উপজেলা নির্বাচন জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে: বিএনপি
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:১২ পিএম, ৮ মে ২০২৪ বুধবার
আওয়ামী প্রতারণার ফাঁদে পা না দিয়ে দেশের ভোটাররা উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুর কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের স্বজন ছাড়া অন্য কেউ নির্বাচিত হতে পারে না। ভোটারদের ভোটের প্রয়োজন হয় না। ফলাফল নির্ধারিত থাকে, সেটিই ঘোষিত হয়।
বুধবার (৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, মানবজাতি স্বৈরাচারের দুঃশাসনে বেশিদিন লুকিয়ে থাকতে ও নীরব থাকতে পারে না। অধিকার আদায়ে বুক বেঁধে সাহসের সাথে এগিয়ে যায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একনায়কতন্ত্রের অপরাধগুলো ধিক্কার জানায়। দমনমূলক শক্তি ভোটারদের নিগ্রহ করছে, উগ্র-রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। নিকৃষ্ট লুণ্ঠনের মাধ্যমে উপজেলা প্রতিষ্ঠানকে করা হয়েছে লুটেরা ও দস্যু দলের আখড়া।
তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে ভোটারবিহীন নির্বাচনে দু’বার উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে একশো বিঘার বেশি জমির মালিক হয়েছে। অথচ আইন অনুযায়ী ৬০ বিঘার বেশি জমি থাকতে পারে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবী যতই উচ্চারিত হয়ে ততই সরকারের কাছে জেল—জুলুমের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। যারা দ্বিতীয়বার প্রার্থী হয়েছেন তাদের আগের হলফনামায় ঘোষিত আয়ের চেয়ে কয়েকজনের আয় বেড়েছে ৩ হাজার শতাংশের বেশি। কারো কারো আয় বেড়েছে ১ হাজার শতাংশের বেশি। গাইবান্ধায় একজন প্রার্থীর আয় বেড়েছে ৪ হাজার শতাংশ।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশির্বাদে ভোটারবিহীন নির্বাচনে কেউ চেয়ারম্যান হলে হাতিশালে হাতি ও ঘোড়াশালে ঘোড়ার অভাব হয় না। আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের স্বজন ছাড়া অন্য কেউ নির্বাচিত হতে পারে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের পর এখন আবার আওয়ামী সাদা পোশাকধারী বাহিনী নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। নতুন করে গুম ও বিরোধীদলের ওপর হিংস্র আক্রমণ প্রতিদিনের সংবাদে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, লুণ্ঠনের রাজনীতি ও অর্থনীতির দেউলিয়াপনার বাতাবরণ, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেকে আড়াল রাখার বিধিনিষেধের বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে মানুষের মনোযোগ ভিন্ন খাতে সরিয়ে দিতে দেশময় অশান্তি জিইয়ে রাখার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন করে ক্ষমতা করায়াত্ত করে নিজেদের সুবিধাভোগী শ্রেণী আওয়ামী অলিগার্কির লুটপাট ও টাকা পাচারের লোমহর্ষক কাহিনী, ক্ষমতাসীনদের নিজের আর পরিবারের আর্থিকভাবে গুছিয়ে নেওয়ার ধান্দাতে সারাদেশ বিপর্যস্ত। আর তাই ডাকাতি-লুটের সব অভিনব ঘটনা ঢাকতেই আওয়ামী হিংস্রতার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, সিদ্ধেশরী মাঠ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়— ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মাহিদুল হাসান হিরুকে সাদা পোশাকধারীরা মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া। যে গাড়িতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় তার নম্বর—ঢাকা মেট্রো—চ, ৫২-১৪৫০। আবার নিজ কক্ষে ৩ ঘণ্টা আটকে রেখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের দুই নেতা নাফিউল ইসলাম জীবন ও তার বন্ধু ইউনুস খানকে মারধর ও চরম নির্যাতন করা হয়। পিস্তল দেখিয়ে পায়ে গুলি করার হুমকি দেওয়া হয়। অবৈধ সরকারের অনাচারমূলক স্বার্থসিদ্ধির সুসজ্জিত সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে ছাত্রলীগকে।
ভোরে পঞ্চগড়ে তেঁতুলিয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক আব্দুল জলিল ও ইয়াসিন আলী নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রিজভী।
বিএনপির পক্ষ থেকে নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত যেন এখন সরাসরি রক্তাক্ত আগ্রাসন চালাচ্ছে বাংলাদেশে। এটি সম্ভব হয়েছে ডামি সরকারের আত্মা বিক্রির জন্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে দুজন বাংলাদেশি নিহতের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটির বিচার চেয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। অথচ ভারতের এই রক্তাক্ত নির্মমতার বিষয়ে তিনি নিশ্চুপ। তাদের সব কসুর তিনি মাফ করে দেন।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে বিএসএফের রক্তপিঁপাসুর মাত্রা যেন দিন দিন তীব্র হচ্ছে। আওয়ামী সরকারের একতরফা ভারত তোষণ নীতির কারণেই বিএসএফ বাংলাদেশিদের মানুষ বলে গণ্য করে না।