প্রেমিকাকে ধর্ষণের পর হত্যা, প্রেমিকের যাবজ্জীবন
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০৮ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ মঙ্গলবার
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে প্রেমিকাকে ধর্ষণের পর হত্যা শেষে মাটিচাপা দিয়ে গুমের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ইউনুছ আলী নামে এক যুবককে পৃথক ধারায় দুইবার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সাজাপ্রাপ্ত ইউনুছ আলীর উপস্থিতে মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালত রায় ঘোষণা করেন।
আদালত রায়ে তিনটি ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইউনুছ আলীকে পৃথক সাজা দিয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজার সাথে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং হত্যার অভিযোগে আদালত ইউনুছ আলীকে আবারো যাবজ্জীব কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার অর্থদণ্ড করেছেন। হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। পৃথক তিনটি সাজাই একই সঙ্গে চলবে।
সাজাপ্রাপ্ত ইউনুছ আলী (২৭) আড়াইহাজার থানার বিষনন্দী এলাকার আবদুল ওহাবের ছেলে।
মামলা সূত্র জানা যায়, আড়াইহাজার থানার মানিকপুর এলাকায় মামা ইলিয়াস মোল্লার বাড়িতে থাকতেন ফাতেমা আক্তার। তার পাশের বাড়িতেই থাকত ইউনুছ আলী। দীর্ঘ ৯ বছর মালয়েশিয়ায় প্রবাস জীবন কাটিয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউনুছ দেশে ফেরেন। তখন ফাতেমার নানি প্রায়ই ইউনুছকে বাড়িতে ডেকে আনতেন।
একপর্যায়ে ফাতেমার সঙ্গে ইউনুছ আলীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শারীরিক মেলামেশা শুরু করেন তারা। ইউনুছ ও ফাতেমার প্রেমের সম্পর্কটি দুই বাড়িতেই জেনে যায়। এরই মধ্যে ইউনুস বাড়ি পালটে বিশনন্দী ভেংলায় নতুন বাড়িতে চলে যান। এরপর থেকেই ইউনুছের বিয়ের জন্য বাড়ি থেকে পাত্রী খোঁজা শুরু হয়ে যায়। এদিকে গর্ভবতী হওয়ার আশঙ্কায় এবং ইউনুছের জন্য কনে দেখার খবর জানতে পেরে ফাতেমা বিয়ের জন্য ইউনুসকে চাপ দেন; কিন্তু ইউনুছ রাজি ছিল না।
পরে ২০২০ সালের ১০ আগস্ট বিকালে ইউনুছ মোবাইল ফোনে ফাতেমাকে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে শেষে ইউনুছদের নতুন বাড়ির পেছনে গাছগাছালিবেষ্টিত জায়গায় ফাতেমাকে রেখে বাড়ি যান ইউনুছ।
রাত ২টার দিকে সে ফাতেমার কাছে যায় এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। একপর্যায়ে ইউনুছ পেছন থেকে বাহু দিয়ে ফাতেমার গলা চেপে ধরে এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর পার্শ্ববর্তী ডালিমের নির্মাণাধীন ঘরের ভেতর লাশ নিয়ে যায় এবং ভিটি খুঁড়ে লাশ মাটিচাপা দেয়। তার ৫ দিন পর ওই বাড়ির মালিক ডালিম ঘরের ভিটি পাকা করতে গিয়ে দুর্গন্ধ পান এবং কোদাল দিয়ে বালু সরিয়ে ফাতেমার অর্ধগলিত লাশ খুঁজে পান। তখন বিষয়টি থানায় জানানো হলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় পিবিআই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ওই বছরে ১০ ডিসেম্বর সিলেটের জৈন্তাপুর থানায় বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালিয়ে ইউনুছ আলীকে গ্রেফতার করে। এরপর তার কাছ থেকে পাওয়া যায় হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা।