বিদায়ী বছরে প্রবাসী আয় ২২ বিলিয়ন ডলার
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:১০ পিএম, ২ জানুয়ারি ২০২৪ মঙ্গলবার
রেকর্ড সংখ্যক শ্রমিক বিদেশ গেলেও কাঙ্ক্ষিত রেমিট্যান্স আসেনি। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালে দেশে ২ হাজার ১৯২ কোটি (২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের বছরের চেয়ে ৬৩ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২২ সালে ১২ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১২৯ কোটি (২১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৯৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। তার আগের বছর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৭০ কোটি ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের একই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৯ কোটি ডলার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে হারে দেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে সে হারে রেমিট্যান্স বাড়েনি। কারণ, ডলারের দাম বেশি পাওয়া ও পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় হুন্ডি বা অনানুষ্ঠানিকভাবে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। ফলে আশানুরূপ রেমিট্যান্স আসেনি। ১ কোটি ২০ লাখ প্রবাসীর পাঠানো কষ্টার্জিত অর্থ দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছে। প্রবাসী শ্রমিকের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ হলেও প্রবাসী আয়ে সপ্তম স্থানে।
সবশেষ প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ১১ মাসে ১২ লাখ ১০ হাজার কর্মী বিদেশে গেছেন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৪০ হাজার।
ডলারের তীব্র সংকটের কারণে এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে অনেক ব্যাংকের। এমন পরিস্থিতিতে বছরের শেষ সময়ে বেশি দামে রেমিট্যান্স কেনার সুযোগ দেওয়া হয়। এতে করে কিছু কিছু ব্যাংক নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দিয়ে প্রবাসী আয় কিনেছে। যার কারণে বছরের শেষ সময় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। তা না হলে এবারও প্রবাসী আয় কম হতো।
ব্যাংকগুলো এখন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দামে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের ডলার কিনছে। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম হচ্ছে ১১০ টাকা। তবে কয়েকটি ব্যাংক সংকটের কারণে রেমিট্যান্সের ডলার কিনেছে ১২৩ থেকে ১২৪ টাকা দরে।
২০২৩ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স আসে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ডলার, মার্চে ২০২ কোটি, এপ্রিলে ১৬৮ কোটি, মে মাসে ১৬৯ কোটি, জুনে ২২০ কোটি, জুলাই ১৯৭ কোটি, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি এবং ডিসেম্বরে ১৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১২৯ কোটি, ২০২১ সালে ছিল ২ হাজার ২০৭ কোটি ডলার। ২০২০ সালে রেমিট্যান্স আসে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ডলার। ২০১৯ সালে আসে এক হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার। এর আগে ২০১৮ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৫৫৫ কোটি ডলার। ২০১৭ সালে এসেছিল এক হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার। এর আগের বছর ২০১৬ সালে ছিল এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলার। ২০১৫ সালে এসেছে এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলার। আর ২০১৪ সালে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার। তার আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন ছিল। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসে।
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। তারও আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার।