অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

দেশ চালাচ্ছে অদৃশ্য শক্তি: মির্জা ফখরুল

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৪৫ পিএম, ১১ মে ২০২৪ শনিবার  

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, ‘এক অদৃশ্য শক্তি, দেশ চালাচ্ছে । সেই শক্তির নির্দেশে তারা (আওয়ামী লীগ) বাংলাদেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা বিলীন করে দিয়েছে। সূক্ষ্মভাবে ভিন্ন মোড়কে দেশে পুনরায় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার।’ 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ সব রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ দাবি করেন। 

শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে জাতীয়তাবাদী যুবদল এই সমাবেশ করে। শুরুর আগে সমাবেশস্থলের পাশেই একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। বিএনপির দাবি সমাবেশকে বানচাল করতে সরকারের লোকরা এই ককটেল ফাটিয়েছে। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ১৮ বছর ধরে সন্ত্রাসী কায়দায় গণজাগরণকে নষ্ট করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ব্যাংকগুলো লুটপাটের মাধ্যমে শেষ করে দিয়েছে। নতুন আইনের মাধ্যমে ব্যাংক লুটপাট করছে সরকার। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের সহযোগী হয়েছে। বিমানবন্দরগুলোতেও হয়রানি করা হয়। এখানে জড়িত আছেন দেশের পুলিশ, প্রশাসনসহ অনেকেই। বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নেই। এখন আবার ডামি নির্বাচন শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে, আর তাদেরই লোকজন বিরোধী প্রার্থী হবে। এখানে কিছু গৃহপালিত দলও আছে। সরকার একটা তামাশা শুরু করেছে। এজন্য তো দেশ স্বাধীন করিনি। দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম।

‘আওয়ামী লীগের লজ্জা-শরম কিছু নেই’ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসের মধ্যেই আওয়ামী লীগের জš§। নমরুদ-ফেরাউন, হিটলার, মুসোলিনি টিকে থাকতে পারেনি। এ দেশের মানুষ কিন্তু সংগ্রামী। আমাদের আন্দোলনে হয়তো ভাটা পড়েছে, কিন্তু থেমে যায়নি। আন্দোলন চলছে। অনেক নেতাকর্মী এখনো জেলে। আমাদের নেতা তারেক রহমান বিদেশে আছেন। তাকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। 

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার টিকেই আছে মিথ্যা মামলা ও আদালতকে ব্যবহার করে। নির্যাতনের হাতিয়ার হিসাবে মিথ্যা মামলা ও আদালতকে ব্যবহার করছে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনকে নিদারুণভাবে পণ্ড করে দিয়েছে। তারা এভাবে আন্দোলন দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে এভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন ও গুম-খুন করে গণতন্ত্র ও স্বাধিকারের আন্দোলন কখনোই স্তিমিত করা যাবে না। অতীতেও যায়নি।

যুবদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে ক্ষমতায় এসে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে ’৭৫ সালের মতো আবারও একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে চায়। সেটা হলো গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল। তাই তরুণ-যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। জনগণকে নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। না হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব জলাঞ্জলি যাবে।

খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়া শুধু বাংলাদেশের মজলুম নেত্রী নন। তিনি সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা, আত্মত্যাগকারী নেতাদের অন্যতম। তিনি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা ও ফিরে পাওয়ার জন্য আজীবন লড়াই করছেন। যিনি গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। কিন্তু দানব সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছে। কারণ সরকার মনে করে খালেদা জিয়া মুক্ত হলে, তাদের মসনদ টিকবে না। জনগণের উত্তাল তরঙ্গের মধ্যে ভেসে যাবে। সেজন্য খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মী দীর্ঘদিন কারাগারে। আমি খালেদা জিয়াসহ গ্রেফতার সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করছি। ’ 

‘বিএনপি সন্ত্রাস করছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বিএনপি সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। সন্ত্রাসীর ইতিহাস হচ্ছে আওয়ামী লীগের। আপনারা মওলানা ভাসানীকে বের করে দিয়েছিলেন। পাকিস্তান আমলে ডেপুটি স্পিকারকে পিটিয়ে কারা হত্যা করেছিল সেটা ভুলে যাইনি। ১৮ বছর ধরে দেশের জনগণের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে বাকশাল কায়েমের আয়োজন চূড়ান্ত করেছেন। সাধারণ মানুষ বাজারে গেলে চাল, ডাল, পেঁয়াজ-রসুন কিনতে পারে না। প্রতিদিনই জিনিসের দাম বাড়ছে। রেলের ভাড়া বাড়ছে। রিকশাওয়ালা, মধ্যবিত্তরা ঠিকমতো খেতে পারে না। অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপির সিনিয়র নেতারাসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে জেলখানার  ভেতরে নির্যাতন করা হয়েছে। জেলখানা হচ্ছে বর্তমানে একটি নির্যাতনের জায়গা। সরকার ২৮ অক্টোবর বোমা ফাটিয়ে, জোরজবরদস্তি করে আমাদের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করেছে। দেশের সর্বস্ব বিলিয়ে দিলেও সরকার ক্ষমতায় থাকতে চায়। 

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে কোনো টাকা নেই। ভারতের আদানি গ্রুপ ১০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে বাংলাদেশ থেকে। দেশের টাকা লুট করে সিঙ্গাপুরে সামিট গ্র“পের আজিজ খান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। একদলের দেশের টাকা খাওয়ার পর এখন নদী খাওয়া বাদ আছে। পত্রিকায় এসেছে। এই সরকার দেশের মানুষকে তোয়াক্কা করে না। এই অগণতান্ত্রিক সরকার হচ্ছে দেশের জন্য একটি আপদ।

যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, যুবদল নেতা নূরুল ইসলাম নয়ন, কামরুজ্জামান দুলাল, রুহুল আমিন আকিল, জাকির হোসেন সিদ্দিকী, গোলাম মাওলা শাহিনসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠন ও যুবদলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।