শিশুকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি, দুদিন পর মিলল লাশ
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৪৩ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২৪ বুধবার
বাবা অন্যের বাড়িতে দিনমজুরির কাজে যায়। মাও ঝিয়ের কাজে ব্যস্ত। বাড়ির পাশেই খেলছিল শিশু মাহিম। এই সুযোগে অপহরণকারী কৌশলে শিশুকে ভুলিয়ে অন্যত্র নিয়ে পরিবারের কাছে মুঠোফোনে মুক্তিপণ দাবি করে। শিশুটির পরিবার কষ্ট করে মুক্তিপণ জোগাড় করলেও নিখোঁজ হওয়ার দুদিন পর সন্তানের লাশ পায় গজারি বনের ভিতরে। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামে।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই এলাকার কালিরটেক বনের ভেতর থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে পুলিশ অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বনের ভিতরে অভিযান চালিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। এর আগে রোববার (৭ এপ্রিল) শিশু মাহিম নিখোঁজ হয় বাড়ির পাশ থেকেই। পরে তার পরিবার বিষয়টি শ্রীপুর থানা পুলিশকে জানিয়েছিল।
মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় জড়িত রনি মিয়া (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, মুক্তিপণের টাকা চেয়ে না পেয়ে শ্বাসরোধ করে শিশুটিকে খুন করা হয়। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথমে খুনির অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বনের ভেতর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
শিশু মাহিম হত্যার একমাত্র আসামি রনি মিয়া গোসিঙ্গা ইউনিয়নের সাভারচালা গ্রামের মৃত আবদুস ছাত্তারের ছেলে। সে পেশাদার চোর ও নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এর আগেও সে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন জেল খেটেছে।
নিহত শিশুর নাম মেহেদী হাসান মাহিম (৮)। সে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার বেড়াইদ গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে। শিশু মাহিম বাবা-মায়ের সঙ্গে শ্রীপুর পৌরসভার মাধখলা গ্রামে ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। তার বাবা আমিনুল ইসলাম দিনমজুরের কাজ করে ও মা বাসা-বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে।
শিশুর স্বজনরা জানায়, গত রোববার বাড়ির পাশে খেলা করার সময় মাহিম নিখোঁজ হয়। রাতে সে বাড়ি না ফিরলে সবখানে খোঁজাখুজি করেও না পেয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছিল। একদিন পর একটি অচেনা নাম্বার থেকে রনি পরিচয় দিয়ে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ সময় ধারদেনা করে টাকা জোগাড় করার পর সেই নাম্বারে (রবিকে) ফোন দিলে আর যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছিল।
শ্রীপুর মডেল থানার এসআই ইসমাইল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় জড়িত রনি মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রনি পাশের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতো। সেই সুযোগে কৌশলে শিশুটিকে অপহরণ করে। পরে পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পুলিশ আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুনি রনির অবস্থান নিশ্চিত হলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে গভীর জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শ্রীপুর মডেল থানার ওসি আকবর আলী জানান, এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তি খুনের কথা স্বীকার করেছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।