সহিংসতার ডাক ট্রাম্প-সমর্থকদের
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:১২ পিএম, ৩১ মে ২০২৪ শুক্রবার
পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের একটি আদালত এ রায় দেন। ওই মামলায় আনা ৩৪টি অভিযোগের সবকটিতেই দোষী প্রমাণিত হয়েছেন রিপাবলিকান এ নেতা। আগামী ১১ জুলাই এ মামলায় ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা করা হবে। সাবেক এ প্রেসিডেন্টের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে আইনজ্ঞরা বলছেন, তাকে জরিমানা করার সম্ভাবনাই বেশি।
এ রায়ের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলেন। খবর বিবিসির।
ট্রাম্পপন্থি ওয়েবসাইটগুলোতে দাঙ্গা, বিপ্লব এবং হিংসাত্মক প্রতিশোধ নেওয়ার ডাক দিচ্ছে তারা। অনেক সমর্থক এও বলেছেন, ট্রাম্পের দোষী সাব্যস্ত হওয়া এটাই প্রমাণ করে যে, আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে; এখন কেবল সহিংস কিছু করাটাই দেশকে বাঁচাতে পারে।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে দীর্ঘ পাঁচ সপ্তাহ ধরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই মামলার শুনানি চলে। এর আগে তারা রায় নিয়ে ১১ ঘণ্টা আলাপ-আলোচনা করেছেন। ১২ জন অভিজ্ঞ বিচারকের একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয় এ রায়ের জন্য। এরপরই পুরো বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের পর তাকে সব অভিযোগে দোষী করা হয়। তবে রায় ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, এটা তার জন্য ‘মর্যাদাহানিকর’। তিনি ন্যায়বিচার পাননি। আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন।
এ বিষয়ে বিচারকে অন্যায্য দাবি করে ট্রাম্পের শীর্ষ আইনজীবী উইল স্ক্যার্ফ ফক্স নিউজকে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের আইনি দল আপিলের সব বিকল্পগুলো পর্যালোচনা করে দেখছে। তিনি বলেন, এই মামলার সবগুলো দিকই আপিলের উপযুক্ত, যতটা দ্রুত পারি আমরা আপিল করতে যাচ্ছি। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরেক আইনজীবী টড ব্লেনচ বলেছেন, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপিল করা হবে। আইনজীবী ব্লেনচ সিএনএনকে বলেছেন, ‘ট্রাম্প বিচার-পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ায় এগোবেন। যদি তিনি সফল না হন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব আমরা আপিল করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি নিউইয়র্কের আদালতে সাজা হয়, তাহলে সেখান থেকেই আপিল করা হবে।’ ধারণা করা হচ্ছে, এবার এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন ট্রাম্প।
অন্যদিকে ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন ট্রাম্পকে ধ্বংস করার লাইফ মিশনে নেমেছেন। এমএসএনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কোহেন বলেন, এই রায়ে আমি স্বস্তিবোধ করছি, কিন্তু বিস্মিত হইনি। দিন শেষে সত্যের জয় হলো। এটা জবাবদিহি, আমেরিকার এখন এটি দরকার।
এর আগে কোহেনই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি তথ্য গোপনের জন্য পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে অর্থ প্রদানের জন্য সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। আদালতে ট্রাম্পের আইনি দল তাকে জেরা করেছে। আইনজীবী টড ব্লেনচ তাকে ‘সর্বকালের সেরা মিথ্যাবাদী’ হিসাবে উল্লেখ করেছিল। জবাবে কোহেন ব্লেনচকে ‘সর্বকালের সবচেয়ে বোকা আইনজীবী’ হিসাবে বর্ণনা করেছিল।
উল্লেখ্য, এটাই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একমাত্র মামলা নয়। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল বদলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বর্তমানে একটি মামলা চলছে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট হিসাবে মেয়াদ শেষের পর হোয়াইট হাউস থেকে সরকারি গোপন নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে করা আরও একটি মামলা ঘাড়ে নিয়ে ঘুরছেন তিনি। ৭৭ বছর বয়সি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা এই মামলায় অভিযোগে বলা হয়, ২০০৬ সালে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। পরে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে মুখ না খুলতে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে স্টর্মিকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুস দেওয়া হয়। তার হাতে এ অর্থ তুলে দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন। তবে ব্যবসায়িক নথিপত্রে এ লেনদেনের তথ্য গোপন করা হয়েছিল। যদিও এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের এই রায়ের পর কোনো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি বিরোধীদলীয় ডেমোক্রেটের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তার প্রতিনিধি হিসাবে বিবৃতি দিয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচনি প্রচার টিমের পরিচালক মাইকেল টেইলার এবং হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ইয়ান স্যামস। বিবৃতিতে তারা বলেন, নিউইয়র্কের আদালতে আজ আরও একবার প্রমাণিত হলো- ‘কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়’। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আদালতের রায় নিয়ে সমর্থকদের উচ্ছ্বসিত হতে বারণ করেছেন জো বাইডেন। এর পরিবর্তে তিনি সমর্থকদের নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মার্কিন জনগণকে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দেওয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ওভাল অফিসে (আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়) না রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জো বাইডেন। তিনি বলেন, শুধু ব্যালট বাক্সের মাধ্যমেই ট্রাম্পকে ওভাল অফিসের বাইরে রাখা সম্ভব। অন্যদিকে রায়ের কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্পের বড় মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প শৈশবে তার বাবার সঙ্গে তোলা একটা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে ইভাঙ্কা লিখেছেন, ‘বাবা আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ সঙ্গে একটি লাভ ‘ইমোজি’ দেওয়া হয়।