সুন্দরবনে আজ থেকে ৩ মাস প্রবেশ নিষিদ্ধ
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:০৫ পিএম, ৩১ মে ২০২৪ শুক্রবার
সুন্দরবনে তিন মাসের জন্য মাছ ধরার পাশাপাশি সব ধরনের পর্যটকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ ঘোষণা করেছে বনবিভাগ। শনিবার (১ জুন) থেকে আগামী ৩০ আগস্ট পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। সুন্দরবনের মৎস্যসম্পদ রক্ষায় ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানসের (আইআরএমপি) সুপারিশে ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর বনবিভাগ এ সিদ্ধান্ত নেয়।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, ১ জুন থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত তিন মাস মাছের প্রজনন মৌসুম। তাই এই সময় মাছ ধরা বন্ধের পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকবে সুন্দরবন প্রবেশের সব পারমিট। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবার সুন্দরবনে জেলে ও পর্যটকদের প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হবে।
জেলেরা জানান, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকাসহ ২৫ ফুটের কম প্রশস্ত খালে সারা বছর মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। নিষিদ্ধ এসব নদী-খাল ছাড়া সারা বছর প্রতি গোনে (প্রতি মাসের অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময়) উপকূলীয় এলাকার হাজার পারমিটধারী জেলে মৎস্য আহরণ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে সুন্দরবনসংলগ্ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার ওপর মৎস্য আহরণ তিন মাস বন্ধ থাকলে জেলেদের জীবন-জীবিকা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
শরণখোলার মৎস্য ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ও জালাল মোল্লা জানান, সুন্দরবনের জেলেদের মাছ ধরা ছাড়া এবার আর কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। এ বছর তিন মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকলে জেলেরা ছেলেমেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকবে। উপজেলার বকুলতলা গ্রামের নুর ইসলাম মুন্সি, সোনাতলা গ্রামের আসাদুল মাতুব্বর, খুড়িয়াখালী গ্রামের জেলে হাবিব হাওলাদার ও জামাল হাওলাদার জানান, আমরা ৩০-৪০ বছর ধরে বংশপরম্পরায় সুন্দরবনে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছি। এখন মাছ ধরা বন্ধ করে দিলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। সরকার আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে আমরা আর সুন্দরবনে যাব না।
সুন্দরবন খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, তিন মাস সুন্দরবনের পাস-পারমিট বন্ধ থাকলে জেলেদের একটু সমস্যা হয়। জেলেদের ক্ষতির বিষয়টি মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলেন, মাছ ধরা বন্ধের সময় জেলেদের জন্য অল্প কিছু চাল হিসাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু পর্যটননির্ভর মানুষগুলোর জন্য কী আছে? তারা কী করে খাবে? এ কারণে সুন্দরবনে পর্যটনের ব্যবস্থা খুলে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পর্যটক ব্যবসায়ীসহ এর ওপর নির্ভরশীল সবাই আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এই অংশে ২১০ প্রজাতির হোয়াইট ফিশ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা এবং গলদা চিংড়ি রয়েছে।