বন্ধু, সহপাঠী খালিদকে নিয়ে শিল্পী ফাহমিদা নবীর আবেগঘন বার্তা
এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০০ পিএম, ১৯ মার্চ ২০২৪ মঙ্গলবার আপডেট: ১০:০১ পিএম, ১৯ মার্চ ২০২৪ মঙ্গলবার
সদ্যপ্রয়াত জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী খালিদকে নিয়ে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন আরেক জনপ্রিয় শিল্পী ও খালিদের সহপাঠী, বন্ধু ফাহমিদা নবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে দেওয়া একটি দীর্ঘ পোস্টে তিনি যেমন বন্ধু খালিদকে স্মরণ করেছেন তেমনি শিল্পীদের জন্য রেখেছেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।
ফাহমিদা নবীর পুরো লেখা নিচে তুলে ধরা হলো-
খালিদ গান গাইতো সরল ভাবে। জীবনের সরলতার আদলে। সবসময় প্রাণবন্ত থাকতো, হেসে বেড়াতো, আবার প্রাণহীনতার আরেকটা দিক দেখেছি ওর মধ্যে যে কারণে ওর স্যাড রোমান্টিক গানগুলো শ্রোতার হৃদয়ে সাড়া জাগাতো।
প্রতিটি সুপারহিট গানের মাঝেই সুখের অনুভূতি থাকে। খালিদের সুপারহিট গানের সংখ্যা অনেক, তার প্রায় সব গানই সুপারহিট যা একজন শিল্পীর জন্য পরম পাওয়া। আশির দশকেই শ্রোতার হৃদয়ে সে জায়গা করে নিয়েছিলো। আজ এতো বছর পরেও শ্রোতার কাছে তার গানের আবেদন বদলায়নি। এখানেই একজন শিল্পীর জীবনের সার্থকতা। ভালো গানগুলো স্বমহিমায় বেঁচে থাকে।
আমার আর খালিদের বেশ কয়েকটা ডুয়েট গান হয়েছে ‘নিছক স্বপ্ন’ অ্যালবামে। আমাদের “ঘুমাও” গানটা তো অনেক শ্রোতার প্রিয় একটি গান। খালিদ বলতো “নুমা” তুমি কিন্তু বেশি ভালো গেয়েছো! এখন সেই স্মৃতি মনে পড়ে কষ্ট পাচ্ছি। আমরা একসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে পড়াশোনা করেছি। খালিদ আমার সহপাঠি, সহশিল্পী এবং বন্ধু। আমি ওর মধ্যে কোন অহংকার দেখিনি কোনদিন। এই তো সেদিনই কথা হলো ওর সাথে, আরও ডুয়েট গান করতে চাইলো। বললাম করবো। আমেরিকায় প্রোগ্রামে ওর ছেলের গান শুনেছি জেনে খুশী হলো। আবার আমাদের দেখা হবে সে কথাও হলো। কিন্তু দেখা হলোনা!
ওর অকালে চলে যাওয়া খুব কঠিন করে দিলো আমাদের সবাইকে বিশেষ করে শিল্পীদের। জীবনের প্রতি উদাসীনতা কেউ রাখবেন না ছোট বড় সব শিল্পীকেই কথাটা বলছি। নিজেকে ভালোবাসুন। আমাদের আত্মসচেতন হতে হবে। পরস্পরের প্রতি সহানুভূতির পরিমান আরো বাড়াতে হবে।
এটা সত্য যে সঙ্গীতের অঙ্গন এখন আর আগের মতো নেই। সহজাত প্রেরণায় এগিয়ে আসা স্বভাব শিল্পীর জীবন এখন কন্টকাকীর্ণ। এখন গান আর আগের মতো হয় না! তাই গানের পাশাপাশি নিজের জীবন নিয়ে ভাবুন। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য ভাবুন। যতটুকু কাজ হয়েছে যথেষ্ট, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন, কাজ করুন, হতাশাগ্রস্থ হবেন না। গানের জন্য ভালোবাসা, ভাবনা, সুর, কথার গভীরতা লাগে যা এখন হয়ে উঠে না। এখন কর্পোরেট কালচার! এখানে গান হয়না, হয় এ্যাড মার্কেটিং! সেটাকে গান বলা যায়না!
সাদী ভাই চলে যাওয়া আর খালিদের মৃত্যু আমাদের আরো বুঝিয়ে দিয়েছে যে, শ্রোতা শিল্পীকে যে আসনে বসায় তার জন্য বহুদিন কাজ করতে হয়না একটা ভালো গানই হয়তো যথেষ্ট তাকে মনে রাখার জন্য, শিল্পীকে ভালোবাসার জন্য। খালিদ তার উদাহরন। সে খুব বেশি গান করেনি। প্রকৃত শিল্পীস্বত্বা নিয়ে আন্তরিকভাবে সাধনা করলেই তা সম্ভব।
শিল্পীদের ভালো থাকতে হবে তার নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য। শিল্পীর ক্ষতি হলে সমাজ ব্যাথিত হয়, পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাই আমাকে আমারই দেখতে হবে। অভিমান অভিযোগ কোন কাজে আসেনা। মনে রাখতে হবে, আমাদের কষ্ট আছে কিন্তু পাশাপাশি অনুসরণীয় হয়ে বাঁচতে হবে কেননা আমাদেরকে দেখে মানুষ অনেক কিছু শেখে। তাই শিল্পীকে সুস্থ্, সাহসী ও কল্যাণকর হয়ে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে কোন প্রকার নেতিবাচক বার্তা যেন তৈরি না হয়। একই সাথে বলছি সমাজের অন্যান্য পেশার মানুষও যেনো সরলতার আদলে শিল্পীস্বত্বা নিয়ে বেঁচে থাকা এসব মানুষগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল হন কেননা শিল্পীরা কাজ করে মানুষের জন্য।
খালিদের বউ শামিমা আর তাদের একমাত্র সন্তানের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। ওর আত্মার শান্তি কামনা করছি, মহান আল্লাহতালা তাকে জান্নাত দান করুন।