বিএনপিসহ সমমনাদের লিফলেট বিতরণ
জনগণ ভোট না দেওয়ার শপথ নিয়েছে
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৪৩ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার
সরকারের পদত্যাগ, ভোট বর্জন ও ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। দ্বিতীয় দফায় গণসংযোগের পঞ্চম দিন শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে এ কর্মসূচি পালন করেন দলগুলোর নেতাকর্মীরা।
এদিন সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে লাল কার্ড প্রদর্শনসহ গণমিছিল করে গণতন্ত্র মঞ্চ। পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়েছে গণঅধিকারের কফিন মিছিল। রোববার থেকে তৃতীয় দফায় আরও ২ দিনের লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করবে দলগুলো।
শনিবার গণসংযোগকালে নেতারা বলেন, ৭ জানুয়ারি কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবে না। ইতোমধ্যে অনেকেই একরতফা নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার শপথ নিয়েছেন। বিজ্ঞাপন ও মাইকে ডেকেও সতেচন নাগরিকদের ভোট কেন্দ্রে নিতে পারে না। ভোটের দিন বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে লাল কার্ড দেখাবে জনগণ।
সকালে ওলামা দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর তোপখানা রোডে লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনে গ্রাম-গঞ্জের জনগণ একাট্টা হয়ে গেছে। লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে আমরা জনগণের কাছ থেকে যে সাড়া পাচ্ছি, তাতে তারা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কারণ এটা একটি একদলীয় নির্বাচন। যারা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, তারা সবাই এক দলের সমর্থক।
উত্তরা ও তুরাগ এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভী। জনগণকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করতে হবে। এটি একতরফা, অবৈধ ও ভাওতাবাজির নির্বাচন। এ ডামি নির্বাচনের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। লিফলেট বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, অর্থনীতি বিষয়ক সহসম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতা মো. মোস্তফা জামান, প্রমুখ। এ্যালিফ্যান্ট রোডে লিফলেট বিতরণ করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম।
মুগদা এলাকায় লিফলেট বিতরণ করে মৎস্যজীবী দল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, কেন্দ্রীয় নেতা ওমর ফারুক পাটোয়ারী, মোঃ শাহ আলম, হাজী আনোয়ার হোসেন, ফজলে কাদের সোহেল প্রমুখ।
রাজধানীর পান্থপথে লিফলেট বিতরণ করেছে যুবদল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন, মোহাম্মদ ফিরোজ আবদুল্লাহ, মঈনুদ্দীন রুবেল, মাহাবুবুর রহমান পলাশ, কামরুজ্জামান নান্নু প্রমুখ। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভোট বর্জনের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করেছে ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিকে ভোট বয়কটের আহ্বান জানিয়ে শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাল কার্ড প্রদর্শন ও গণমিছিল করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এ সময় নেতারা বলেন, সরকার জোর করে সবাইকে ভোট কেন্দ্রে আনতে চায়। ৭ জানুয়ারি যা হচ্ছে তা নির্বাচন নয়। যেখানে বিরোধী দল নাই সেটা ভোট হতে পারেনা। সরকার কোন প্রার্থীকে বা কেন্দ্রে কেন্দ্রে কাকে কত ভোট দেওয়া হবে তার তলিকা তৈরি করছে। দেশের মানুষ এমুহূর্তে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে লাল কার্ড দেখাচ্ছে। এরপর বিদেশিরাও লাল কার্ড দেখাবে।
এ সময় বক্তব্য রাখেন মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, শহীদুল্লাহ কায়সার, ফরিদুল হক, আকবর খান প্রমুখ।
দুপুর ১২ টার দিকে বিজয়নগর এলাকায় কফিন নিয়ে মিছিল করে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ। এ সময় মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। নেতাদের অভিযোগ, সমাবেশ শেষে কফিন মিছিল করতে গেলে পুলিশ মারমুখী হয়। আটকের হুমকি দেয়। নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে কফিন মিছিল ভেঙে ফেলে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন।
নুরুল হক নুর বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ৬০ শতাংশ ভোট কেটে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংসের প্রতিবাদে আজকে আমাদের এই কফিন মিছিল। গণতন্ত্র এখন কফিনে, আমরা গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ করতে চাই। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারন সম্পাদক মো. রাশেদ খান, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, আব্দুজ জাহের, কেন্দ্রীয় নেতা হাসান আল মামুন, মনজুর মোর্শেদ মামুন প্রমুখ।
শনিবার সকালে প্রেসক্লাব, পল্টন, বিজয়নগর এলাকায় গণসংযোগ এবং লিফলেট বিতরণ করেছে ১২ দলীয় জোট। এ সময় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আওয়ামী লীগ এবার চূড়ান্ত নব্য-স্বৈরশাসকের রূপ ধারণ করেছে। তাদের সর্বশক্তি দিয়ে হটাতে হবে। অন্যথায় দেশ- জাতি নিরাপদ থাকতে পারবে না। গণসংযোগে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নওয়াব আলী আব্বাস খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মাওলানা ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের শামসুল আহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আব্দুল করিম প্রমুখ। পৃথকভাবে একই এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। এ সময় জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘দেশের রাজনীতির প্রতি জনগণের কোনো আগ্রহ নেই। রাজনীতিবিদদের প্রতি কোনো আস্থা নেই। রাজনীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ এতবেশি নোংরামি করেছে, যার কারণে রাজনীতিবিদদের কোনো সম্মান নেই জনগণের কাছে। পুরো রাজনীতিরাকেই আওয়ামী লীগ নষ্ট করে দিয়েছে। আরও উপস্থিত ছিলেন এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, শাহাদাত হোসেন, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাপের এম এন শাওন সাদেকী প্রমুখ। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভোট বর্জনে লিফলেট বিতরণ করেছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি, গণফোরাম (মন্টু), পিপলস পার্টি ও বাংলাদেশ লেবার পার্টিসহ অন্যান্য সমমনা দলগুলো।