স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উদ্ভাবন যাত্রার ৬৩ বছর উদযাপন করলো আইসিডিডিআর,বি
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৬:৩৫ পিএম, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ বুধবার
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যক্ষেত্রে গবেষণা ও উদ্ভাবনের অগ্রগামী যাত্রায় ৬৩ বছর পূর্ণ করলো আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র আইসিডিডিআর,বি।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) ঢাকার মহাখালী ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। কলেরার প্রকোপ রোধে ১৯৬০ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন সাউথইস্ট এশিয়া ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিয়াটো) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) সহায়তায় কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি (সিআরএল) হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির নাম হয় আইসিডিডিআর,বি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আইসিডিডিআর,বি আইন-২০২২ এর প্রথম বর্ষপূর্তিও উদযাপিত হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে আইসিডিডিআর,বি আইন-২০২২ পাস হয়। এই আইনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিডিডিআর,বি’র ভূমিকার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষকী উপলক্ষে নানা আয়োজন করেছে আইসিডিডিআর,বি। বিশেষ সেমিনারের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন শুরু হয়। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য গবেষণায় আজ পর্যন্ত আইসিডিডিআর,বি’র গুরুত্বপূর্ণ অবদান তুলে ধরেন। তিনি খাওয়ার স্যালাইন বা ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপির (ওআরএস) মতো যুগান্তকারী উদ্ভাবনে আইসিডিডিআর,বি’র ভূমিকার কথা বলেন।
ড. তাহমিদ বলেন, ‘শিশুদের ডায়রিয়াজনিত রোগের মৃত্যহার কমাতে আইসিডিডিআর,বি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং ধনুষ্টংকার টিকার গবেষণাতেও আইসিডিডিআর,বি’র উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।’ তিনি বক্তব্যে মুখে খাওয়ার কলেরা ভ্যাকসিন উন্নয়ন, অপুষ্টির চিকিৎসার জন্য গাইডলাইন এবং বৈশ্বিক পোলিও নির্মূল প্রচেষ্টায় অবদান রাখার ক্ষেত্রে আইসিসিডিআর,বি’র নেতৃত্বশীল ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন।
সেমিনারে ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য প্রবণতা এবং সক্রিয় নিয়ামকসমূহ: সাম্প্রতিক প্রমাণ থেকে অন্তর্দৃষ্টি’ শীর্ষক মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআেইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন সংঘাত দেশের দারিদ্র স্তরে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তবে এর আগে গত এক দশকে দারিদ্র হ্রাসে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।’ ড. সেন দারিদ্র্যের প্রধান চালকগুলো তুলে ধরার পাশপাশি এর থেকে উত্তরণে বেশ কিছু নীতিগত প্রস্তাব করেন। তিনি স্মার্ট সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, টেকসই প্রবৃদ্ধি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থায় বিবেচনায় স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে সেসব নীতিপ্রস্তাব বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস। তিনি বলেন, ‘আইসিডিডিআর,বি শুধু গবেষণার ক্ষেত্রেই নয়, জনগোষ্ঠীর জীবনেও অবদান রাখছে, বিশেষ করে দরিদ্রদের জন্য যাদের আর্থিক সামর্থ্য নেই স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো পাওয়ার। এটি একটি অবিশ্বাস্য অবদান। আইসিডিডিআর,বি ভবিষ্যতে আরও কি কি কাজ করবে তা দেখতেও আমি আগ্রহী। কানাডা অবশ্যই প্রথম থেকেই গর্বিত মূল দাতা হিসাবে আইসিডিডিআর,বি-র সঙ্গে থাকতে পেরে।’
বিকালে আইসিডিডিআর,বি’র কর্মীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে প্রচারিত ভিডিও বার্তায় আইসিডিডিআর,বি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ার ন্যান্সি চেং বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি চিত্তবিনোদনও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আইসিডিডিআর,বি এমন একটি জায়গা যেখানে প্রচুর সুযোগ রয়েছে।’
স্থানীয় ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরম্পরা উদযাপনের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে একটি পিঠা উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বি কর্মীদের পাশাপাশি বিশিষ্ট ব্যক্তি, উন্নয়ন সহযোগী, মিডিয়াকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।