একীভূত ব্যাংকের পরিচালক-শীর্ষ কর্মকর্তারা কোনো পদে থাকতে পারবেন না
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৪২ পিএম, ৫ এপ্রিল ২০২৪ শুক্রবার
একীভূত হওয়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং শীর্ষ নির্বাহীরা অধিগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো পদে থাকতে পারবেন না। এমন শর্ত যুক্ত করে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংক একীভূতকরণ নীতমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে বলা হয়েছে, একীভূত প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীদের হিসাব চালিয়ে যাওয়া কিংবা তাদের অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়টি সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়া অধিগ্রহণের তিন বছরের মধ্যে একীভূত প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মীকে চাকরিচ্যুত করতে পারবে না অধিগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রম্পট কারেকটিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক জারির চার মাস পর এই গাইডলাইন ঠিক করা হলো। কিন্তু জোরপূর্বক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যায়ক্রমে সিদ্ধান্ত নেবে বা অগ্রসর হবে।
প্রথমত পিসিএ নির্দেশনার আলোকে দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১২ মাসের পারফরম্যান্স উন্নত করার নির্দেশনা দেওয়ার আগে- ঋণ বিতরণ, মুনাফা ও অন্যান্য সূচকের ভিত্তিতে চারটি ক্যাটাগরিতে ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করা হবে। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ও দুর্বলতা অব্যাহত থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের স্বেচ্ছায় অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হতে বলবে।
দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো মূলধন ঘাটতি, উচ্চ খেলাপি ঋণ ও তারল্য সংকটে ভুগলে বাংলাদেশ ব্যাংক জোরপূর্বক একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু করবে। ধুঁকতে থাকা পদ্মা ব্যাংককে শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংক অধিগ্রহণ করতে সম্মত হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের এই গাইডলাইন এলো।
একইসঙ্গে খেলাপি ঋণ ও সুশাসনের অভাবে ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি কমাতে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক- বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), সোনালী ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে একীভূত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গাইডলাইনে বলা হয়েছে, পারস্পরিক সম্মতিতে একীভূত হতে আগ্রহী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে প্রাথমিক সম্মতি নেওয়ার আগে তাদের পরিচালনা পর্ষদের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরে যথাযথ মূল্যায়নের জন্য একীভূত প্রস্তাবের নিরীক্ষার জন্য একজন নিরীক্ষক নিয়োগ দেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন চাওয়ার আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতির জন্য একটি বিশেষ সভা করতে হবে। এছাড়া অধিগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানকে পৃথক ইউনিট গঠন করতে হবে বা অধিগ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা নিতে হবে।
জোরপূর্বক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা আগ্রহী ক্রেতাদের কাছে দরপত্র চাইবে। তবে দরপত্র প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিকে অধিগ্রহণের জন্য একটি বা একাধিক ব্যাংককে বলতে পারবে।
গাইডলাইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে উপযুক্ত মনে করবে- সেসব আমানতকারী বা শেয়ারহোল্ডারদের দাবি নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
স্বেচ্ছায় একীভূতকরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার অধিগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা দেবে, কারণ একীভূতকরণের কারণে ভালো ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
এমনকি ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও, বিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত, লিকুইডিটি কভারেজ রেশিও এবং নেট স্টেবল ফান্ডিং রেশিও রাখার ক্ষেত্রে অধিগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিথিল নিয়ম ভোগ করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদ্যমান সুবিধার আওতায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তারল্য সুবিধা বাড়াবে এবং দীর্ঘমেয়াদি বন্ড কিনে নগদ অর্থ সরবরাহ করবে।
অধিগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান মূলধন ভিত্তি সম্প্রসারণে শেয়ার, পারপেচুয়াল বন্ড এবং সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যু করার জন্য ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রকের কাছ থেকে সুবিধা ভোগ করবে।
এছাড়াও স্বেচ্ছায় একীভূতকরণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আবেদনের পরে সরকার কর্তৃক বিশেষ নীতি সহায়তা বাড়ানো হতে পারে।