্ধ রেখে তার ওপর চলছে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের প্রতিহিংসাপরায়ণতার চরম হিংস্রতা। গুরুতর অসুস্থ অপুর জীবন হুমকিতে ফেলা হয়েছে। বিভিন্ন সাজানো মামলায় কারাগারে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে অপুকে। যেসব মিথ্যা মামলায় অপুকে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে তার কোনোটিই প্রমাণ করতে পারেনি আজ্ঞাবহ আদালত। যে মামলায় তাকে আটক রাখা হয়েছে একই ধারার মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-সন্ত্রাসী, লুটেরা-ব্যবসায়ীরা জামিনে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর অপুর মামলায় জামিনের শুনানি করার তারিখও দিচ্ছে না আদালত। মিয়া নুরউদ্দিন আহমেদ অপুকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকিয়ে জামিন না দেয়া অমানবিক ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
রিজভী অভিযোগ করেন এখনও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং হয়রানি থেমে নেই। গতকাল সোমবার নেত্রকোনা জেলায় জিয়া পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব এম নাজমুল হাসান, কেন্দুয়া উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ মতিন রুমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রোমান আহম্মেদ, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন আহম্মেদ, নান্দিকোনা ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোমেন, যুবদল নেতা মো. জহিরুল, ৫নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. মুখলেছ মিয়া, যুবদল নেতা মো. সাদ্দাম মিয়া, বিএনপি নেতা মো. হারুন মিয়া ও ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মেহেদী হাসান রবিন একটি মিথ্যা মামলায় আদালতে জামিন চাইতে গেলে আজ্ঞাবহ আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
গত বুধবার রাজশাহী জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রেজাউল করিম টুটুল আদালতে জামিন চাইতে গেলে তাকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমানকে ২৮ মে রাতে কল্যাণপুর থেকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা তুলে নিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব একটি মিথ্যা মামলার ফরমায়েশি রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরা কারাগারে অন্তরীণ আছেন। তিনি এখন শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ। কারা কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা দিচ্ছে না। আমি অবিলম্বে হাবিবের উন্নত চিকিৎসা দিতে আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় কিছু হলে সরকারকেই এর দায় বহন করতে হবে।
এছাড়াও গত ২৩ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম প্রকাশকে রাত ১২ টার সময় পুলিশ বিনা কারণে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতন করে। বর্তমানে তার অবস্থা সংকটাপন্ন।