অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

যেভাবে এলো ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস, নেপথ্যে যারা, যে লাভ হচ্ছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১২:২১ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২০ শনিবার   আপডেট: ১০:৩৯ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২০ শনিবার

'যদিও মানছি দূরত্ব, তবুও আছি সংযুক্ত' এই প্রতিপাদ্য নিয়ে দেশব্যাপী এবং বিদেশি সব বাংলাদেশি দূতাবাসে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চতুর্থ ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উদযাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টায় আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নেতৃত্বে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সংশ্লিষ্টরা।

দিনব্যাপী এর কর্মসূচি তুলে ধরে পলক জানান, সকাল ১০টায় চতুর্থ ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ উদ্বোধনী ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ডিজিটাল প্লাটফর্মে সংযুক্ত রয়েছেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটির উদ্বোধন করেছেন।

বিকাল ৩টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নেতৃত্বে জাতীয় সেমিনার হবে। রাত ৮টায় ওয়েবিনারের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোক্তা সজীব ওয়াজেদ জয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নজিরবীহিন এগিয়ে যাওয়ার গল্প দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবেন। তাতে আইসিটি সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, গবেষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।  

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আইসিটি বিভাগের অধীন বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা এবং এটুআই প্রোগ্রাম বিগত ১২ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। বিভিন্ন আইন, নীতিমালা, বিধিমালা ও স্ট্রাটেজি প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ভিজুয়াল কালার ভার্সন। আর বিশ্বসেরা এই ভাষণের ২৬টি নির্বাচিত বাক্য দেশের ২৬ জন খ্যাতিমান লেখক দিয়ে বিশ্লেষণ করিয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ডিজিটাল ভার্সনে ( মোবাইল অ্যাপ ও ই-বুক) রূপান্তর।

জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের হলোগ্রাফিক প্রোজেকশন রূপান্তর, তার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে 'মুজিব হান্ড্রেড' ওয়েবসাইট এবং 'মুজিববর্ষ লোগো তৈরি করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ১২ মে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যালোইট-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের এলিট ক্লাবের সদস্য  হয়। যা বিশাল এক অর্জন।

ডিজিটাল প্লাটফর্মে দিনরাত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। ব্যাপকহারে দেশের তরুণ সমাজের বেকারত্ব ঘুচেছে। প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার আয় হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। শিক্ষাখাতের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন অনলাইনে ক্লাস করছে। নির্যাতিত নারী ও বঞ্চিত শিশুরা সেবা পাচ্ছে। এখন প্রায় ৭০% কাজ ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পড়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ শুধু আওয়ামী লীগের নয়, ১৭ কোটি মানুষের। ঘরে ঘরে প্রতিটি মানুষ ভোগ করছে এর সুবিধা। ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে দেশের জনগণ করোনা মহামারিতেও সংযুক্ত থাকছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আদালত, সরবরাহ ব্যবস্থা এমনকি বিচারিক কাজ সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির গোড়াপত্তন হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দিনটিতে আমরা জাতির জনককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। কারণ, তার হাতেই স্বাধীন বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের ভিত্তি রচিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এই ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে গ্রেফতার হওয়ার আগে স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সেটি ওয়ারলেস প্রযুক্তির মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরে দেশ গঠনে বিজ্ঞান ও শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সেজন্য ড. কুদরাত-ই খুদার মতো বিজ্ঞানীকে শিক্ষানীতি প্রণয়ণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। 

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালে ৫ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের সদস্যপদ গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে প্রথম বাংলা ভাষায় দেয়া ভাষণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফলটা যেন বিশ্ববাসী সমভাবে পান, সেই আহ্বান জানান। পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো স্যাটেলাইটে যুক্ত করে বেতবুনিয়াতে প্রথম ভূ-উপগ্রহ উপকেন্দ্র স্থাপন করেন। তিনি চেয়েছিলেন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সোনার বাংলাদেশ গড়তে।

পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেই হিসেবে এটি বাস্তবায়নের একযুগ পূর্তি শনিবার। এই কর্মসূচি রূপকল্প ২০২১ এর মূল উপজীব্য। যার বাস্তবায়নের মূল লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ। এ কারণেই আমরা ১২ ডিসেম্বরকে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস হিসেবে উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। 

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও আধুনিক চিন্তা এবং তার সুযোগ্য ছেলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়ের অভিজ্ঞতালব্দ জ্ঞান থেকে উদ্ভূত ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ১২ বছর পূর্ণ হচ্ছে এদিন। তারা শুধু স্বপ্নই দেখাননি, তা বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। ভবিষ্যতে তরুণ প্রজন্ম যেন আরও বড় স্বপ্ন দেখার সাহস পায়, সেজন্যই দিবসটি সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে।